কলকাতা, 14 জুলাই : কোরোনা আবহে 22 মার্চ জনতা কারফিউ থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা লকডাউনে বন্ধ ছিল সব শপিং মল ও রেস্তরাঁ । প্রায় আড়াই মাস পর আনলক ওয়ানে 8 জুন থেকে সেগুলি খোলার ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য সরকার । কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের দেওয়া কোরোনা প্রতিরোধের সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সর্বসাধারণের জন্য খুলে গেছে শপিং মলের দরজা ৷ আগের মতোই বসে খাওয়ার জন্য খুলে গেছে রেস্তরাঁগুলিও । কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের আতঙ্ক কাটিয়ে কি সাধারণ মানুষ শপিং মল বা রেস্তরাঁমুখী হচ্ছেন? খোঁজ নিতে কলকাতার একাধিক শপিং মল ও রেস্তরাঁ ঘুরে দেখল ETV ভারত ।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য শপিং মল খোলার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই দাবি গ্রাহকদের ৷ গ্রাহক বন্দিতা লিঙ্কা বলেন, " প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য খোলা দরকার ছিল । কতদিন আর বসে থাকব বাড়িতে ? দরকারি জিনিসগুলি তো নেওয়ার প্রয়োজন আছেই । তবে, COVID-19 পুরোপুরি কন্ট্রোলে আসার পর খুললেও ভালো হত ।"
বেহালার দীনেশ সিং বলেন, "বাড়ির কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার থাকে শপিং মলে । সেগুলির জন্য খোলাটা ঠিকই আছে ।"
গ্রাহক রশ্মি জানা আবার শপিং মল খোলার পক্ষে সায় দিলেও রেস্তরাঁ খোলাটা এখনই ঠিক নয় বলে জানান তিনি । রশ্মি বলেন, "শপিং মল খোলাটাও ঠিক উচিত হয়নি । কিন্তু, মানুষের অনেক কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস শপিং মল থেকে কেনার দরকার পড়ে । তাই শপিং মল খোলাটা মেনে নেওয়া যায় ৷ তবে, সবাইকে অনুরোধ করব, প্লিজ বি সেফ । কিন্তু এখনই রেস্তরাঁ খোলার প্রয়োজনীয়তা ছিল না ৷"
স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদায় শপিং মলগুলিতে মানুষের আনাগোনা ধীরে ধীরে বাড়ছে ৷ দক্ষিণ কলকাতার লেক মলের ম্যানেজার পীযূষ সরকার বলেন, "শপিং মল খোলার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার থেকে যা যা SOP দেওয়া হয়েছিল সমস্ত কিছু আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি । স্বাস্থ্যকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি । মলে প্রবেশ করার সময় প্রথমেই থার্মাল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে । তাপমাত্রা ঠিক থাকলেই গ্রাহকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে ৷ একইসঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারও দেওয়া হচ্ছে ৷ কিছু সময় পর পরই মলের সমস্ত টাচ-পয়েন্টগুলো যেমন, এসকেলেটরের বেল্ট, লিফ্টের বোতাম, টয়লেটের ফ্ল্যাশ বোতাম, বেসিনের ট্যাপগুলোর মতো সবকিছুকেই স্যানিটাইজ করা হচ্ছে । পুরো মলটাকে প্রতিদিন স্যানিটাইজ করছি । সামাজিক দূরত্বের জন্য ফ্লোরে স্টিকার দেওয়া আছে । 8 জুন মল খোলার পর থেকে আমরা মানুষের মধ্যে যে ভয় দেখেছিলাম সেটা আস্তে আস্তে কাটছে । প্রতিদিন মানুষের যাতায়াত যেভাবে বাড়ছে তাতে আমরা বিশ্বাস করছি খুব দ্রুত মলটা আগের মতো অবস্থায় চলে আসবে । "
COVID-19 প্রতিরোধের জন্য সমস্ত রকম সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে অ্যাক্সিস মল । অ্যাক্সিস মলের আধিকারিক বলেন, "আমরা গেটে থার্মাল গান দিয়ে তাপমাত্রা মেপে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ় করার পর গ্রাহকদের প্রবেশ করতে দিচ্ছি । প্রত্যেকদিন মল স্যানিটাইজ করা হচ্ছে । প্রত্যেক দু'দিন অন্তর সব স্যানিটাইজ় করানো হচ্ছে । মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না । আমরা প্রত্যেকটা দোকানের সামনে এবং ভিতরে মার্কিং করে দিয়েছি । সেখানেই দাঁড়াতে হবে । দোকানগুলিতে জামাকাপড়ের ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না ৷ যাদের যতটুকু দরকার তাঁরা ততটুকু করে বেরিয়ে যাচ্ছেন । কেউ রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে বা গল্প করলে তাঁদের দাঁড়াতে না করা হচ্ছে । এগুলো সব মেনে চলা হচ্ছে । যাঁরা মলে আসছেন তাঁদের থেকে আমরা প্রচণ্ড রকম সহযোগিতা পাচ্ছি । "
অ্যাক্সিস মলে মানুষের আনাগোনা কেমন সে প্রসঙ্গে ওই আধিকারিক বলেন, "আমরা ভালোই রেসপন্স পাচ্ছি । আগের মতো মানুষ তো কোনও মলেই আসছেন না । তবে, মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছেন । আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন । ধীরে ধীরে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে । তবে, ফেস্টিভ্যাল আসার আগে যে শপিং স্প্রি শুরু হয় সেটা হতে এখনও সময় লাগবে । সরকারি নির্দেশে মাল্টিপ্লেক্স ও বার কাম রেস্টুরেন্টগুলি এখন বন্ধ আছে । শপিং মলে মাল্টিপ্লেক্স, রেস্টুরেন্ট, বার এগুলোই বেশিরভাগ ক্রাউড টানে । তবে, বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে ফিডব্যাক ভালো আছে । আপ-ডাউন একটু হয় । কিন্তু, প্রথম থেকে দেখতে গেলে আমাদের গ্রাফটা ক্রমশ উপরের দিকে এগিয়ে গেছে ।"
অ্যাক্সিস মল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী-
- গতবছর পুজোর সময় 70-72 হাজার মানুষ এসেছেন মলে
- উইকেন্ড ও পুজোর সময় বাদ দিয়ে অন্যান্য দিনগুলিতে প্রতিদিন 30-35 হাজার মানুষের আনাগোনা ছিল
- শনি ও রবিবার দিন প্রতি মানুষ হত 42-45 হাজার