কলকাতা, 26 জুলাই : নজরুল মঞ্চে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের রাজ্য স্তরের পর্যালোচনা বৈঠকে মেজাজ হারালেন রাজ্যের শিক্ষা সচিব মনীষ জৈন । প্রকল্পের হিসেবে একাধিক জেলার রিপোর্টে গরমিল দেখা গেছে । তা নিয়ে জেলা থেকে আসে আধিকারিকদের কাছে জবাব চান তিনি । বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও । তাঁর সামনেই হিসেবের গরমিল নিয়ে জবাব চান জেলা পরিদর্শক ও সার্কেল ইনস্পেক্টরদের কাছে । মনীষবাবু জেলা আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, কোথাও স্টুডেন্ট অতিরিক্ত ব্যাগ অর্ডার দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও পড়ুয়া সংখ্যার অনুপাতে কম ব্যাগ চাওয়া হয়েছে । এমন কেন হচ্ছে? এই গরমিলের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও । তিনি নজরুল মঞ্চে হওয়া তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে এই বিষয়টি তুলে ধরেন ।
বৈঠক চলাকালীন মনীষবাবু হুগলি জেলাকে প্রশ্ন করেন, ক্লাস সিক্সে 36 হাজার পড়ুয়া আছে । কিন্তু, টেক্সট বই চাওয়া হয়েছে 64 হাজার । কেন দ্বিগুণ বই চাওয়া হল? 63 হাজার ব্যাগের বদলে কেন 84 হাজার ব্যাগ চাওয়া হল? হাওড়া জেলা পরিদর্শককে এই প্রশ্ন করেন তিনি । সঙ্গে জানিয়ে দেন এই টাকা সরকার দেয় । কেন এত বেশি ব্যাগ লাগছে তা নিয়ে আশ্চর্য তিনি । একইভাবে নদিয়া জেলায় ক্লাস ফাইভের 68 হাজার 502 পড়ুয়া আছে বলে দাবি করেন জেলা পরিদর্শক । কিন্তু, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, পড়ুয়া 62 হাজারের কিছু বেশি রয়েছে । অথচ জুতো ও ব্যাগ চাওয়া হয়েছে 79 হাজার । কেন এত বেশি চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন শিক্ষা সচিব । পশ্চিম মেদিনীপুরে 84 হাজার ব্যাগ পাঠানো হয়েছে । কিন্তু, পড়ুয়া আছে 65 হাজার । বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ব্যাগ দেওয়া হয় না । সব খবর শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষা সচিব । উলটপুরাণ আবার দক্ষিণ 24 পরগনায় । সেখানে 1 লাখ 50 হাজার পড়ুয়া আছে । অথচ ব্যাগ চাওয়া হয়েছে মাত্র 53 হাজার । এত কম কেন ব্যাগ চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন শিক্ষা সচিব । বিভিন্ন প্রকল্পের জিনিসপত্রের গরমিল ছাড়াও নানা বিষয়ে জেলা পরিদর্শকদের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি । যেমন, জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় একটা স্কুল বন্ধ হয়ে পড়ে আছে । কেন বন্ধ তা জেলা পরিদর্শক জানেন না । কী সমস্যা রয়েছে তা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলে দেখে স্কুলটি খোলার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন মনীষবাবু ।
গরমিলের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও । প্রথমে তিনি তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষকদের সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, "এখানে কোথাও কোথাও বড্ড বেশি অনিয়ম দেখা যাচ্ছে । আগে তো প্রচুর হত । এখন আমরা নিজেরা চেষ্টা করে অনেকটা কমিয়েছি । ক্লাস ফাইভের একটা গল্প বলি । জুতো নেবেন 80 হাজার, জামাকাপড় হল 1 লাখ । এটা কী করে হয় আমি জানি না । এই আজগুবি হিসেবগুলো দিয়েই তো আগের সরকার চলেছে ।"