পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

দীর্ঘসময় ধরে আর মর্গে থাকবে না অজ্ঞাত পরিচয়ের দেহ, ময়নাতদন্তের জন্য SOP

জ্ঞাত পরিচয়ের দেহ আর দীর্ঘ সময় ধরে রাখা হবে না মর্গে । রাজ‍্যের সব জায়গায় যাতে একইরকমভাবে ময়নাতদন্ত হয়, পাশাপাশি সময়ের কথা মাথায় রেখে তৈরি হল ময়নাতদন্তের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (SOP) ।

ছবি
ছবি

By

Published : Jan 4, 2020, 5:37 AM IST

কলকাতা, 4 জানুয়ারি : পোস্ট মর্টেমের পরে কোনও অজ্ঞাত পরিচয়ের দেহ আর দীর্ঘ সময় ধরে রাখা হবে না মর্গে । ময়নাতদন্তের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (SOP)-এ এমনই বলা হয়েছে । শুধুমাত্র তাই নয়, এই SOP অনুযায়ী গোটা রাজ্যে একই গাইডলাইন মেনে ময়নাতদন্ত করা হবে । ময়নাতদন্তের সময় বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এই ব্যবস্থায় সরলীকরণের চেষ্টা হয়েছে, যাতে উপকৃত হন সাধারণ মানুষ ।

গতকাল এই SOP প্রকাশ করা হয়েছে । এই SOP-তে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবছর এখন 90 হাজার থেকে 95 হাজার ময়নাতদন্ত হয় । এ রাজ্যের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং, জেলা সদর হাসপাতালগুলির পাশাপাশি কিছু মহকুমা হাসপাতালেও মেডিকো লিগ্যাল কেসগুলির ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের এগজামিনেশন হয় । তবে, মেডিকো লিগ্যাল শব ব্যবচ্ছেদের ক্ষেত্রে SOP-এর প্রয়োজন দেখা দেওয়ার কারণে, SOP-র জন্য একটি এক্সপার্ট কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য দপ্তর । ভারত সরকার এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যাতে এ রাজ্যের প্রতিটি স্থানে ময়নাতদন্ত হয়, তার জন্য এই SOP-এর মাধ্যমে গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে ।

এই SOP-র বিষয়ে এ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তী বলেন, "রাজ‍্যের সব জায়গায় যাতে একইরকমভাবে ময়নাতদন্ত হয়, তার জন্য গাইডলাইন মেনে চলতে এই SOP সার্কুলেট করা হল । ময়নাতদন্তের জন্য গাইডলাইন যাতে রাজ্যের সব স্থানে প্রযোজ্য হয়, তার জন্য এই SOP। একথা জানিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, "মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট রয়েছে । এই সব স্থানে ময়নাতদন্তের যে নিয়মগুলি মেনে চলা হয়, অনেক সময় জেলা হাসপাতালগুলিতে তা সম্ভব হয় না । কারণ, জেলা হাসপাতালে ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের ডাক্তাররা নেই । ওই সব স্থানে অন্য বিভাগের ডাক্তাররা ময়নাতদন্ত করেন । MBBS করার সময় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিষয়গুলি ওই ডাক্তাররা জেনেছেন । কিন্তু, তারপর নিয়মিত ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যুক্ত না থাকার কারণে পোস্ট মর্টেমের সময় কোনও কোনও ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ।"

তিনি আরও বলেন, "এর পাশাপাশি ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে কিছু অ্যাডভান্সমেন্ট এসেছে, যেগুলি এখনও কাজে লাগানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি । আগে যখন ময়নাতদন্ত হত,তখন DNA প্রোফাইলিংয়ের বিষয়টি ছিল না । যে কারণে অজ্ঞাত পরিচয়ের কোনও দেহের ময়নাতদন্ত হলে, এই দেহকে বেশিদিন ধরে মর্গে রেখে দিতে হত , যাতে আত্মীয়-স্বজনরা পরবর্তীকালে এসে নিতে পারেন বা দেখে চিনতে পারেন । যতদিন গেছে এই বিষয়টি আরও বেড়েছে ।" যখন DNA প্রোফাইলিং চলে এল, তখন অজ্ঞাত পরিচয়ের এই দেহগুলি বেশিদিন রাখার ফলে যাতে স্থান ব্লক হয়ে না থাকে, তার জন্য সময়টা কমিয়ে আনার কথা ভাবা হল । এক্ষেত্রে দেহের থেকে নমুনা নিয়ে DNA প্রোফাইলিং করে আমরা রেখে দেব, পরে দেহ ডিসপোসড করে দেওয়া হবে । পরবর্তীকালে কেউ দাবি করলে DNA ম্যাচ করে দেখা হবে । SOP অনুযায়ী, এই ধরনের দেহ এখন সাতদিনের মধ্যে ডিসপোজ়ড করা হবে ।"

স্বাস্থ্য দপ্তরের এই আধিকারিক বলেন, "ছয় মাস ধরে রেখে দিতে হত ভিসেরা । এখন নতুন টেকনিকে তাড়াতাড়ি যাতে টক্সিনগুলি ডিটেকশন হয়, তার চেষ্টা করা হল । এখন ছয় মাসের বদলে এই সময় একমাস করে দেওয়া হয়েছে এই SOP-তে । সব কিছু ডিজিটালাইজড হচ্ছে । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট যাতে কম্পিউটারাইজড করে দেওয়া যায়, তার জন্য এই SOP-তে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পোস্ট মর্টেমের রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের হাতের লেখা বোঝা গেল না। এক্ষেত্রে হয়তো দেখা গেল, আদালত বা সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বুঝতে পারলেন না। আদালতে তখন ওই ডাক্তারকে বার বার ডেকে পাঠানো হল। এই ধরনের সমস্যা কমানোর জন্য ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কম্পিউটারাইজডের কথা বলা হয়েছে এই SOP-এ । ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালগুলিতে কোন ধরনের পরিকাঠামো দরকার, তাও বলে দেওয়া হয়েছে এখানে ।"

এই SOP-এর বিষয়ে RG কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ডাক্তার সোমনাথ দাস বলেন, " SOP অনুযায়ী ময়নাতদন্ত করার ক্ষেত্রে পুরো রাজ্যের ডাক্তারদের সুবিধা হবে । জনসাধারণ থেকে পুলিশ, সকলেরই সুবিধা হবে । কারণ, এই SOP-তে বেশ কিছু বিষয়ে ময়না তদন্তের প্রক্রিয়া সরলীকরণের চেষ্টা হয়েছে । রিপোর্ট লেখা থেকে শুরু করে ময়না তদন্তের পর দেহ পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টিতে সরলীকরণের চেষ্টা হয়েছে । সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত উপযোগী এই SOP-তে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ময়না তদন্তের বিষয়টিকে সময়োপযোগী করে তোলা হয়েছে ।"

এই SOP-তে যে সব বিষয়ে বলা হয়েছে : ময়নাতদন্ত শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে হবে । পুলিশের লিখিত অনুরোধের ভিত্তিতে হবে । বিশেষ ক্ষেত্রে, এগজিকিউটিভ অথবা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশের কপি দিতে হবে । ময়নাদন্তের জন্য মেডিকেল কলেজগুলির ক্ষেত্রে ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের প্রধান এবং অন্য হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে সেখানকার সুপারিনটেনডেন্টকে উল্লেখ করে রিকুইজিশন পাঠাতে হবে । রেফার কেসগুলিতে মেডিকেল কলেজগুলির ক্ষেত্রে প্রিন্সিপাল এবং অন্য হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে সুপারিনটেনডেন্টকে রিকুইজিশন পাঠাতে হবে । পুলিশ কাস্টডিতে মৃত্যুর ঘটনায় শব ব্যবচ্ছেদের ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে । তবে, জেলে মৃত্যু হলে শব ব্যবচ্ছেদের ভিডিও রেকর্ডিং হবে । যদি ম্যাজিস্ট্রেট বলেন অথবা সন্দেহজনক অভিযোগের ক্ষেত্রে‌ তা হবে ‌। চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের জন্য বোর্ড গঠন করতে হবে ।

বেলা 12টা থেকে বিকাল 4টা পর্যন্ত এখন শব ব্যবচ্ছেদ হয়‌ । ময়না তদন্তের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এবং সাধারণ মানুষের জন্য আরও ভালো পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই SOP অনুযায়ী সময় বাড়িয়ে করা হয়েছে সকাল 9 টা থেকে বিকাল 4 টা পর্যন্ত । বিকাল 3টে পর্যন্ত রিকুইজিশন পাঠানো যাবে । শব ব্যবচ্ছেদ যাতে দ্রুত শেষ করে দেহ পরিজনদের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে । ফলে সাধারণ মানুষকে হেনস্থার সম্মুখীন হতে হবে না বলে জানানো হয়েছে । আদালতের নির্দেশে DNA প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহের বিষয়টি বাদে প্রতিটি অজ্ঞাত পরিচয়ের দেহ সাত দিনের মধ্যে ডিসপোসড করতে হবে । বেসরকারি হাসপাতালে ব্রেন ডেথ ঘোষিত কোনও রোগীর অঙ্গদানের ক্ষেত্রে যদি শব ব্যবচ্ছেদের প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে ময়নাতদন্ত ওই স্থানেই হবে । এই SOP-তে বলা হয়েছে, শব ব্যবচ্ছেদ রুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে‌ । রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সহ এয়ার-কন্ডিশনিংয়ের ব্যবস্থাও । শব ব্যবচ্ছেদের আগে এবং পরে দেহ ডিসপোজ়ড করা না পর্যন্ত কুলিং চেম্বার অবশ্যই থাকা প্রয়োজন । অন্তত পক্ষে 12টি কুলিং চেম্বার রাখার কথা বলা হয়েছে । শব ব্যবচ্ছেদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড মাপের টেবিলের কথাও বলা হয়েছে । ময়নাতদন্তের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত থাকবেন, তাঁদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রতিষেধকের ব্যবস্থা থাকবে । প্রতিটি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে যাতে টক্সিকোলজি এবং সেরোলজি ইউনিট চালু করা যায়, তার কথাও বলা হয়েছে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details