কলকাতা, 16 সেপ্টেম্বর : লিপস্টিক গাছ চাষে সফল হয়েছে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, পানীয় রং করতে, কাপড় রং করতে, কসমেটিকসে বিপুল পরিমাণে ব্যবহৃত হওয়া এই গাছের পুরুলিয়ার একাধিক গ্রামের অনুর্বর জমিতে ট্রায়াল চাষ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে। সেই ট্রায়াল সফল হওয়ায় এবার বেশি সংখ্যায় সেই গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষকদের দাবি, এই গাছের বীজের গায়ে একটি লাল রঙের ক্যারোটিনয়েড থাকে, যা স্যাফরনের সস্তা বিকল্প হতে পারে । পাশাপাশি, বাজারে সাধারণত যেসব সিনথেটিক রং খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা হয় তা থেকে কার্সিনোমা-সহ বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য ক্ষতিকারক রোগ হতে পারে। তারও বিকল্প হিসেবেও কাজ করতে পারে এই গাছ থেকে উৎপন্ন রং।
কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (DST) অধীনে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনোভেশন হাব রয়েছে । গত এক বছর ধরে মোট 20টি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এই হাবের তরফে । এবার সেই উদ্যোগে নতুন সংযোজন 'লিপস্টিক গাছ' চাষ । 'বিক্সা অরেলানা' হল উত্তর দক্ষিণ আমেরিকা ও মেক্সিকোর মধ্যে একটি অঞ্চলের স্থানীয় গাছ । এটি একটি মাঝারি উচ্চতার ঝোপালোক প্রকৃতির গাছ । এর গোলাপী ও সাদা রঙের ফুল হয় এবং লিচুর মতো থোকা থোকা ফল হয় । পেকে গেলে ফলগুলো ফেটে দুটিভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এবং তাঁর মধ্যে ছোট ছোট লাল-কমলা রঙের বীজ থাকে । সেই বীজের গা থেকেই পাওয়া যায় একটি কমলা-লাল রং। যা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, কসমেটিকস, বডি পেইন্ট, এমনকী মশলা হিসেবেও ব্যবহার করা হয় । এই গাছটিকে লিপস্টিক গাছ বা অ্যানাত্তোও বলা হয় ।
সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে DST SEED ডিভিশনের অন্তর্ভুক্ত সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনোভেশন হাবের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর সুব্রত রাহা বলেন, "আমরা মোট ১০০টা গাছ পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়েছিলাম । আমরা দেখলাম গাছগুলোর ভালোই বৃদ্ধি ও ফলন হচ্ছে । তার ভিত্তিতে আমরা তিনটে গ্রামে এই বছর তিন হাজারের মতো চারা লাগাব । আমরা আগামী 15 দিনের মধ্যে এগুলো লাগিয়ে ফেলব । সেখান থেকে তাঁরা একটা রং পাবেন । রঙটা জলেও গোলে, তেলেও গোলে । রঙটা জুস, জ্যাম, জেলি, পুডিং, কাস্টার্ড, পায়েস, ক্ষীর, মিষ্টির মতো খাদ্যদ্রব্যে জলের সঙ্গে গুলে ব্যবহার করা যাবে । আবার যেহেতু তেলের সঙ্গেও রঙটা মেশে তাই বিরিয়ানি, মাংসের মতো তেলে তৈরি জিনিসেও ব্যবহার করা যাবে । এ ছাড়া, বডি পেইন্ট হিসেবেও রঙটা ব্যবহার করা যায় । এটা ভীষণভাবে এডিবল। এটা ক্যারোটিনয়েড রিচ । ফলে, এটা পুষ্টির সাপ্লিমেন্ট।"
পুরুলিয়ায় অনেক অনুর্বর পতিত জমি রয়েছে । সেই জমিগুলিতে প্রথাগত চাষ করা যায় না । পরীক্ষামূলক চাষে দেখা গেছে সেই জমিতে লিপস্টিক গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হয়েছে । তাই এই বছর পুরুলিয়ার জয়পুর, বরাবাজার ও বাঘমুণ্ডি ব্লকের একাধিক গ্রামে তিন হাজার লিপস্টিক গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় । অন্যান্য উদ্যোগের মতো আদিবাসী সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ।