কলকাতা, 9 এপ্রিল: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলের বিভাজন প্রকাশ্যে (disagreement of views within TMC leadership) ৷ অনেকেই বিষয়টিকে দলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব হিসেবেই দেখছেন ! দলকে যখন একজোট হয়ে কাজ করার বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তখন কেন প্রকাশ্যে দলীয় নেতাদের এই মতভেদ, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ এরপর কী করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাড়ছে তা নিয়ে জল্পনাও ৷
এসএসসি'তে নিয়োগ নিয়ে শুক্রবার কুণাল ঘোষের বক্তব্যের পাল্টা শনিবার দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম ৷ কুণাল তৃণমূলের মুখপাত্র, অন্যদিকে ফিরহাদ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ৷ ফিরহাদ যে তৃণমূলের পুরনো নেতাদের মধ্যে অন্যতম শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট বৃত্তেও রয়েছেন তিনি ৷ দল ও মমতার মধ্যে সংযোগকারীর ভূমিকাও তিনি পালন করেন ৷ তাই ফিরহাদের এদিনের মন্তব্যের তাৎপর্য যথেষ্ট ৷ এসএসসি ইস্যুতে কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, "এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সম্পর্কে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই বলতে পারবেন । এটা প্রশাসনিক বিষয়, দলের বিষয় নয় ৷ পার্থদা তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, এবিষয়ে কারও কোনও প্রশ্ন থাকলে তাঁর কাছে গেলে তিনি বলতে পারবেন ৷" এর শনিবার এর সম্পূর্ণ বিপরীত কথা শোনা গিয়েছে ফিরহাদের মুখে ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন (Firhad Hakim takes stand for Partha Chatterjee), "কুণাল মন্ত্রিসভার কেউ নয় ৷ আমাদের এটা যৌথ দায়িত্ব, এই মন্ত্রিসভায় আমি আছি । আমি অন্যের ব্যাপার জানি না, তবে এটা পার্থদার ব্যাপার নয় । পার্থদার মতো ক্যাবিনেটে আমিও মন্ত্রী, যদি কোনও জায়গায় দুর্নীতি হয় তাহলে পার্থদার যতটা দায় বর্তায়, আমার উপরেও ততটাই দায় বর্তায় । এটা একটা কালেক্টিভ পরিবার আমাদের । আমরা কারওর উপরে দায় ঠেলতে পারি না ।"
আরও পড়ুন : কুণাল মন্ত্রিসভার কেউ নয়, এসএসসি দুর্নীতি প্রসঙ্গে পার্থর পাশে ফিরহাদ
বিতর্ক চাপা দিতে, দলে কোনও বিভাজন নেই বলেও এদিন মন্তব্য করেছেন ফিরহাদ হাকিম ৷ কিন্তু রাজনৈতিক মহলে এতে গুঞ্জন থামছে না ৷ প্রশ্ন উঠছে পৌভোটের সময় থেকে তৃণমূলে প্রবীণ এবং নবীনের যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছিল, সেই ফাটল কি এখনও মেরামত করা সম্ভব হয়নি? দলকে অস্বস্তিতে ফেলে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য নতুন করে সেই জল্পনাই উসকে দিয়েছে । ঘটনার সূত্রপাত ঠিক কোথায়, হয়তো এখন আর সে কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না । তবে এক ব্যক্তি এক পদ, বৃদ্ধতন্ত্র সরিয়ে দলকে বদলানোর যে ভাবনা সংস্কারপন্থী অভিষেকের গলায় শোনা গিয়েছিল, শোনা যায় এর বিরোধিতা সরাসরি এসেছিল কালীঘাট থেকেই । তবে কালীঘাটের বিরোধিতার পিছনে ছিল শীর্ষস্থানীয় কিছু পুরনো নেতাদের একজোট হওয়া । অন্তত তৃণমূলের অন্দরমহলে কান পাতলে এখনও তেমনটাই শোনা যায় । সে সময় 'ওল্ড ইজ গোল্ড' বলে নবীনদের দাবি দল এড়িয়ে গেলেও এখনও বিষয়টি নিয়ে ঘাসফুলের অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । জোড়াতালি দিয়ে সব ক্ষত মেরামত করা হয়তো সম্ভব হয়নি ৷
আরও পড়ুন : ব্রাত্যর জমানায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম হয়নি, পার্থকে ইঙ্গিত কুণালের
কুণাল ঘোষ দলে অভিষেকপন্থী নেতাদের মধ্যে অন্যতম । কেউ বলতেই পারেন তিনি এই মুহূর্তে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বাসের পাত্র । অভিষেকের সমর্থনেই এই মুহূর্তে কুণাল রাজ্য সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে । তাই জল্পনা, তবে কি এই বিতর্কে সমর্থন আছে অভিষেকেরও? নবীন বনাম প্রবীণ এই দ্বন্দ্বের সময় ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের অন্যান্য নেতাদের যেভাবে একজোট হতে দেখা গিয়েছিল এ দিন সেই একই ছবি প্রকাশ্যে এসেছে । কুণালকে কটাক্ষ করে পার্থর পাশে দাঁড়িয়েছেন ফিরহাদ ৷ প্রশ্ন হল এই অবস্থায় দলনেত্রী হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যেই এই ফাটল মেরামতিতে কি কোনও কড়া সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে হবে তাঁকে?