কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর: দিল্লি যাওয়ার বিশেষ ট্রেনের অনুমতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করল রেল ! আগামিকাল অর্থাৎ শনিবার বিশেষ ট্রেনে করে দিল্লি যাওয়ার কর্মসূচি ছিল তৃণমূলের ৷ সেখানে দুই দিনের ধরনা অবস্থান কর্মসূচিও রয়েছে দলের ৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোচের অভাব দেখিয়ে তৃণমূলের আবেদন খারিজ করে দিল রেল ৷ আর যার জেরে ফের একবার বিজেপিকে নিশানা করেছে তৃণমূল ৷ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় টুইট করে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন ৷
তৃণমূলের মনরেগা এক্সপ্রেস কি তাহলে শনিবার থমকে দাঁড়াল ? শুক্রবার পূর্ব রেলের তরফ থেকে চিঠিতে জানান হয়েছে 30 তারিখ যে ট্রেনের আবেদন করা হয়েছিল তৃণমূলের তরফে তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত কোচ রেলের হাতে নেই। এই চিঠি প্রকাশিত হওয়ার পরই সোশাল মিডিয়ায় দলের পেজ থেকে দাবি করা হয়, 'আবারও আমাদের থামানোর আরেকটি মর্মান্তিক প্রচেষ্টা ! পূর্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ 100 দিনের কাজে বঞ্চিত এবং আবাস যোজনার সুবিধাভোগীদের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বিশেষ ট্রেনের আমাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। যাইহোক, তাদের ছলচাতুরী, কৌশল বাংলার ন্যায্য পাওনা সুরক্ষিত করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিকে বাধা দিতে পারবে না ৷'
একই সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, "ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের এই লড়াই ৷ যে কোনও পরিস্থিতিতে দিল্লিতে পৌঁছব। যতই আটকানোর চেষ্টা করে নাও, আমরা দৃঢ় অবস্থানে রয়েছি ৷ কোনও অবস্তানেই মাথা ঝোকাব না ৷" যদিও এহেন বিবৃতির পরই এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের হাওড়া সদর সভাপতি কৈলাশ মিশ্র অভিযোগ করে বলেন, "ওরা বুকিং নিয়েছে, টাকা জমা নিয়েছে। ওরা ভয় পেয়েছে তাই এটা করছে। যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনে রেল ট্রেন দেয় শুধু তৃণমূলকে দেবে না। সমস্ত নিয়ম মেনে বুকিং করা হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে এর থেকে পরিষ্কার এর মানে কী ? অভিষেকের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। সমাবেশ হবেই, অভিষেক থাকবে ওই সমাবেশে। বাংলার মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে আসব।"
যদিও এর পেছনে বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও হাত নেই বলে পালটা দাবি করে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই বলেন, "ট্রেন বুক করার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। আমরাও যখন বিরোধী ছিলাম আমরাও ট্রেন বুক করেছি। কিন্তু পদ্ধতি মেনে যদি ট্রেন না বুকিং হয় তাহলে পাওয়া যায় না। যদিও কেন ট্রেন দেওয়া হচ্ছে না তার প্রকৃত কারণ রেল বলতে পারবে। আর অভিষেকের বিরুদ্ধে ইডি আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে। এতে বিজেপির কোনও হাত নেই।"
যদিও ট্রেন না দেওয়ার বিষয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জন সংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র এদিন বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রেলের কাছে সরাসরি কোনও আবেদন আসেনি। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আইআরসিটিসির গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজারকে জানান হয়েছিল রেক পাওয়া যাবে কি না। তারা আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল ৷ তৃণমুল কংগ্রেস দলের থেকে কোনও চিঠি সরাসরি আমাদের কাছে অর্থাৎ রেলের কাছে আসেনি।"
যদিও রেলের রেক না দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর আগামী মাসের 3 তারিখে দিল্লিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পাওয়া বকেয়া অর্থের দাবি নিয়ে দিল্লির যন্তরমন্তরে ধরনা কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল তার কী হবে তাই নিয়ে এখনও কোনও বক্তব্য জানায়নি শাসক দল।
আরও পড়ুন: 'আত্মবিশ্বাসের অভাব', সিবিআই আধিকারিককে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-সহ রাজ্যের সব মামলা থেকে সরাল হাইকোর্ট
কর্মসূচি অনুযায়ী এই রাজ্য থেকে দলীয় বিধায়ক, সাংসদ-সহ সব জেলার নির্দিষ্ট সংখ্যায় দলীয় কর্মীরা ওই ধরনায় অংশ নেবেন বলেই দলীয় সূত্রে জানান হয়েছিল। সেই মতো 30 তারিখ হাওড়া থেকে দিল্লি রওনা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল শাসক দলের। আর তার আগে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কলকাতায় এসে পৌঁছেছে কয়েক হাজার শ্রমজীবী মানুষ। দলের তরফে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। এদিন দুপুরে তাদের সমস্ত ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম ঘুরে দেখলেন রাজ্যের শিল্প এবং নারী শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। স্বভাবতই এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই, তাহলে কি শাসক দলের ৩ তারিখের ধরনার কর্মসূচি অনিশ্চিত। বাড়ছে জট।