কলকাতা, 23 জুলাই:আগামী 5 অগস্ট প্রত্যেক ব্লকে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের যে কর্মসুচি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ঘোষণা করেছেন, তার বিরুদ্ধে এ বার থানায় ই-মেইল মারফৎ অভিযোগ জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিষেকের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন তিনি ৷
বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক: একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । আগামী 5 অগস্ট প্রত্যেক জেলার প্রত্যেক ব্লকেে বিজেপি নেতাদের বাড়ির 100 মিটারের মধ্যে এই ঘেরাও কর্মসূচি করবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস । এই কর্মসূচি উপলক্ষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে বার্তা দিয়েছেন, তাতে তিনি বলেছেন শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান হবে । কোনওভাবেই বয়স্কদের বাড়িতে ঢোকা বা বেরোনো থেকে আটকানো হবে না ।
অভিষেক-মমতার বিরুদ্ধে কানার অভিযোগ: অভিষেকের এই কর্মসূচি নিয়ে আগেই সরব হয়েছিল বিজেপি ৷ ইতিমধ্যেই এই নিয়ে থানায় মামলাও দায়ের করেছেন এক বিজেপি নেতা । তবে শনিবার এই নিয়ে কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় ই-মেইল মারফত অভিযোগ দায়ের করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । যতদূর জানা গিয়েছে, এই অভিযোগপত্রে এই কর্মসূচির জন্য শুধুমাত্র অভিষেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি । অভিযোগ আনা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও ।
যে ধারায় অভিযোগ: শুভেন্দু অধিকারী যে অভিযোগ দায়ের করেছেন সেখানে 153এ, 153বি, 505, 506, 120বি-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে । প্রসঙ্গত, এর আগে এই একই বিষয় নিয়ে ই-মেইল মারফৎ পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি নেতা রাজর্ষি লাহিড়ী । এরপর একই বিষয় নিয়ে বিরোধী দলনেতার এই পদক্ষেপ যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
গুরুত্ব দিচ্ছে না শাসকদল: এ দিকে শাসকদলের তরফ থেকে বিরোধী দলনেতার এই পদক্ষেপকে সেভাবে গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না । যতদূর জানা গিয়েছে, শাসকদলের তরফ থেকে এই কর্মসূচি নিজেদের মতো করে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে । ইতিমধ্যেই ব্লক ধরে ধরে গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতাদের তালিকা প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়েছে । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কর্মীদের তরফ থেকে কোথায় কোথায় কর্মসূচি হবে, তার তালিকা ঠিক করার জন্য এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে ।
প্রসঙ্গত এই নিয়ে রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "রাজ্য রাজনীতিতে এই ধরনের ঘেরাওয়ের রাজনীতি নতুন নয় । বিরোধী দলে থাকাকালীন একইভাবে বুদ্ধবাবুর বাড়ির 100 মিটারের মধ্যে এ ধরনের ঘেরাও অবস্থান কর্মসূচি হয়েছে । কোথায়, তাই নিয়ে তো কখনও আপত্তি ওঠেনি ! আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের কথা বলছি । ইতিমধ্যেই বিরোধীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির 100 মিটারের মধ্যে তাদের কর্মসূচি নিয়েছে । রাজনৈতিক এই কর্মসূচিতে তখন তো কেউ তাদের বাধা দেয়নি । এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি হতেই পারে ৷ শুধু দেখতে হবে কোনওভাবেই যেন জোর করে কারওকে বাধা না দেওয়া হয় ।"
কড়া সমালোচনা বিজেপির: এ দিকে, বিজেপির তরফ থেকে শাসকের এই ঘেরাও কর্মসূচির কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বিজেপি নেতা তথা মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "এই ধরনের আন্দোলনের জনমনে কোনও প্রভাব নেই । এই আন্দোলন আসলে রাজনৈতিক পরিসরের বাইরের আন্দোলন । এটা করা হচ্ছে এই কারণেই, জায়গায় জায়গায় তথা বুথ স্তরে বিজেপি নেতাদের চিহ্নিত করে তাঁদের বাড়ি আক্রমণের জন্যই এ সব করা হচ্ছে । তৃণমূল কংগ্রেস জানে, তদন্ত যে পথে এগোচ্ছে তাতে আজ না হয় তো কাল উইকেট পড়বে ৷ আর উইকেট পড়লে এই নেতাদের বাড়িতে আক্রমণ হবে ।
'তৃণমূলকে এর ফল ভুগতে হবে': এ দিকে, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এই নিয়ে বলেছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করা কোনও রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না ৷ এই সংস্কৃতি তৈরি করছে তৃণমূল ৷ এর ফল আগামীদিনে তাদেরই ভুগতে হবে ।