প্রিয় শীত,
ছেলেবেলায় লেপের ওম ছেড়ে ছুট্টে আমগাছের নীচে দৌড়ে যেতাম ভাইবোনের সঙ্গে কম্পিটিশন করে, তখন তোর সঙ্গে দেখা হত ! ঘনঘোর কুজ্ঝটি কুয়াশার নীচে তুই তখন ছোট-ছোট আমগুলোকে অন্ধকারে লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতিস ৷ যাতে আমি না আমগুলো খুঁজে পাই ! আসলে ভাইবোনদের মধ্যে আমি ঢের-ঢের ভ্যাবলা ছিলাম ৷ ভাইবোনেরা ঘোষণা করত তাদের পকেটে ক'টা করে আম ভরে উঠেছে, তার সমৃদ্ধ পরিসংখ্যান ৷ আর আমি কী বোকার হদ্দ, তখন কুয়াশার ভিতর তোকে খুঁজতাম ৷
মিথ্যে বলব না ! তোকে ঠিক দেখতে পেতাম ! তুই দাঁড়িয়ে আছিস, আমাদের উত্তর পাড়ার সেই যাযাবর পাখিশিকারি দলের নাচনেওয়ালি কিশোরীর অলকার মতো ৷ নাকে তোর হাট থেকে কেনা নথটা অত আন্ধারেও ঝিকমিক করে উঠত ! তোদের রান্না করা মাটির উনুন থেকে লক্ষ্মীপ্রতিমার মতো সরু আঙুল ঘষে তুলে আনা কালি লেপটে দু'চোখে পরেছিস ৷ ও মা ! কাজল পরতে হবে না ? তোর চোখের কাজলরেখা আমি স্পষ্ট দেখতে পেতাম কুয়াশার দমকা ঝলকানিতে ৷ আর ছেঁড়া ফ্রকের উপর একটা ময়লা গামছা বুকের উপর বিছিয়ে, তুই যেমন করে আড়াল করতিস দিনেরবেলা তোর দুটো না-ফোটা শ্বেত আকন্দ ফুলের কুঁড়ি, কুয়াশায়ও অমন করতিস কেন ? ইস, আমিই লজ্জায়, সত্যি বলছি মরে যেতাম ৷
আরও পড়ুন:প্রিয় কাশ্মীর ... ভূস্বর্গকে 'শীতের চিঠি' ভাস্বরের
ভাইবোনদের আমকুড়নোর সদর্প আহ্লাদের পিছনে চুপিচুপি খালি হাতে দুর্বা ঘাসের মাথায় জড়ানো কুয়াশা মেখে ঘরে ফিরে আসতাম ৷ মা ঠিক জানত, আমি একটাও আম কুড়োতে পারব না ৷ তবু জিজ্ঞেস করত, "বড়খোকা, তুই ক'টা আম পেয়েছিস ?" আমি ঘাড় নাড়তাম, "একটাও না ৷"