কলকাতা, 21 জানুয়ারি : বাইরের রাজ্যগুলিতে চল থাকলেও বাংলায় এই ধরনের ট্রেন্ড কিন্তু একেবারে নতুন । কোনও ধর্মগুরুর তৈরি রাজনৈতিক দল বাংলার মানুষ এর আগে সামনে থেকে দেখেননি । এবার সেই কাজটিই করে দেখালেন আব্বাস সিদ্দিকি । ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন নিজের দল । ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট । ধর্মগুরুর হাত ধরে তৈরি হলেও দলের নামকরণে কিন্তু থাকছে না কোনও ধর্মীয় সুরসুরি । বরং, দলকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে তুলে ধরা হবে । এমনটাই দাবি আব্বাস সিদ্দিকির ।
জল্পনা বেশ অনেকদিন ধরেই চলছিল । বেশ কয়েকবার দল ঘোষণার কথা বলেও যেন শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠছিল না । প্রথমে গত বছরের ডিসেম্বরে, তারপর জানুয়ারির শুরুর দিকে... দু'বার দল ঘোষণার দিন ঠিক হয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছিল আব্বাস সিদ্দিকিকে । অবশেষে আজ পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ী দল ঘোষণা করলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা । অনেকেই বলতে পারেন, ভোটের মাস দুই-তিন আগে একটা নতুন দল কতটা আর প্রভাব ফেলতে পারে ! কিন্তু রাজনীতির সমীকরণ কিন্তু অন্য হিসাব দিচ্ছে ।
ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার নতুন দল ঘোষণা নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা । বিশেষত, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং উত্তর 24 পরগনা একটি অংশের নির্বাচনে প্রক্রিয়ায় এর আগেও একাধিকবার নিয়ন্ত্রক ভূমিকায় আসতে দেখা গিয়েছে মুসলিম ভোটারদের । দক্ষিণ 24 পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু এলাকাকেও বাদ দিলে চলবে না । এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কের উপর আব্বাস সিদ্দিকির দল বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা ।
আরও পড়ুন : বিজেপির রিমোট দ্বারা পরিচালিত মিম, যেমন নাচাবে তেমন নাচবে : সিদ্দিকুল্লা
ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার সমর্থন দীর্ঘদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই ছিল । ফুরফুরা শরিফের সমর্থনের জোরেই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের একটি বড় অংশ এতদিন ঘাসফুলের ঝুলিতে গিয়েছে । মাঝে মাঝে বিক্ষুব্ধ স্বর শোনা গেলেও মমতার পাশেরই থেকেছেন আর এক পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি । কিন্তু সাম্প্রতিককালে একাধিকবার রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে নিজের উষ্মা প্রকাশ করেছেন ত্বহার ভাইপো আব্বাস সিদ্দিকি । বর্তমান শাসক দলের উপর একপ্রকার রুষ্ট হয়েই যে তিনি নতুন দলের কথা ঘোষণা করেছেন, তাও স্পষ্ট । আজ নতুন দল ঘোষণার সময় তা যেন আরও স্পষ্ট করে দেন তিনি । বললেন, তৃণমূল অনেক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখালেও কিছুই মেলেনি । আর সেই না-পাওয়া স্বপ্নগুলি পূরণের জন্যই যে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট তাও বুঝিয়ে দিলেন আব্বাস।
এখনও পর্যন্ত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে রাজ্যের প্রায় 44 টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার । এর মধ্যে রয়েছে দুই 24 পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মতো বেশ কিছু জেলার মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি । আব্বাস ঘনিষ্ঠসূত্রে খবর, তাঁর নজর রয়েছে বাংলার 74 টি আসনে । এগুলির মধ্যে 60 টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল । 6 টিতে বিজেপি এবং 8 টিতে কংগ্রেস ।
রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের উপর থাবা বসাতেই ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নিয়ে আসছেন আব্বাস সিদ্দিকি । কিছুদিন আগেই মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি রাজ্যে এসেছিলেন । বৈঠক করেছিলেন আব্বাসের সঙ্গে । রাজ্যের বিধানসভা ভোটে মিমের প্রার্থীদের দাঁড় করানোর বিষয়ে ইচ্ছাপ্রকাশও করেছিলেন ওয়েইসি ।
আরও পড়ুন : মিমকে ভোট দেওয়া মানে বিহারের মতো অবস্থা হবে : অনুব্রত মণ্ডল