কলকাতা, 23 নভেম্বর:রাজ্যপালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান (WB Governor Oath Taking Ceremony) ঘিরেও চড়ল রাজনীতির পারদ ৷ আমন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও এই অনুষ্ঠানে তাঁর পক্ষে যোগ দেওয়া সম্ভব হল না বলে দাবি করেছেন রাজ্য়ের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ৷ বুধবারের এই অনুষ্ঠানে কেন হাজির থাকতে পারলেন না তিনি ? ইতিমধ্যেই একাধিক টুইট করে এই বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন শুভেন্দু ৷ ঠিক কী বলেছেন তিনি ? টুইটে শুভেন্দু লিখেছেন, "আমার পক্ষে এদিনের অনুষ্ঠানে যোগদান করা সম্ভব হল না ৷ কারণ, আমার পক্ষে এমন আপত্তিকর ব্যক্তিদের পাশে আসন গ্রহণ করা সম্ভব নয় ৷ সম্মানীয় রাজ্যপালের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, তাঁর সুবিধা মতো তিনি যেন আমাকে পৃথক বৈঠকের সময় দেন ৷ এমনকী, তিনি যদি আমাকে আজও আলাদা দেখা করার জন্য সময় দেন, তাহলেও আমার কোনও সমস্যা নেই ৷"
টুইটের পাশাপাশি এই ইস্যু নিয়ে বিধানসভায় আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকেও মুখ খুলেছেন শুভেন্দু ৷ তাঁর বক্তব্যে তাৎপর্যপূর্ণভাবে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন দুই বিরোধী দলনেতা জ্যোতি বসু (Jyoti Basu) এবং সিদ্ধার্থশংকর রায়ের (Siddhartha Shankar Ray) প্রসঙ্গ ৷ শুভেন্দুর বক্তব্য হল, রাজ্যপালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তাঁর বসার যে বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, তা বিরোধী দলনেতার পদের প্রাপ্য মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে ৷ আর এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই (Mamata Banerjee) দায়ী করেছেন তিনি ৷ একইসঙ্গে, এই প্রসঙ্গে উপস্থিত সকলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, জ্য়োতি বসু, সিদ্ধার্থশংকর রায়ের মতো মানুষও কোনও দিন বিরোধী দলনেতার পদের সঙ্গে আপস করেননি ৷
আরও পড়ুন:বঙ্গে শুরু 'আনন্দ' পর্ব, শপথ নয়া রাজ্যপালের
শুভেন্দুর কথায়, "সাংবিধানিক প্রোটোকল মেনে কিছু পদাধিকারীকে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় ৷ বিরোধী দলনেতা তাঁদের অন্যতম ৷ এদিনের অনুষ্ঠানে নির্বাচিত কিছু ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল ৷ তাঁদের মধ্যে কয়েকজন পদাধিকারী ছিলেন ৷ আর ছিলেন দু'জন বিধায়ক ! তাঁরা হাউসের (বিধানসভার) ভিতর বিজেপি এবং হাউসের বাইরে তৃণমূল ! এমন দুই ব্যক্তির পাশে আমাকে বসার জায়গা দেওয়া হয় ৷ তাছাড়া, রাজ্যসভায় তৃণমূলের দুই সাংসদ আছেন ৷ আমার বসার আসন ছিল তাঁদেরও পিছনে ৷ এতে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনও সমস্যা নেই ৷ কিন্তু, আমি আমার পদমর্যাদার সঙ্গে কোনও আপস করব না ৷ আমার আগে অবশ্য কয়েকজন আপস করেছিলেন ৷ কিন্তু, জ্যোতি বসু বা সিদ্ধার্থশংকর রায়রা কোনও দিন আপস করেননি ৷ আমিও তা করব না ৷"
উল্লেখ্য, এদিন শুভেন্দু যে দুই বিধায়কের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন, তাঁরা হলেন বিজেপি থেকে তৃণমূলে যাওয়া বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ৷ এঁদের দু'জনের পাশেই তাঁর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে দাবি শুভেন্দুর ৷ তাঁর প্রশ্ন, "294 জন বিধায়কের মধ্যে বেছে বেছে কেবলমাত্র এই দু'জনকেই কেন এদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হল" ? শুভেন্দুর ব্যাখ্য়া, 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা' থেকেই এমনটা করা হয়েছে ৷ এবং সবটাই করা হয়েছে রাজ্য়ের তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলনে ! কারণ, এদিনের অনুষ্ঠান আয়োজনের যাবতীয় দায়িত্ব তথ্য-সংস্কৃতি দফতরেরই ছিল ৷ তাছাড়া, এ রাজ্য়ে "একটা পোস্ট কার্ড ছাপাতে হলেও নবান্নের 14তলা থেকে অনুমতি নিতে হয়" বলেও দাবি করেন শুভেন্দু ৷
তবে, এদিন শুভেন্দু যেভাবে জ্যোতি বসু এবং সিদ্ধার্থশংকর রায়ের নাম উল্লেখ করেছেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷ কেন এমনটা মনে করা হচ্ছে ? সম্প্রতি নন্দকুমারের একটি সময়বায় নির্বাচনে সফল হয় বাম-বিজেপি স্থানীয় জোট ! তারপর থেকেই বিজেপি নেতাদের একাংশের মুখে তৃণমূলস্তরে 'তৃণমূল বনাম বাকিরা'-র তত্ত্ব শোনা যাচ্ছে ৷ এমনকী, একটি সংবাদ চ্যানেলের এক প্রতিনিধির প্রশ্নের উত্তরে খোদ শুভেন্দুকেও স্বীকার করতে শোনা গিয়েছে যে গ্রাম বাংলার সংখ্যালঘুরা এখনও বিজেপি-কে সেভাবে ভরসা করতে পারছেন না ৷ সেক্ষেত্রে বামেরা যে তৃণমূলের ভোট কাটতে বিজেপি-এর হাতিয়ার হতে পারে, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ৷ এখন সেই তাঁরই মুখে শোনা গেল জ্যোতি বসুর স্তূতি ! বাদ গেলেন না সিদ্ধার্থশংকরও ! তাহলে কি গ্রামের ভোটের আগে শাসকদলের বিরোধিতার প্রশ্নে বিশেষ কোনও বার্তা দিতে চাইলেন শুভেন্দু ? প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট মহলের ৷