কলকাতা, 15 অগস্ট : জীবনচক্রে সময়ের বাণ এবং যন্ত্রণায় সমাজের পটচিত্রে আছাড়ি পিছাড়ি চলে মন । "স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা অবিনাশী গান"-কবি শামসুর রহমানের কবিতার থেকে ধার করে বলতে হয়, সোনালি অতীতে দাড়িয়ে থাকে সুদৃঢ় ভবিষ্যৎ । তাই অতীতকে সসম্মানে বাঁচিয়ে রাখা কর্তব্য উত্তর প্রজন্মের । তাই বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের বিস্মৃতির অতলে চলে গেলেও তাঁর স্মৃতিগুলি আঁকড়ে রেখে দিয়েছেন পরবর্তী প্রজন্ম ৷ তাঁর নাতি বিশ্বরঞ্জন দাস এবং মনীশরঞ্জন দাস ৷
আত্মবিস্মৃত জাতি বাঙালি । তাই সে দ্রুত ভুলে যায় পূর্বজের রক্ত সংগ্রামের কথা । ত্যাগ, তিতিক্ষা, অস্মিতায় গড়া বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ । কিন্তু সেখানে কয়েকটি মুখ ছাড়া অধিকাংশই বিস্মৃতির অতলে । সিপাহী বিদ্রোহ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে প্রথম নিরন্তর ধাক্কা । পরিকাঠামোহীন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ রাজের ইমারতে ধাক্কা দেওয়ার ভিত্তি ছিল আবেগ, জেদ এবং অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার শপথ । সেই কাজে যে সমস্ত মানুষ নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন পুলিনবিহারী দাস ।
বাঘাযতীন যতীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, মতিলাল রায়, ইন্দুভূষণ রায়, পুলিনবিহারী দাসের হাত ধরে যে সশস্ত্র আন্দোলন ব্রিটিশ রাজত্বকে কার্যত টলিয়ে দিয়েছিল, সেই ভিতেই স্বাধীনতার ইমারত গড়েছিলেন পরবর্তী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা । দেশকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টার প্রক্রিয়ায় বদল ছিল । কিন্তু সশস্ত্র এবং অসহযোগ আন্দোলনের অন্তর্বর্তী সুরটা ছিল এক । আগেই বলা হয়েছে, বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি । তাই স্বাধীনতা লাভের সময় যে উজ্জ্বল মুখগুলোকে আমরা দেখেছি তাদেরই মনে রেখেছি । কারন নতুন ভারত গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা কি হবে সেটাই ছিল তখনকার লক্ষ্য । ফলে সশস্ত্র আন্দোলনের রূপকাররা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছিলেন । কালের নিয়মে ধূসরও হয়ে গিয়েছেন ।
সময়টা 1903 সালের । কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটে অনুশীলন সমিতি আয়োজন করেছিল দূর্গাপূজার । মনে রাখতে হবে সেইসময় কলকাতায় বারোয়ারি দূর্গাপূজা শুরু হতে আরও চোদ্দ বছর দেরি । সশস্ত্র আন্দোলনের লক্ষ্যে অবিচল কিছু দামাল তরুণের দূর্গা আবাহন । ফলে যে ধরনের দূর্গা মূর্তি দেখতে আমরা অভ্যস্ত তা সেদিনের অনুশীলন সমিতির পূজোয় দেখা যায়নি । পুলিনবিহারী দাসের গবেষক অনিমিত্র চক্রবর্তী বলছেন, "কোনও মাটির মূর্তি সেদিন ছিল না । অস্ত্র দিয়ে দেবী মূর্তি তৈরি হয়েছিল । দেবীর চোখ আঁকা হয়েছিল ড্যাগার বা বড় ছোরা দিয়ে । অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন ৷ প্রমথনাথ মিত্র ছিলেন । কিন্তু এই সমগ্র ভাবনা যাঁর মাথা থেকে বেরিয়েছিল তিনি হলেন পুলিনবিহারী দাস । যুগান্তর এবং অনুশীলন সমিতির মতভেদ, গান্ধীজীর সঙ্গে সশস্ত্র এবং অসহযোগ আন্দোলনের পথধারা নিয়ে মতভেদ, হত্যার অধিকারের দাবিতে অবিচল থাকা এবং অনুশীলন সমিতির মতের প্রতি আমৃত্যু আজ্ঞাবহ থাকার উদাহরণ ছিলেন পুলিনবিহারী । শুধু তাই নয়, প্রমথনাথ মিত্র যখন ওপার বাংলায় অনুশীলন সমিতি-র শাখা ছড়ানোর ভাবনা চিন্তা করছিলেন তখন তা বাস্তবায়ন করেছিলেন পুলিনবিহারী দাস । নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা ছিল এই মানুষটির মধ্যে ।"
আরও পড়ুন : Netaji Subhas Chandra Bose : নজরবন্দি হয়েও অপ্রতিরোধ্য নেতাজি, গোপন চিঠি পাঠাতেন পাউরুটির স্লাইসে