কলকাতা, 30 জুন : কোরোনা সংক্রমণ রুখতে বাস পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে ৷ যে পরিমাণ খরচ হয়, তাতে বাস চালানো কি সম্ভব ? যদি সরকার বাস অধিগ্রহণের কথা বলে, তাহলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ৷ সরকারের বাস নিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পালটা একথা জানালেন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
রাস্তায় বেসরকারি বাস চালানো নিয়ে আজ সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "বেসরকারি বাসগুলিকে আগামীকাল পর্যন্ত সময় দেওয়া হল ৷ তারপর সরকার প্রয়োজন হলে বাস নিয়ে নেবে ৷ সরকারই বাসচালক নেবে ৷ সরকার মানুষের জন্য বাস চালাবে ৷" তার পরিপ্রেক্ষিতে তপনবাবু বলেন, "এই নিয়ম থাকলে সরকার করবে । কোরোনার জন্য আমাদের বাস বন্ধ রাখতে হয় । যে পরিমাণ খরচ তাতে কি আমাদের পক্ষে চালানো সম্ভব ? সরকার যদি গাড়ি অধিগ্রহণ করার কথা বলে তাহলে তা দুর্ভাগ্যজনক । কোনওমতেই ঘরের পয়সা দিয়ে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব না । যদি সম্পত্তি অধিগ্রহণ করার অধিকার সরকারের থাকে তাহলে সরকার তা করবে । সাধারণ মানুষ জানুন কেন আমরা গাড়ি চালাতে পারছি না । আমাদের সম্পত্তির দায়ভার আমাদেরই আছে । সারা পশ্চিমবঙ্গে একই নিয়ম হওয়া উচিত । সরকারের ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজ সব বাসের জন্য ছিল না ৷ সরকার সব বাস অধিগ্রহণ না করলে আমরা বাস দেব না ৷"
সিটি সুবার্বান বাস সার্ভিস সভাপতি টিটু সাহা বলেন, "সরকার যদি বেসরকারি বাসগুলি অধিগ্রহণ করতে চায় তাহলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই । আমরা বাস দিতে প্রস্তুত আছি । কিন্তু কীভাবে বাসগুলিকে অধিগ্রহণ করা হবে সেই বিষয়টি আমাদের আগে পরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন ৷" একই কথা বললেন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ-সভাপতি সুরজিৎ সাহা ৷ "তবে কীভাবে অধিগ্রহণ করা হবে, মালিকদের কত টাকা দেওয়া হবে, কর্মী ও চালকদের বেতন-সহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় আলোচনা করতে হবে । আমাদের হাতে 24 ঘণ্টা সময় আছে ঠিকই, তবে আমরা সংগঠনের তরফে বাস মালিকদের গাড়ি বন্ধ করতেও বলতে পারি না । ঠিক তেমনভাবে তাঁদের গাড়ি চালাতেও অনুরোধ করতে পারি না । যাঁরা পারবেন তাঁরা বাস নামাবেন আর যাঁরা পারবেন না তাঁরা নামবেন না ।"
অন্যদিকে, সরকারের তরফে বাস অধিগ্রহণের বিষয়ে নির্দেশিকা আসার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "বাসগুলিকে কীভাবে অধিগ্রহণ করা হবে সেই নির্দেশিকা আসার অপেক্ষা করছি । নির্দেশিকা এলে বুঝতে পারব এই প্রক্রিয়াটি ঠিক কীভাবে হবে । লকডাউনের মধ্যেও বেসরকারি বাস পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আসার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের জন্য পরিষেবা দিয়ে চলেছে । লকডাউনের পর আমাদের সংগঠনের তরফে যখন বাস পথে নেমেছে তখন একদিনও বাস বন্ধ থাকেনি । মালিকরা কষ্ট করে হলেও পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে চলেছে । যেভাবে তেলের দাম বেড়েছে তার মধ্যেও আমাদের মালিকরা যথাসম্ভব পরিষেবা চালু রাখার চেষ্টা করছেন । যাঁরা পারছেন না তাঁরা বাস বসিয়ে দিয়েছেন । তাই এই অবস্থায় প্রশাসন যদি পরিষেবা সচল রাখতে বাস অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আমাদের কোন অসুবিধা নেই ।"
আজ সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেলের দাম কমলে বাসভাড়া কমানোর বিষয়েও বক্তব্য পেশ করেন ৷ এই বিষয়ে তপনবাবু বলেন, "তেলের দাম কমলে বাস ভাড়া কমে না কেন? কারণ, শুধু তেলের দামের উপর বাসভাড়া নির্ভর করে না । আরও অনেক খরচ রয়েছে । আমরা চাই যে নিয়মই চালু হোক তা সারা রাজ্যের জন্য হোক ।"
এর আগে বেসরকারি বাসগুলিকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "পয়লা জুলাই থেকেই 6 হাজার বাসই রাস্তায় নামছে । প্রতিদিনই জ্বালানির দাম বাড়ছে । তবে আমরা বাস ভাড়া বাড়াব না । পয়লা জুলাই থেকে রাস্তায় আরও 500 বাস নামবে । বেসরকারি বাস মালিকদের কাছে আবেদন করছি, আপনারা রাস্তায় বাস নামান । প্রতিটি বেসরকারি বাস-মিনিবাসকে আর্থিক সাহায্য করবে রাজ্য সরকার। আগামী তিন মাস প্রতিটি বেসরকারি বাসকে 15 হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে । পয়লা জুলাই থেকে এই আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে । পাশাপাশি বাস চালক ও কনডাক্টরদের স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আনা হবে ।"
তারপর এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করে বেসরকারি বাস সংগঠনগুলি ৷ তারপরই সংগঠনগুলির তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয ৷ জানিয়ে দেওয়া হয়, এই আর্থিক প্যাকেজ আসলে কোনও সুরাহা নয় ৷ তপনবাবু বলেন, ""আর্থিক প্যাকেজ কোনও সুরাহা নয় । শুধুমাত্র শহরে নয় জেলাতেও এই মুহূর্তে খরচের জেরে বেসরকারি বাস পরিষেবা দেওয়া শুরু করেছিল সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে । তাই শহর ও জেলা মিলিয়ে সবকটি বেসরকারি বাস ও মিনিবাসকে এই আর্থিক প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে এবং ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া আর কোনও বিকল্প রাস্তা হতে পারে না ।"