কলকাতা, 26 মার্চ : কোরোনা ভাইরাস পালটে দিয়েছে দৈনন্দিন জীবন । ঘরবন্দী সকলে । নেই পৌরভোটের প্রচার । নেই রাজনৈতিক কর্মসূচি । রাজ্যের বাম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বও গৃহবন্দী । রাজনীতি থেকে বহু দূরে রয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বা বামফ্রণ্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুরা । শ্রীরামপুরের বাড়িতেই বসে সময় কাটাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান ।
পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতে থরে থরে সাজানো রয়েছে বেশকিছু বই । গত ৮-৯ বছর ধরে একটা পাতাও উলটে দেখার সময় হয়নি রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যর । কখনও সংসদের কাজ তো কখনও রাজনীতি । বই আছে বইয়ের মতোই । তবে, কোরোনায় গৃহবন্দী হয়ে এবার সেই সব বই নিয়ে পড়া শুরু করেছেন তিনি । কাজে লাগাচ্ছেন অবসরের সময় । তাঁর কথায়, জীবনের ব্যস্ততম সূচিতে এক মুহূর্ত সময় পাই না বই পড়ার । এই সময় বই পড়ে মানসিকভাবে শান্তি পাওয়া যাচ্ছে । সময় পেলে একটি বই লেখার ইচ্ছে আছে তাঁর । দলীয় কর্মী এবং অপরিচিতদের বাড়িতে প্রবেশ এই মুহূর্তে নিষেধ করেছেন তিনি । স্ত্রী'কে নিয়ে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই রয়েছেন । টেলিফোনে যোগাযোগ করছেন সকলের সঙ্গে ।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র । স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জানালেন, রাজনীতি থেকে এখন তিনি বহু দূরে রয়েছেন । সদ্য হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন । রবীন্দ্রনাথের গান শুনেই দিনের অধিকাংশ সময় কাটছে তাঁর । সুচিত্রা মিত্র, গীতা ঘটক, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিদেব ঘোষ এবং দেবব্রত বিশ্বাসের গানই তাঁর বেশি পছন্দের । সকাল-বিকেল, দুপুর রবীন্দ্র সংগীত শুনছেন তিনি । চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বাড়ির মধ্যেই হাঁটাচলা করছেন । গল্পের বইও পড়ছেন সময় পেলে । এ সময় রাজনীতিতে একদম নেই তিনি । তাঁর কথায়, "বই পড়ে, গল্প শুনে, ঘরে পায়চারি করে এবং গান শুনে সময় কাটছে । রাজনীতির বই একদম পড়ছি না । এখন রাজনীতি থেকে অনেক দূরে । গল্প এবং উপন্যাস বেশি করে পড়ছি ।"
প্রদীপ ভট্টাচার্য বা সোমেন মিত্র রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান ঘরে বসেই সারছেন রাজনৈতিক কাজ । চোখের সমস্যার জন্য বই পড়তে পারেন না । বড় অক্ষর কেবল দেখতে পান । শ্রীরামপুরের বাড়িতে বসে জানালেন,"বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদেরকে উদ্ধার করাই এখন আমার প্রধান কাজ । পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সহযোগিতায় জলঙ্গির কিছু মানুষকে অন্য রাজ্য থেকে এ রাজ্যে ফিরিয়েছি । এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় মানুষ আটকে পড়ার পরে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদেরকে যথাযথভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি । সম্পূর্ণভাবে গৃহবন্দী । পরিবারের লোককে সময় দেওয়ার থেকে এখন বেশি সময় চলে যাচ্ছে রাজ্যের মানুষের জন্য ।" রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পরিবারে আছেন স্কুল পড়ুয়া ভাইপো, ভাই এবং ভাইয়ের বউ । আর আছেন অসংখ্য দলীয় কর্মী । নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন । এরমধ্যে বিধানসভায় আসার কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁর ।
অন্যদিকে, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু আজও বৈঠক করেছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে । যেটুকু সময় পাচ্ছেন মুজাফ্ফর আহমেদ ভবনে নিজের ঘর থেকে নেমে দলের অফিসে আসছেন । সময় পেলেই পড়ছেন বিদ্যাসাগর রচনা সমগ্র । সকালবেলা উঠে আলিমুদ্দিনের ছাদে তাঁর নিজের তৈরি বাগান পরিচর্যাও করেন । তাঁর কথায়, নিজের হাতের বাগান থেকে কাঁচা লঙ্কা, উচ্ছে নিয়ে এসে খেতে ভালোই লাগে । দলীয় মুখপাত্রসহ বামপন্থী পত্রপত্রিকার লেখাও লিখে চলেছেন তিনি । প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু একদা যে ঘরে এসে বসতেন সেই ঘরটি এখন বিমান বসুর পড়াশোনা করার ঘর । পার্টির চিঠি খুঁটিয়ে পড়ছেন । অফুরন্ত সময় হাতে । দলীয় কর্মীরাও নিয়মিত এখন পার্টি অফিসে আসে না । সকালের দিকে গান শোনেন । খুব ভোরবেলা উঠে কাঁচা হলুদ আর নিমপাতা খান । এই অভ্যেস তাঁর কয়েক দশকের । টিভি এবং রেডিয়োর খবর নিয়ম করে শোনেন ।
CPI(M)-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এমনিতে কড়েয়া রোডের সরকারি আবাসনে নিজের বাড়িতে থাকলেও সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের জন্য আজ আলিমুদ্দিনে আসেন । সংকটকালে বামপন্থীদের কী কর্তব্য সে বিষয়ে বিভিন্ন পুরোনো পত্র-পত্রিকা পড়েন । অন্যান্য দিন সকাল থেকেই ব্যস্ত থাকেন তিনি । কখনও কোরোনা ভাইরাসের প্রভাব রাজ্যের মানুষকে কতটা প্রভাবিত করেছে, কখনও দলীয় কর্মীদের সতর্ক করা । এই সময়ে এভাবেই চলছে তাঁর দিন । এসবের পাশাপাশি এই সময় দলীয় কর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কি না সেই বিষয়টিরও প্রতি মুহূর্তে আপডেট নিচ্ছেন তিনি ।
এদিকে, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটির বাড়িতে বসেই খোঁজখবর রাখছেন দলীয় বিধায়কদের । সংশ্লিষ্ট বিধায়কদের এলাকার ছবিটা কেমন, সে সবও খবর নিচ্ছেন তিনি । বিভিন্ন বিদেশি পত্রপত্রিকা এবং বই পড়ছেন অবসরে ।