কলকাতা, 13 জানুয়ারি : ATM-এ টাকা তুলতে গেছিলেন । আর ফেরেননি । শেষমেশ চারদিন পর বাড়িতে ফিরল মৃতদেহ । টাকা তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদার স্বপন হাজরা । শোকে ভেঙে পড়েছে পরিবার । তবে কোথাও যেন অন্যদের মাঝে আজও বেঁচে আছেন স্বপন । তাঁর হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে অন্যদের শরীরে ।
দুর্ঘটনায় মৃত্যু, অঙ্গদানের মাধ্যমে অন্যের শরীরে বেঁচে থাকল মারিশদার যুবক - অঙ্গদানের মাধ্যমে অন্যের শরীরে বেঁচে থাকল মারিশদার যুবক
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন মারিশদার বাসিন্দা স্বপন হাজরা। শনিবার চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, ব্রেনডেথ হয়েছে তাঁর। এরপর পরিবারের তরফে সিদ্ধান্ত হয় অঙ্গদানের। ইতিমধ্যে স্বপনের দুই কিডনি এবং হৃৎপিন্ড SSKM হাসপাতালের তিন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছে । মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।
![দুর্ঘটনায় মৃত্যু, অঙ্গদানের মাধ্যমে অন্যের শরীরে বেঁচে থাকল মারিশদার যুবক ছবি](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/768-512-5698057-thumbnail-3x2-hh.jpg)
মারিশদার বাসিন্দা স্বপন হাজরা (৪৫) । পেশায় রাজমিস্ত্রি । বাড়িতে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে । বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে বাড়ি থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরের একটি ATM-এ টাকা তুলতে গেছিলেন । ফেরার সময় পাড়ার দু'জনের সঙ্গে দেখা হয় । বাইকে করে ফিরছিলেন তাঁরা । সেই বাইকে চেপে বাড়ি ফেরেন স্বপন । কিন্তু মাঝপথে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন । হেলমেট ছিল না মাথায় । প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । পরে সেখান থেকে রেফার করা হয় SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে । শনিবার চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, স্বপ্ননের ব্রেনডেথ হয়ে গেছে । বাঁচানো অসম্ভব । এরপর দাদার অঙ্গাদানের সিদ্ধান্ত নেন ভাই সুরজিৎ হাজরা । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, স্বপনের দুই কিডনি এবং হৃৎপিন্ড SSKM হাসপাতালের তিন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছে । এই তিন অঙ্গ গ্রহীতার শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল । অন্যদিকে, মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে ।
কলকাতায় একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন সুরজিৎ হাজরা । তিনি বলেন, দাদার ব্রেন ডেথ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে চিকিৎসকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আর কোনও চিকিৎসা আছে কি না । তারা জানান, আর কোনও চিকিৎসা নেই । এরপর আমি দাদার অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিই । আমার পরিবারও সম্মতি জানিয়েছে । এখনও পর্যন্ত দাদার মৃত্যুর কথা মাকে জানাইনি । দাদাকে তো আর ফিরে পাব না । যদি দাদার অঙ্গগুলি অন্য কোনও মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের পরে সেই মানুষের মুখে হাসি ফোটে, তাহলে দাদা বেঁচে থাকবে ।