পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ট্যাবের বিলের চাপে বাড়ছে স্কুলছুট, দাবি প্রধান শিক্ষকদের একাংশের

ট্যাব কেনা হয়েছে কি হয়েনি , তারই হিসাব চাইল সরকার ৷ সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে দেখাতে হবে ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার যথাযথ বিল ৷ আর সেই চাপেই স্কুলগুলিতে বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা ৷

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

By

Published : Mar 11, 2021, 5:21 PM IST

কলকাতা, 11 মার্চ : চলতি বছরের গোড়ার দিকে সরকার 9 লাখ পড়ুয়াকে ট্যাব দেওয়ার ঘোষণা করেছিল ৷ কিন্তু পরবর্তীকালে বাজারে 9 লাখ ট্যাব না মেলায় দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব বা স্মার্টফোন বাবদ 10 হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল ৷ এবার সেই স্মার্টফোন বা ট্যাব কেনা হয়েছে কি না তার প্রমাণ চাইল সরকার ৷ সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের যথাযথ বিল জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল স্কুল শিক্ষা দফতর ৷ কিন্তু বাধ সাধল বিল সংগ্রহ করতে গিয়ে ৷ অর্ধেক পড়ুয়াদের কাছে বিল নেই ৷ বিল জমা দেওয়ার চাপে স্কুলছুট বাড়ছে স্কুলে । অনেক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিল জমা না দিতে পেরে পরীক্ষায় বসবে না বলে জানিয়েছে ৷ এমনই দাবি করল প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস ।

পশ্চিমবঙ্গ সহ সমগ্র শিক্ষা মিশনের স্টেট প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের তরফে সব জেলার মাধ্যমিক জেলা পরিদর্শকদের দেওয়া সেই নির্দেশে বলা হয়, প্রতিটি স্কুলের প্রধানকে প্রত্যেক পড়ুয়ার থেকে ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার রসিদ তথা বিল সংগ্রহ করে জেলা পরিদর্শকদের কাছে পাঠাতে। যাতে জেলা পরিদর্শকরা 10 মার্চের মধ্যে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) স্কুল শিক্ষা দফতরে পাঠাতে পারেন। তারপরেই জেলা পরিদর্শকদের তরফে স্কুলের প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়, দফতরের দেওয়া ফরম্যাটে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দিতে। প্রতিটি জেলা থেকে এই সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য বেঁধে দেওয়া হয় সময়সীমা। প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়, সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক পড়ুয়ার কাছ থেকে আসল রসিদ জমা নিতে হবে। রসিদ সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার নামে হতে হবে। রসিদ স্মার্টফোন বা ট্যাব কেনার জন্যই হতে হবে। রসিদে অর্থের পরিমাণ 10 হাজারের কম হওয়া চলবে না। সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াকে রসিদে সাক্ষর করতে হবে।

অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের নোটিস

স্কুলের তহবিলে টাকা আসেনি। তবুও কেন স্কুলকে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে হবে? তা নিয়ে প্রথম থেকেই সোচ্চার হয়েছিল অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস। সম্প্রতি ট্যাব বা স্মার্টফোনের বিল জমা করা নিয়ে আরেকটি নির্দেশ আসে রাজ্যের স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের কাছে। যে সকল প্রধান শিক্ষকরা এখনও ট্যাব বা স্মার্টফোনের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেয়নি তাঁদের দ্রুত তা জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশের পর আবারও সোচ্চার হয়েছে প্রধান শিক্ষকদের ওই সংগঠনটি। তাঁদের সরব হওয়ার পিছনে যুক্তি, বিল জমা করার চাপে স্কুলে স্কুলছুট বাড়ছে, অনেক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিল জমা করতে না পেরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না বলে জানাচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রধান শিক্ষকদের তরফে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার নির্দেশ বাতিল করার দাবি তোলা হয়েছে।

ট্যাব কেনার বিল দেখতে চাওয়ার নোটিস

আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনায় সল্টলেকে যজ্ঞ

অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি বলেন, "অনেক আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়া জানিয়েছে, তাঁদের বাবা-মা ওই অর্থ দিয়ে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মেরামতে বা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করে ফেলেছে। মানবিক দিক থেকে প্রধান শিক্ষকদের ভূমিকা কী এখানে? আবার প্রধান শিক্ষকদের চাপে অনেকে স্কুলছুট হয়ে গেছে। এর দায় কে নেবে? কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? বিল, ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট না স্কুলছুট।অনেক পড়ুয়া জানিয়েছে যে তারা বিল জমা না দিতে পেরে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না বলে পরিকল্পনা করেছে। পরীক্ষার আগে কি এই বিল চাওয়া সার্থক? এটা কি শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে না অভিশাপ? কে দায়ী হবে যদি এরা শিক্ষার জগত থেকে দূরে সরে যায়?"

এই আশঙ্কাগুলির পাশাপাশি ট্যাবের জন্য ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট চাওয়ার বিরুদ্ধে আরও বহু যুক্তি দিচ্ছে প্রধান শিক্ষকদের ওই সংগঠনটি । যেমন, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলির জন্য দেওয়া অর্থ ব্যবহারের প্রমাণপত্র চাওয়া হয় না । তাহলে এক্ষেত্রে কেন চাওয়া হচ্ছে? আবার কেন ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার আসল বিল জমা করতে হবে? জমা করার পর ওই যন্ত্রে সমস্যা দেখা দিলে সার্ভিসিং কী করে করানো হবে? অভিভাবক ও পড়ুয়াদের থেকে এই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষকদের । অন্যদিকে, নকল বিল তৈরি করে জমা দেওয়া হচ্ছে বহু স্কুলে । সেই বিল যাচাই করার দায় কেন প্রধান শিক্ষকদের বহন করতে হবে? এই ধরনের একাধিক সমস্যাগুলি ইতিমধ্যেই স্কুল শিক্ষা দফতরের নজরে আনার চেষ্টা করেছে ওই সংগঠনটি ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details