পটনা, 12 জুলাই : বঙ্গভোটের পর থেকে জাতীয় রাজনীতিতে আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে তৃণমূল । 2024 সালের লোকসভা ভোটেও যে তার প্রভাব পড়বে, তা ইতিমধ্যেই আন্দাজ করতে শুরু করে দিয়েছেন অনেকে । আর এরই মধ্যে নতুন করে জলঘোলা শুরু হয়েছে আরও এক দলবদল নিয়ে । কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা শত্রুঘ্ন সিনহা নাকি এবার তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন । সূত্রের খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শত্রুঘ্নর ঘাসফুলে নাম লেখাতে আর বেশি দেরি নেই ।
যদিও কিছুদিন আগেই একটি টুইট করেছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা । সেই টুইটে নরেন্দ্র মোদির প্রতি বেশ প্রচ্ছন্ন সমর্থনও দেখা গিয়েছিল বলে মনে করছিলেন অনেকে । সেই থেকেই চর্চা শুরু হয়েছিল শত্রুঘ্নর পুরানো দল বিজেপিতে ফেরা নিয়ে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস নেতার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে যা খবর, তাতে ঘর ওয়াপসি করছেন না তিনি । বরং তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক গতি হতে চলেছে কালীঘাটমুখী ।
তবে তৃণমূলে আসার বিষয়টি নিয়ে এখনই খোলসা করে কিছু বলতে চাইছেন শত্রুঘ্ন । কিন্তু তাঁর মন্তব্য যথেষ্টই ইঙ্গিতপূর্ণ । বলছেন, রাজনীতিতে সবই সম্ভাবনাময় । শত্রুঘ্নের ঘনিষ্ঠরা ও অনুগামীরাও কিন্তু তাঁর মমতা-শিবিরে নাম লেখানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না । এমনকি কলকাতার বেশ কিছু তৃণমূল নেতাও বলছেন, এই বিষয়ে নাকি ইতিমধ্যেই নাকি অনেক দূর পর্যন্ত কথাবার্তা এগিয়েও গিয়েছে । কালীঘাট সূত্র খবর, তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে শত্রুঘ্নর ব্যক্তিগত সম্পর্কও বেশ ভাল ।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সভাতেই জোড়াফুলের পতাকা হাতে তুলে নিতে পারেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা । বিহারী বাবু শত্রুঘ্নর মুখে পূর্বে একাধিকবার মমতার প্রশংসা শোনা গিয়েছে । কখনও বাংলার সত্যিকারের বাঘিনী বলে সম্বোধন করেছেন । আবার কখনও "প্রোপাগান্ডা এবং কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের "বিপুল অর্থশক্তির" বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ে মুগ্ধ হয়েছেন । অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন শত্রুঘ্ন । ওই মন্ত্রিসভারই আরও একজন সদস্য আজ তৃণমূলে । যশোবন্ত সিনহা । এখন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি ।
শত্রুঘ্ন সিনহা বিহারের পটনা সাহিব থেকে দু'বার বিজেপির টিকিটে সাংসদ হয়েছেন । এরপর কংগ্রেসে এসে 2019 সালের লোকসভা ভোটে আবারও ওই আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । কিন্তু রবিশঙ্কর প্রসাদের কাছে পরাজিত হন । ব্যাস... ওই ভোটে লড়াটুকুই । জাতীয় রাজনীতি যথেষ্ট বড় নাম হলেও কংগ্রেসে তাঁকে সেভাবে কোনও গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলেও নাকি তিনি একাধিক ঘনিষ্ঠ-মহলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন । কংগ্রেসে যখন এইরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন শত্রুঘ্ন, তখন 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে তৃণমূল কংগ্রেস । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাংলার বাইরেও এবার বিজেপিকে যথেষ্ট চাপে ফেলতে চলেছেন তিনি । সেদিক থেকে দেখতে গেলে যশোবন্ত সিনহা, শত্রুঘ্ন সিনহার মতো নেতারা বাংলা বাইরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ।
আরও একটি সমীকরণ রয়েছে । দীনেশ ত্রিবেদী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়া এবং মানস ভুঁইঞার বিধানসভা ভোটে জিতে মমতার মন্ত্রিসভায় ঢুকে পড়ায়, এই মুহূর্তে রাজ্যসভায় তৃণমূলের দুটি আসন খালি পড়ে রয়েছে । সেদিক থেকে দেখতে গেলে তৃণমূল শত্রুঘ্ন সিনহাকে রাজ্যসভাতেও পাঠাতে পারে বলে অনুমান করছেন অনেকে ।