কলকাতা, 6 অক্টোবর: কলকাতার দুর্গাপুজো 2021 সালের ডিসেম্বর মাসে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল হেরিটেজের তরফে স্বীকৃতি পায়। এই বছর দুর্গাপুজোর সেই স্বীকৃতিকে উদযাপন করছে কলকাতার আর এক হেরিটেজ। ট্রাম। আজ থেকে 150 বছর আগে দেশের মধ্যে শহর কলকাতায় প্রথমবার যাত্রা শুরু করে ট্রাম। তাই একদিকে কলকাতার দুর্গাপুজোর ইউনেস্কো স্বীকৃতি অন্যদিকে ট্রামের 150 বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শুক্রবার একটি গোটা ট্রামকে সাজিয়ে তোলা হয় দুর্গাপুজোর থিমে।
ট্রামের বাইরে নানা নকশা-আলপনা ডব্লিউবিটিসি (WBTC) চেয়ারম্যান মদন মিত্র জানান যে, ট্রাম আসলে দু'টি ইতিহাসের মেলবন্ধন ৷ একটি হল কলকাতার দুর্গাপুজোর ইউনেস্কো হেরিটেজ তকমা আর একটি হল কলকাতার অতি পরিচিত এবং প্রাচীন গণপরিবহনগুলির মধ্যে একটি ট্রামের সার্ধ শতবর্ষ পূর্তি।
যাত্রীরা দেখলেই চমকে যাবে ডব্লিউবিটিসি (WBTC) ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেনভির সিংকাপুর বলেন যে এই ট্রামটিকে এমনভাবেই সাজানো হয়েছে তাতে যাতে কলকাতার আবেগ বজায় এবং ট্রামের নিজের ঐতিহ্য সঙ্গে বাঙালির সবথেকে বড় পার্বণ দুর্গাপুজোকে একাত্ম করা যায়।"
ট্রামের ভিতর অবাক করা সাজ এদিন সুসজ্জিত ট্রামটির উদ্বোধন করেন ডব্লিউবিটিসি চেয়ারম্যান মদন মিত্র। উপস্থিত ছিলেন ডব্লিউবিডিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজন বীর সিংঙ্কাপুর। উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায় এবং সোহিনী সরকার। শুধু যে ট্রামের কামরার বাইরের দিকই নানান আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে তেমনটা নয় ৷ ট্রামটি ভিতরের সাজ দেখলে তাক লেগে যাবে সকলের। ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন এবং এশিয়ান পেইন্ট-সহ আরও একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
ট্রামের যাত্রী আবির-সোহিনী ট্রামটির 'পুজো স্পেশাল' নাম দেওয়া হয়েছে। কারণ এই বছর পুজোর সময় চলবে ট্রামটি। পুজোর দিনগুলিতে তো বটেই ট্রামটি ইংরিজি নতুন বছর পর্যন্ত মিলবে রাস্তায়। টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ পর্যন্ত পরিষেবা দেবে ট্রামটি। উত্তর কলকাতার মত দক্ষিণ কলকাতায় রয়েছে একাধিক জনপ্রিয় এবং বড় পুজো। ফলে যাতায়াতের পথে এই রাস্তাতেও থাকবে ট্রাম ৷ ট্রামটির বাইরের দিকে দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত কিছু স্মৃতি যেমন কাশফুল, সিঁদুর খেলা, মা দুর্গার ছবি, ধুনুচি নাচ কুমোরটুলির মৃৎশিল্প, রয়েল বেঙ্গল টাইগার থেকে শুরু করে আরও ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
ছবিগুলো এঁকেছেন কুমোরটুলির আর্টিস্ট ও মৃৎশিল্পীরা। শুধু তাই নয় আঁকাগুলির মধ্য দিয়ে বলা হয়েছে ছোট ছোট গল্প। আঁকার মধ্য দিয়ে পুরুষ ঢাকিদের পাশাপাশি যে মহিলা ঢাকিরাও এখন কোন অংশে এই শিল্পে কম নন, সেই গল্পও তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে দৃষ্টিহীন শিল্পীদের সংগ্রামের ছবিও জায়গা করে নিয়েছে এই ক্যানভাসে।
ট্রামের ভিতর অবাক করা সাজ ঠিক একই ভাবে ট্রামের ভিতরে বাঁশ এবং কঞ্চির ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রামের মেঝেতে এবং দেওয়ালে আলপনা দেওয়া হয়েছে। এমনকী, পুজো এবং বাংলা নিয়ে যে বিশেষ সংকলন রয়েছে ' পিপল অফ পূজা ' সেগুলিও এই ট্রামে পড়তে পারবেন যাত্রীরা ৷ দেওয়া থাকবে একটি কুইক রেসপন্স কোড ৷ যেটিকে নিজের স্মার্ট ফোনে স্ক্যান করে ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে লেখাগুলি। অন্যদিকে আর একটি বগিকে রাজকীয় সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রবেশ করলেই 'রয়েল' অনুভূতি মিলবে যাত্রীদের। বগিটি বিলাসবহুলভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাকে আটকে রাখার আদুরে আবদার নন্দী সিস্টার্সের! মুক্তি পেল 'নাক্কু নাকুড়, না যাও ঠাকুর'