কলকাতা, 27 অক্টোবর: বৃহস্পতিবার রাতেই ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে সরকারের 11 বছরে এই নিয়ে তৃণমূলের মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে শুরু করে সাংসদ-বিধায়কের গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়ে হল 13 ৷ এদিন রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ইডির হাতে গ্রেফতার হন জ্যোতিপ্রিয় ৷ রাতেই সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে জানালেন, গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তিনি ৷ এরপর শুক্রবার জোকার ইএসআই হাসপাতালে বনমন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য ৷ সেখানেও বিজেপিকেই অভিযুক্ত করেন মন্ত্রী ৷ পাশাপাশি তাঁর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে চক্রান্ত করার অভিযোগ তোলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও ৷
আনলাকি 13 ! শাসক শিবিরের এই নেতাদের গ্রেফতারি আম আদমির জীবনে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলল তার সুনির্দিষ্ট খতিয়ান না থাকলেও তৃণমূলের অস্বস্তি যে বাড়ছে তাতে সংশয় নেই রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের ৷ 11 বছরে 13 রথী-মহারথীর দুর্নীতি যোগে গ্রেফতার তৃণমূলের কাছে 'আনলাকি'-ই বটে! 2011 সালে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে রাজভবন থেকে হেঁটে মহাকরণে গিয়ে কার্যত 'আমি তোমাদেরই লোক' বার্তা দিতে চেয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয় ৷ আর তার ঠিক 11 বছরের মাথায় এসে দাঁড়িয়ে একাধিক দুর্নীতির দায়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁর দলেরই সাংসদ-বিধায়ক গ্রেফতার হয়েছেন ।
সাম্প্রতিক অতীতে সারদা থেকে একাধিক দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে ৷ সেই তালিকার নিয়োগ দুর্নীতির পর সর্বশেষ সংযোজন রেশন দুর্নীতি । রাজ্য়ে ক্ষমতা দখলের বছর তিনেক পরই তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ কথায় বলে সাড়ে সাতি, আর বাংলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে দুর্নীতির তদন্তে নেমে কার্যত শনিকেও হার মানিয়ে ছাড়লেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থারা ৷ সময় যত গড়াচ্ছে সিবিআই বা ইডির মতো সংস্থার বলয় ক্রমশই শাসকদলের গলায় ফাঁসের মতো আটকে বসেছে ৷ দুর্নীতির দায় নিয়ে জেলে যেতে হয়েছে মদন মিত্র, কুণাল ঘোষ, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস পাল, কেডি সিং, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য এবং জীবন কৃষ্ণ সাহা ৷
কুণাল ঘোষ, মদন মিত্র ও সৃঞ্জয় বসু : সারদাকাণ্ডের তদন্তে প্রথমে সিট গঠন করে রাজ্য সরকার। সেই সিট সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের পর কুণাল ঘোষকেও গ্রেফতার করে। কুণাল তখন রাজ্যসভার সাংসদ। পরে এই ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়ে কুণালকে গ্রেফতার করে সিবিআই । এরপর 2014-র ডিসেম্বরে সারদা কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন তৎকালীন রাজ্যের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মন্ত্রী মদন মিত্র ৷ আরও পরে গ্রেফতার হন রাজ্যসভার তৎকালীন সাংসদ সৃঞ্জয় বসু। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর তিনজনই ছাড়া পেয়েছেন। মদন আবার বিধায়ক হয়েছেন। কুণাল এখন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আগেই সাংসদ পদ ছেড়ে দেন সৃঞ্জয়। সক্রিয় নন রাজনীতিতেও।