পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Pulin Behari Das : বিস্মৃতির অতলে বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাস ও তাঁর ব্যবহৃত তলোয়ার

পরিকাঠামোহীন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ রাজের ইমারতে ধাক্কা দেওয়ার ভিত্তি ছিল আবেগ, জেদ এবং অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার শপথ । সেই কাজে যে সমস্ত মানুষ নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন পুলিনবিহারী দাস ।

By

Published : Aug 15, 2021, 2:56 PM IST

Updated : Aug 17, 2021, 12:12 PM IST

sword used by freedom fighter Pulin Bihari Das have carefully kept by his grandsons
sword used by freedom fighter Pulin Bihari Das have carefully kept by his grandsons

কলকাতা, 15 অগস্ট : জীবনচক্রে সময়ের বাণ এবং যন্ত্রণায় সমাজের পটচিত্রে আছাড়ি পিছাড়ি চলে মন । "স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা অবিনাশী গান"-কবি শামসুর রহমানের কবিতার থেকে ধার করে বলতে হয়, সোনালি অতীতে দাড়িয়ে থাকে সুদৃঢ় ভবিষ্যৎ । তাই অতীতকে সসম্মানে বাঁচিয়ে রাখা কর্তব্য উত্তর প্রজন্মের । তাই বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের বিস্মৃতির অতলে চলে গেলেও তাঁর স্মৃতিগুলি আঁকড়ে রেখে দিয়েছেন পরবর্তী প্রজন্ম ৷ তাঁর নাতি বিশ্বরঞ্জন দাস এবং মনীশরঞ্জন দাস ৷

আত্মবিস্মৃত জাতি বাঙালি । তাই সে দ্রুত ভুলে যায় পূর্বজের রক্ত সংগ্রামের কথা । ত্যাগ, তিতিক্ষা, অস্মিতায় গড়া বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ । কিন্তু সেখানে কয়েকটি মুখ ছাড়া অধিকাংশই বিস্মৃতির অতলে । সিপাহী বিদ্রোহ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে প্রথম নিরন্তর ধাক্কা । পরিকাঠামোহীন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ রাজের ইমারতে ধাক্কা দেওয়ার ভিত্তি ছিল আবেগ, জেদ এবং অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার শপথ । সেই কাজে যে সমস্ত মানুষ নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন পুলিনবিহারী দাস ।

বাঘাযতীন যতীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, মতিলাল রায়, ইন্দুভূষণ রায়, পুলিনবিহারী দাসের হাত ধরে যে সশস্ত্র আন্দোলন ব্রিটিশ রাজত্বকে কার্যত টলিয়ে দিয়েছিল, সেই ভিতেই স্বাধীনতার ইমারত গড়েছিলেন পরবর্তী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা । দেশকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টার প্রক্রিয়ায় বদল ছিল । কিন্তু সশস্ত্র এবং অসহযোগ আন্দোলনের অন্তর্বর্তী সুরটা ছিল এক । আগেই বলা হয়েছে, বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি । তাই স্বাধীনতা লাভের সময় যে উজ্জ্বল মুখগুলোকে আমরা দেখেছি তাদেরই মনে রেখেছি । কারন নতুন ভারত গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা কি হবে সেটাই ছিল তখনকার লক্ষ্য । ফলে সশস্ত্র আন্দোলনের রূপকাররা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছিলেন । কালের নিয়মে ধূসরও হয়ে গিয়েছেন ।

সময়টা 1903 সালের । কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটে অনুশীলন সমিতি আয়োজন করেছিল দূর্গাপূজার । মনে রাখতে হবে সেইসময় কলকাতায় বারোয়ারি দূর্গাপূজা শুরু হতে আরও চোদ্দ বছর দেরি । সশস্ত্র আন্দোলনের লক্ষ্যে অবিচল কিছু দামাল তরুণের দূর্গা আবাহন । ফলে যে ধরনের দূর্গা মূর্তি দেখতে আমরা অভ্যস্ত তা সেদিনের অনুশীলন সমিতির পূজোয় দেখা যায়নি । পুলিনবিহারী দাসের গবেষক অনিমিত্র চক্রবর্তী বলছেন, "কোনও মাটির মূর্তি সেদিন ছিল না । অস্ত্র দিয়ে দেবী মূর্তি তৈরি হয়েছিল । দেবীর চোখ আঁকা হয়েছিল ড্যাগার বা বড় ছোরা দিয়ে । অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন ৷ প্রমথনাথ মিত্র ছিলেন । কিন্তু এই সমগ্র ভাবনা যাঁর মাথা থেকে বেরিয়েছিল তিনি হলেন পুলিনবিহারী দাস । যুগান্তর এবং অনুশীলন সমিতির মতভেদ, গান্ধীজীর সঙ্গে সশস্ত্র এবং অসহযোগ আন্দোলনের পথধারা নিয়ে মতভেদ, হত্যার অধিকারের দাবিতে অবিচল থাকা এবং অনুশীলন সমিতির মতের প্রতি আমৃত্যু আজ্ঞাবহ থাকার উদাহরণ ছিলেন পুলিনবিহারী । শুধু তাই নয়, প্রমথনাথ মিত্র যখন ওপার বাংলায় অনুশীলন সমিতি-র শাখা ছড়ানোর ভাবনা চিন্তা করছিলেন তখন তা বাস্তবায়ন করেছিলেন পুলিনবিহারী দাস । নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা ছিল এই মানুষটির মধ্যে ।"

বিস্মৃতির অতলে বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাস

আরও পড়ুন : Netaji Subhas Chandra Bose : নজরবন্দি হয়েও অপ্রতিরোধ্য নেতাজি, গোপন চিঠি পাঠাতেন পাউরুটির স্লাইসে

তাঁর আক্ষেপ, "ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সেভাবে লেখা হয়নি । ফলে হারিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক ভবিতব্য । বিপ্লবীদের দলিল, ব্যবহার্য সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বা অন্তরালে । আমরা হয়তো তাদের অর্থাৎ বিপ্লবীদের নামে কোনও রাস্তার নাম, মূর্তি গড়ে কাজ সেরেছি । কিন্তু প্রকৃত মুল্যায়ন হয়নি ।"

তার পূর্বপুরুষের প্রতি অবহেলা সম্পর্কে অবহিত এবং ক্ষুব্ধ, বিরক্ত পুলিনবিহারী দাসের নাতি বিশ্বরঞ্জন দাস এবং মনীশরঞ্জন দাস । সশস্ত্র আন্দোলনে দাদুর ব্যবহার্য জিনিস, লাঠি, অস্ত্র এবং আন্দামানে জেলে থাকাকালীন হাতকড়া, শেকল এবং তলোয়ার তাদের কাছে থাকলেও তার সিংহভাগ জিনিস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিয়েছেন । বাকিটা পুলিশ মিউজিয়ামে দেওয়া হয়েছে । বিশ্বরঞ্জন দাস বলছেন,"আমরা পুলিনবিহারীর আদর্শ বহন করে চলেছি । তাঁর মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছি । দাদুর সব জিনিস দিয়ে দিয়েছি । কারণ সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের উপায় আমাদের কাছে ছিল না । শুধু দুটো তলোয়ার আমাদের কাছে রয়েছে । আমার বাবার পরে আমাদের কাছে তা রয়েছে । তার একটি আবার গড়িয়ার আশ্রমে দেওয়া হয়েছে । ফলে আমাদের কাছে দাদু পুলিনবিহারী দাসের একটি তলোয়ার রয়েছে । একশো বছরের বেশি পুরানো হলেও এই তলোয়ার টিকে নিকেলের পরত দেওয়া হয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থেই । তবে এই তলোয়ারের প্রতিটি ইঞ্চি আমাদের কাছে আদর্শের বাহক ।"

আরও পড়ুন : Independence Day : মাস্টারদা'র সহযোগী অনুরূপ চন্দ্র সেনকে ভুলতে বসেছে বুড়ুল গ্রাম

পুলিনবিহারী দাসের জন্মশতবার্ষিকীতে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উদ্যোগ নিয়েছিলেন । নিমতলা শ্মশানে স্থাপিত হয়েছিল স্মৃতি সৌধ । যা এখন আর শ্রদ্ধা ভরে রক্ষিত নেই বলে আক্ষেপ পুলিনবিহারীর উত্তর প্রজন্মের । নাতি মনীশরঞ্জন দাস বলেছেন, "দাদু পুলিনবিহারী দাস শুধু বিপ্লবী ছিলেন না । স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান অনস্বীকার্য । পাশাপাশি তিনি অস্ত্রের বিষয়ে ছিলেন পারদর্শী । বাগবাজারে প্রথম বারোয়ারি পুজো । সেই পূজোর প্রথম সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু বীরাষ্টমীতে পুলিনবিহারী দাসকে বরণ করেছিলেন । এই তলোয়ার সুভাষচন্দ্র বসুর স্পর্শ ধন্য । তাছাড়া অনুশীলন সমিতিতে এই তলোয়ার দিয়ে বিপ্লবীদের রক্ত তিলক পরানো হত । আমাদের কাছে এই তলোয়ার শুধু পূর্বপুরুষের ব্যবহার্য জিনিস নয় আদর্শ ধরে রাখার অঙ্গীকার ৷"

আজও বীরাষ্টমীতে লাঠি খেলা এবং তলোয়ার খেলা দেখান পুলিনবিহারী দাসের উত্তর প্রজন্মরা । এর মাধ্যমে অনুশীলন সমিতির ত্যাগের অঙ্গীকার বয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন পুলিনবিহারীর উত্তরপুরুষেরা ।

Last Updated : Aug 17, 2021, 12:12 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details