এখনও ঠিকানাহীন এখানকার বাসিন্দারা কলকাতা, 18 ডিসেম্বর: বর্তমান সময়ে ফোনের পর্দায় এক ক্লিকেই করা যায় অনলাইন অর্ডার ৷ তা খাবার হোক বা অন্য কোনও জিনিস । আর অর্ডার দেওয়া জিনিসগুলি একদম হাজির হয়ে যায় বাড়ির দোরগোড়ায় ৷ ঘরে বসেই সেগুলি পেয়ে যান সকলে ৷
তবে এ যুগেও কলকাতাতেই রয়েছে এমন একটি এলাকা, যেখানে চিঠি পর্যন্ত ঠিকঠাক এসে পৌঁছয় না ঠিকানার অভাবে ৷ ভাবছেন কোথায় ? জায়গাটি হল কলকাতা পৌরনিগম (Kolkata Municipal Corporation) এলাকার 107 নম্বর ওয়ার্ডের নস্করহাট (Naskarhat Locality) । চিঠি থেকে জিনিস পৌঁছনোর জন্য সবচেয়ে জরুরি হল ঠিকানা ৷ কিন্তু সেই ঠিকানাই তো নেই এখানকার কয়েক হাজার বাসিন্দার ।
আর এই ঠিকানাহীন হওয়াতে দিনের পর দিন নানা সমস্যায় জেরবার হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন তারা । কারও সম্বল এলাকার নাম, কারও আবার বাড়ির সামনের ল্যাম্প পোস্ট নম্বর । দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও নিজের বাড়ির ঠিকানা না-পেয়ে শেষে এগুলোকেই ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করছেন নস্করহাটের বাসিন্দারা ।
সম্প্রতি, নস্করহাটের বাসিন্দাদের সমস্যার কথা কলকাতা পৌরনিগমের অধিবেশনে তুলে ধরেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিপিকা মান্না। মেয়রের কাছে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের দাবি করেন তিনি । মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Mayor Firhad Hakim) অবশ্য বছর খানেক সময় চেয়েছেন । তাঁর কথায়, কেএমডিএ, কলকাতা পৌরনিগম এবং ভারতীয় ডাকঘরের আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি হবে কমিটি। সেই কমিটি আগামী এক বছরের মধ্যে বাইপাস সংলগ্ন এই ধরনের ঠিকানাহীন বাসিন্দাদের নিজের বাড়ির ঠিকানা দেবে ।
ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের (ইএম বাইপাস) ধারে বিস্তীর্ণ এলাকা রয়েছে, যা আদতে কেএমডিএ'র জমি । সেখানেই ধীরে ধীরে মানুষজন থাকতে শুরু করেন । এর মধ্যে কিছু মানুষ ঠিকানা পেয়েছেন । আবার অনেকেই ঠিকানা পাননি । নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির নামে চিঠি এলে বা জিনিস এলে খোঁজ পাওয়া মুশকিল । ডেলিভারি বয়'কে কালঘাম ঝড়িয়ে হাজার মানুষকে জিজ্ঞাসার পর পৌঁছতে হয় গন্তব্যে । আবার অনেকে বহু খোঁজার পর ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান । বেশ কিছু জায়গায় ব্লক হিসেবে ভাগ হলেও এই নস্করহাটে কোনও ব্লক নেই । বাড়ির ঠিকানা বোঝাতে গেলে আশপাশের বিভিন্ন পরিচিত শপিং মল বা স্কুলের নাম বলতে হয় ৷ এরপর সেখান থেকে বলতে হয় কোন দিক । তারপর বলতে হয় কতটা পথ এগিয়ে বা পিছিয়ে আসতে হবে ।
আরও পড়ুন:জানুয়ারিতে শুরু শিশুদের টিকাকরণ, প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব ভাবাচ্ছে কলকাতা পৌরনিগমকে
এভাবেই গোটা এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাড়ির অবস্থান বোঝান আত্মীয় থেকে পোস্টম্যান বা ডেলিভারি বয়'কে । দক্ষিণ নস্করহাট, উত্তর বা পশ্চিম নস্করহাটের বাসিন্দাদেরও একই অবস্থা । কাউন্সিলর (Councillor) লিপিকা মান্না বলেন, "পৌর পরিষেবা দিতে গিয়েও নাজেহাল হতে হয় । করোনার সময় পরিষেবা এবং পরবর্তীতে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মশা মারতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হয় কর্মীদের । কারও বাড়ির সামনে থেকে আবর্জনা সরাতে হলেও সঠিক ঠিকানার জন্য পুরো কর্মীদের নাজেহাল হতে হয় । তবে মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন বছরখানেকের মধ্যে মিটবে সমস্যা । এটা গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত মেটাতেই হবে ।"