কলকাতা, 2 জানুয়ারি: আইএএস নন্দিনী চক্রবর্তীর নয়া দায়িত্ব নিয়ে তীব্র আপত্তি জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তাঁর কথায়, রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত ডিজি হিসেবে বেআইনিভাবে নিযুক্ত রাজীব কুমার যাতে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারেন, সে জন্যই অনেক সিনিয়র আইএএস থাকতেও তাঁদের তুলনায় কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইএএস নন্দিনী চক্রবর্তীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে নবান্ন ৷ এ বিষয়ে তিনি আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন ৷ পাশাপাশি তৃণমূল সরকারের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য আইএএস কর্তৃপক্ষের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন শুভেন্দু ৷
আজ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই নিয়ে সরব হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ তিনি লিখেছেন, "পশ্চিমবঙ্গে বেআইনিভাবে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ডিজিপি রাজীব কুমার যাতে ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই রাজ্য সরকার এ বার বেআইনিভাবে একজন জুনিয়র আইএএস অফিসার নন্দিনী চক্রবর্তীকে স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির পদে বসিয়েছে ৷ 13 জন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং আরও 5 জন প্রধান সচিবকে বাদ দিয়ে তাঁদের থেকে জুনিয়র নন্দিনী চক্রবর্তীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷"
আইএএস-এর নিয়মাবলীর ধারা তুলে ধরে শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন যে, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিগুলিতে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, স্বরাষ্ট্রসচিব, অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক বিভাগের প্রধানকে লেভেল 17-এর একজন অফিসার হতে হবে, অর্থাৎ একজন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব হতে হবে ৷ যার ফলে এটা স্পষ্ট যে, নন্দিনী চক্রবর্তীর নিয়োগ সম্পূর্ণ বেআইনি ৷
রাজীব কুমারের নিয়োগ নিয়েও সরব হয়ে বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেন, একইভাবে মমতার সরকার প্রচুর পরিমাণে অবৈধ পোস্টিং করছে ৷ রাজীব কুমারকে আইটি দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদে নিয়োগের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বলেন, এই পদে একজন আইএএস অফিসারের থাকা উচিত । তাঁর কটাক্ষ, "কল্পনা করুন, একজন আইএএস অফিসারকে ডিজিপি বা কলকাতা পুলিশের সিপি করা হল !!!"
এ বিষয়ে তিনি যথাযথ জায়গায় সরব হবেন বলে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি শুভেন্দু বলেছেন, "এর বিরুদ্ধে আমি যথাযথ ফোরামে চলে যাব, আইনি বা অন্য কোথাও ৷ তবে আমি এই দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল সরকার পরিচালিত অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য আইএএস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে অনুরোধ করছি, নইলে আইএএস কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ দখল হয়ে যাবে এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনে শ্রেণিবিন্যাস (হায়ারারকি) ভেঙে যাবে ।"
প্রসঙ্গত, বরাবরই মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন আধিকারিক নন্দিনী চক্রবর্তী। পর্যটন দফতর ছাড়াও তিনি সামলেছেন রাজভবনের প্রধান সচিবের দায়িত্ব । নন্দিনী চক্রবর্তীকে বিভিন্ন সময়ে নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে । 1994 সালের এই আইএএস, একসময় মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় পাত্রী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের সচিবের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি । একইসঙ্গে শিল্পোন্নয়ন দফতরের ডিরেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে । পরবর্তীতে তাঁকে আবার সুন্দরবন উন্নয়নের মতো দফতরেও সরিয়ে দেওয়া হয় । নবান্নের অন্দরে তাঁকে তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যায় । পরবর্তীতে রাজভবনের সচিব থাকাকালীন আবার মুখ্যমন্ত্রীর নজরে পড়েন তিনি । বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেওয়ার পর তাঁকে পর্যটন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল । সেখান থেকেই এ বার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা থাকা স্বরাষ্ট্র এবং পার্বত্য বিষয়ক দফতরের প্রধান সচিব হয়েছেন নন্দিনী চক্রবর্তী ।
আরও পড়ুন:
- রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকা, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী
- রাজভবন থেকে অপসারণের পর ফের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রচারের আলোয় নন্দিনী চক্রবর্তী
- নন্দিনীতেই আস্থা রাজ্যের, পর্যটনের প্রসারে যাচ্ছেন জার্মানি