পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

লক্ষ্য BSF, গোরু পাচারের সময় বাঁধা সকেট থেকেই বিস্ফোরণ সীমান্তে ! - জলঙ্গি বিস্ফোরণ

গতরাতে জলঙ্গির ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ফরজিপাড়া সীমান্ত আউটপোস্ট এলাকায় যে সকেট বিস্ফোরণ হয়েছে, তা গোরুর গায়ে বাঁধার জন্য রাখা হয়েছিল বলেই সন্দেহ BSF-র । তা ফেটেই মৃত্যু হয় এক নাবালক সহ তিনজন গ্রামবাসীর । ঘটনায় গুরুতর আহত আরও একজন ।

গোরু পাচারের সময় বাঁধা সকেট থেকেই বিস্ফোরণ সীমান্তে

By

Published : Oct 29, 2019, 1:09 PM IST

Updated : Oct 29, 2019, 2:24 PM IST

কলকাতা, 29 অক্টোবর : কলা গাছের গুড়ির মাঝে গোরু বেঁধে জলে ভাসিয়ে দেওয়া । গঙ্গাকে কাজে লাগিয়ে এভাবেই বাংলাদেশে গোরু পাচার করে পাচারকারীরা । তৎপরতার সঙ্গে তা অনেকটাই বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী । অত্যাধুনিক ক্যামেরা আর স্পিডবোটকে কাজে লাগিয়ে কয়েকদিন আগেই উদ্ধার করা হয়েছে প্রচুর গোরু । গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজন পাচারকারীকেও । আর তারপরেই ছক পালটাতে শুরু করেছে পাচারকারীরা ।

কী সেই ছক?

দু'দিকে দু'টো কলা গাছের গুঁড়ি । মাঝখানে শক্ত করে বাঁধা রয়েছে গোরু । যাতে আওয়াজ করতে না পারে, বাঁধন ছিঁড়ে ফেলতে না পারে তার জন্য বাঁধা রয়েছে মুখও । এভাবেই মালদা এবং মুর্শিদাবাদের পাহাগাতি, ফুলতলা, লালপুর, কমলপুর, ধুলিয়ান সীমান্তে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয় গোরু । সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে পাচারের সময় গোরুর ঠিক মাথার কাছে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে সকেট বোমাও ।

কিন্তু কেন?

BSF-র DIG রবিরঞ্জন বলেন, "বোমা লাগানোর উদ্দেশ্যই তো কাউকে আঘাত করা । BSF-র জওয়ানরা যখন গোরু উদ্ধার করতে চায় তখন অসতর্ক হলেই ওই সকেট বোমা ফেটে যেতে পারে । তাতে বড়োসড়ো আঘাত আসতে পারে BSF-র উপরে ।" আর সেই উদ্দেশ্যেই এখন এই পথ নিয়েছে পাচারকারীরা ।

গতরাতে জলঙ্গির ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ফরজিপাড়া সীমান্ত আউটপোস্ট এলাকায় যে সকেট বিস্ফোরণ হয়েছে, তা গোরুর গায়ে বাঁধার জন্য রাখা হয়েছিল বলেই সন্দেহ BSF-র । তা ফেটেই মৃত্যু হয় এক নাবালক সহ তিনজন গ্রামবাসীর । ঘটনায় গুরুতর আহত আরও একজন ।

BSF সূত্রে খবর, একটা বালতিতে ওই সকেট বোম লুকোনো ছিল । গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টা নাগাদ সেটি হঠাৎই ফেটে যায় । ঘটনায় মৃত্যু হয় জলঙ্গীর নান্টু মোল্লা (42), রায়পাড়ার পিন্টু মণ্ডল (14) এবং দক্ষিণ ঘোষপাড়ার ছবি শেখের । গুরুতর আহত হয়েছেন মুকেশ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি । তাঁকে জলঙ্গির সরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে ।

সকেট বোমা

জলঙ্গি থানায় ঘটনার কথা জানায় BSF । পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে । BSF-র তরফে রবি রঞ্জন জানিয়েছেন, সেই তদন্তেই প্রকাশ হবে পুরো বিষয়টি । পাচারকারীদের BSF-র উপর আক্রমন এবছরই হয়েছে বেশ কয়েকবার । বাংলাদেশ সীমান্তে গোরু পাচারে বাধা পেলেই পাচারকারীরা সীমান্তরক্ষীদের উপর চালাচ্ছে আক্রমণ । এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে উত্তর 24 পরগনার বনগাঁ লাগোয়া আংরাইল সীমান্তে । কর্মরত BSF জওয়ানদের উপর আক্রমণ চালায় পাচারকারীরা ।

গোরু পাচারের সময় বাঁধা হয়েছে সকেট

BSF সূত্রে খবর, 10 জুলাই রাতের অন্ধকার আর বৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে এদেশে ঢুকে পড়ে 25 জন বাংলাদেশি গোরু পাচারকারী । তারা ভারতীয় গোরু পাচারকারীদের থেকে 10-15 টি গোরু নিয়ে সীমান্ত পার করার চেষ্টায় ছিল । ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ পাচারকারীদের নড়াচড়া নজরে আসে সীমান্তরক্ষীদের । সঙ্গে সঙ্গেই BSF জওয়ানরা পথ আটকায় । ঘটনাস্থান থেকে সীমান্ত মাত্র 200 মিটার । সীমান্তরক্ষীরা প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারেননি, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা দা, হাঁসুয়া, বোমা বন্দুকে সজ্জিত ছিল । বাধা পেয়েই বোমা ছুড়তে শুরু করে ওই পাচারকারীরা । প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই বোমা ছিল খুবই শক্তিশালী । সম্ভবত সেটিও সকেট ছিল । তারা BSF জওয়ানদের প্রাণে মারার চেষ্টা চালায় । পাচারকারীরা কর্মরত সীমান্তরক্ষী আনিসুর রহমানকে লক্ষ্য করে বোম ছোড়ে । দায়িত্বে অচল ছিলেন আনিসুর । সেই অবস্থাতেই তিনি এক রাউন্ড গুলি চালান । মরিয়া হয়ে পথ আটকানোর চেষ্টা করেন পাচারকারীদের । কিন্তু কব্জির নিচে থেকে উড়ে যায় ডান হাত । শরীর জুড়ে বোমার স্প্লিন্টার । ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস । ততক্ষণে অন্যান্য সীমান্তরক্ষীরাও এসে পড়েন । তারা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আনিসুরকে ।

Last Updated : Oct 29, 2019, 2:24 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details