কলকাতা, 20 ডিসেম্বর: রাজ্যের মানুষের চোখ যখন দিল্লিতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছেন সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে, ঠিক সেই সময় বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে নবান্নে হাজির রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি দেখা করলেন মুখ্যসচিবের সঙ্গে ৷ আর স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন যে, শাসকদল দিল্লিতে দরবার করতে গেলেও, রাজ্যে তাদের এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়বে না বিজেপি ৷
বুধবার সকালে তিনি প্রথমে আসেন রাজ্য বিধানসভায় ৷ সেখানে বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের পর সরাসরি তিনি চলে যান নবান্নে । তাঁর সঙ্গে রয়েছেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ । আকস্মিক এভাবে বিরোধী দলনেতা নবান্নে চলে আসায়, রীতিমতো অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে পড়েন নবান্নের নিরাপত্তারক্ষীরা ৷ দোনোমনো করতে করতেই সেখানে হাজির নিরাপত্তা রক্ষীদের এড়িয়ে ভিজিটরস রুমে পৌঁছে যান শুভেন্দু ।
কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করার পর তাঁদের ডেকে নেন মুখ্যসচিব ৷ তিনি কথা বলেন শুভেন্দু ও অন্যান্য বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে ৷ এরপর নবান্ন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "নবান্নে 144 ধারা জারি আছে । তাই চারজন বিধায়ককে নিয়ে এখানে এসেছিলাম । মুখ্যসচিবকে ফোন করেছিলাম দেখা করতে চাই বলে । উনারা দেখছি, বলছি করছিলেন ৷ আমরা আর অপেক্ষা করিনি ।"
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "দিল্লিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের আর্থিক বঞ্চনার কথা বলছেন । আর এখানে জনগণকে বঞ্চিত করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।" এ দিন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে নবান্নে যান বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ, চন্দনা বাউরী ও বিশাল লামা ।
বিরোধী দলনেতা বলেন, "মুখ্যসচিবের মাধ্যমে সরকারকে আজ বার্তা দেওয়া হল ৷ পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলকে ভোট দিলে ঘরছাড়া হতে হয়, পঞ্চায়েত ভোট লুট হয় । আবাস, নলবাহিত জল, বার্ধক্য ভাতা দেওয়া হয় না । একজন সাংসদ বলেন, আমি 70 হাজার বার্ধক্য ভাতা দেব । এই সরকার আসলে ফর দ্য পাটি, অফ দ্য পার্টি ও বাই দ্য পার্টি । ফর দ্য ফ্যামিলি, বাই দ্য ফ্যামিলি, অফ দ্য ফ্যামিলি চলছে । দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার এটা । এই সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার কত টাকা দিয়েছে । টাকা কীভাবে নষ্ট হয়েছে, তার তালিকা এখানে আমরা দিয়েছি । সাম্প্রতিক অতীতের কার্শিয়াং, শিলিগুড়িতে বানারহাটে মুখ্যমন্ত্রী যে প্রশাসনিক ডিস্ট্রিবিউশন করেছেন, সেখানে বিরোধী এমএলএ-দের তিনি ডাকেননি । এইভাবে বিরোধীদের বঞ্চনা আসলে জনগণের বঞ্চনা । নবান্নে এসে আজ আমরা বলে গেলাম, লড়াই হবে ৷ এক ইঞ্চিও জায়গা আপনাকে আমরা ছাড়ব না । আপনাকে তাড়া করে বেড়াব আমরা । আপনি দিল্লিতে গিয়ে নাটক করবেন, ভাবছেন ছাড়া পেয়ে যাবেন । এমনটা হবে না ।"
এ দিন শুভেন্দুর ঝটিকা সফর নিয়ে রীতিমতো তটস্থ ছিল নবান্ন । কারণ মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে থাকায় নবান্নের নিরাপত্তাও ছিল কিছুটা ঢিলেঢালা । এই অবস্থায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যে নবান্নে আসতে পারেন এমনটা কেউ ভাবতেও পারেননি । আর এ সবের মধ্যেই শুভেন্দুর হঠাৎ নবান্নে পৌঁছে যাওয়া ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
আরও পড়ুন:
- একশো দিনের বকেয়া নিয়ে রাজ্যের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবে কেন্দ্র, মোদির সঙ্গে বৈঠক সেরে বললেন মমতা
- লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ কর্মসূচিতে থাকছেন না প্রধানমন্ত্রী, জানিয়ে দিলেন শুভেন্দু
- লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ অনুষ্ঠানে নাও থাকতে পারেন প্রধানমন্ত্রী, বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ উদ্যোক্তাদের