কলকাতা, 14 নভেম্বর:শব্দটা এখন আর কারাগার (Jail) নয়, সংশোধনাগার (Correctional Home) ! অর্থাৎ, এ এক এমন জায়গা, যেখানে দাগি অপরাধীকে সংশোধন করে সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোটাই লক্ষ্য ৷ কিন্তু, বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে, সংশোধনাগারগুলিতে নাকি আবাসিক বন্দিদের ঠিক মতো দেখাশোনা করা হয় না ! মাওবাদী বন্দিদের (Maoist Prisoner) পক্ষ থেকেও এমন অভিযোগ নতুন নয় ৷ তবে, এবার আপনাদের এমন এক ঘটনার খবর দেব, যা প্রকৃত অর্থেই সংশোধনাগারের দায়বদ্ধতাকে প্রমাণ করে ৷ সূত্রের খবর, কলকাতার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে (Presidency Correctional Home) বন্দি এক মাওবাদীর কিডনির অসুখের ব্যয়বহুল চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৷ এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে 320 বার তার ডায়ালিসিস করানো হয়েছে ! এই ঘটনা নয়া নজির তৈরি করেছে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল ৷
দুরারোগ্য কিডনির অসুখে আক্রান্ত ওই মাওবাদী বন্দির নাম বুদ্ধেশ্বর মাহাত (Buddheshwar Mahato) ৷ 2010 সালে ঝাড়গ্রামের শিলদায় ইএফআর ছাউনিতে যে হত্য়ালীলা চালানো হয়েছিল, সেই ঘটনার অন্যতম চক্রী এই বুদ্ধেশ্বর ৷ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র শিলদার প্রাণঘাতী হামলাই নয় ৷ অন্য়ান্য ঘটনাতেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল বুদ্ধেশ্বর ৷ শিলদার হামলার কয়েক দিন পরই তাকে ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার করা হয় ৷ যৌথবাহিনীর অভিযানে মেলে এই সাফল্য ৷ প্রাথমিকভাবে বুদ্ধেশ্বরের ঠাঁই হয় মেদিনীপুর সংশোধনাগারে ৷ পরে তাকে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে নিয়ে আসা হয় ৷ নিরাপত্তার কারণেই এই পদক্ষেপ করতে হয় প্রশাসনকে ৷
আরও পড়ুন:সংশোধনাগার বদলে গেল সংগ্রহশালায়, ইতিহাস সংরক্ষণের পথে পশ্চিমবঙ্গ সরকার
প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের এক আধিকারিক ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, "প্রথম দিকে বুদ্ধেশ্বরের স্বাস্থ্য বেশ ভালো ছিল ৷ কিন্তু, ক্রমে অবস্থার অবনতি হয় ৷ গত কয়েক বছরের মধ্যে তার শরীরে একাধিক সমস্যা ধরা পড়েছে ৷ এমনকী, বুদ্ধেশ্বর কিডনির অসুখেও আক্রান্ত হয়েছে ৷ তার কিডনি ঠিক মতো কাজ করছে না ৷ একটি কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গিয়েছে ৷ এর জন্যই তার নিয়মিত ডায়ালিসিস (Dialysis) দরকার ৷"
ইতিমধ্যেই কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে বুদ্ধেশ্বরের চিকিৎসা করানো হয়েছে ৷ কিন্তু, সম্প্রতি চিকিৎসকরা জানান, বুদ্ধেশ্বরকে বাঁচাতে হলে যত দ্রুত সম্ভব কিডনি প্রতিস্থাপন করা জরুরি ৷ সংশ্লিষ্ট আধিকারিক বলেন, "এক্ষেত্রে সবথেকে ভালো হয়, যদি পরিবারের কোনও সদস্য রোগীকে কিডনি দান করেন ৷ কিন্তু, আমরা যখন তার আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তাঁরা প্রথমে বুদ্ধেশ্বরকে চিনতেই অস্বীকার করেন ! পরবর্তীতে অবশ্য তাঁরা মেনে নেন যে বুদ্ধেশ্বর তাঁদের আত্মীয় ৷ কিন্তু, বুদ্ধেশ্বরের চিকিৎসা নিয়ে তাঁদের কোনও আগ্রহ নেই ৷ তাঁরা কেউই এই বিষয়ে মাথা ঘামাতে চান না ৷ আমরা বুদ্ধেশ্বরকে এভাবে ফেলে রাখতে পারি না ৷ তাই আমরা ওর জন্য একজন ডোনার খুঁজছি ৷ জানি না, সেটা আদৌ সম্ভব হবে কিনা ৷ কিন্তু, আমরা সবরকমভাবে চেষ্টা করছি ৷"
একদিন এই প্রশাসন এবং সরকারের বিরুদ্ধেই সশস্ত্র লড়াইয়ে সামিল হয়েছিল বুদ্ধেশ্বর ৷ এমনকী বিপ্লবের নামে বহু মানুষকে খুন করতেও বাধেনি তার ৷ আর এখন সেই তারই চিকিৎসা করাচ্ছে রাজ্যের সরকার ৷ মানুষের করের টাকা খরচ করা হচ্ছে তার ডায়ালিসিস ও ওষুধে ৷ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের একটি সূত্রের দাবি, এখন নাকি মাঝেমধ্যেই অনুশোচনা করে বুদ্ধেশ্বর ! 2010 সালের 15 ফেব্রুয়ারি কেন সে হাতে মারণাস্ত্র তুলে নিয়েছিল, নিজেই নিজেকে সেই প্রশ্ন করে অনুতাপ করে !