কলকাতা, 1 জানুয়ারি: বিধি জারি থাকলেও মিলল না রেহাই! বায়ু থেকে শব্দদূষণ ৷ তাতে জেরবার শহর কলকাতা। বর্ষবরণের রাতে ডিজে, শব্দবাজির দাপট চলল শহরের একাধিক জায়গায়। বিশেষ করে তিলজলা, বেহালা-সহ একাধিক জায়গায় তারস্বরে বক্স বেজেছে। ঠিক তেমনই রবিবার দিনভর খাস ধর্মতলা, মেয়ো রোড এলাকায় বাইক বাহিনীর দাপট দেখা গিয়েছে অর্থাৎ বাইকগুলি সাইলেন্সর ও হর্ন ভয়ঙ্কর আওয়াজে কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। তারপরও পুলিশ প্রশাসনের তরফে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বাইক বাহিনী নিয়ন্ত্রণে, বললেন পরিবেশবিদরা (Pollution in Kolkata on New Year Celebration) ।
অন্যদিকে, শব্দদূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বায়ুদূষণ। রবিবার কলকাতার কার্যত 90 শতাংশ জনবহুল এলাকায় বাতাসের গুণমান ছিল 'ভেরি পুওর'। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী শহর কলকাতার অধিকাংশ জায়গার বাতাসের ধূলিকণার পরিমাণ 300'র গণ্ডি পেরিয়েছে। কলকাতার যে সমস্ত জনবহুল এলাকায় বায়ুদূষণ বেড়েছে, তার অধিকাংশ এলাকায় আবার পর্যটন স্থল রয়েছে। ফলে, শীতের বিকেলে কলকাতার পর্যটন স্থলগুলিতে ভ্রমণের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, এদিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকায় বিকেল পাঁচটার পরেও বাতাসে একিউআই (AQI) বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে 303। বিধাননগরে একিউআই (AQI) 314।
বিধাননগরে একিউআই (AQI) 314 আরও পড়ুন:বর্ষবরণের রাতে অনভিপ্রেত উৎপাত এড়াতে তৎপর কলকাতা পুলিশ
যাদবপুর এলাকায় বাতাসের একিউআই (AQI) 252। কলকাতা ছাড়াও হাওড়া ও আসানসোলের একাংশের বাতাসের গুণমান ভালো নয়। হাওড়া ঘুসুরিতে বসানো মেশিন বলছে, সেখানকার বাতাসের (একিউআই) AQI 335। শীতের মরশুমে ব্যাপকহারে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ায় পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের একাংশ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অ্যাজমা রোগী, বয়স্ক মানুষ, বাচ্চাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। একইসঙ্গে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা থেকে রক্ষা পেতে দিনে তিন-চারবার জল ছিটানোর উদ্যোগ নিক প্রশাসন এমনটাও চাইছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশ দফতরের উদ্যোগে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় রাস্তায় জল ছেটানো হচ্ছে। কলকাতা পৌরনিগম তদারকিতে শহরে সকাল-বিকেল 54টা গাড়িতে করে রাস্তায় জল ছেটানো হচ্ছে। তারপরও দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
বায়ুদূষণ সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শব্দদূষণ এর জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। সবুজ মঞ্চের অন্যতম সদস্য নব দত্ত বলেন, "দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ পরিবেশ মন্ত্রী ও তাঁর সরকার। 28 ডিসেম্বর বড় মুখ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন পুলিশ প্রশাসন নজরদারি চালাবে। তার কী হল? অপদার্থ পুলিশ কিছুই করেনি। কে, কখন অভিযোগ করবে তার উপর ভরসা করে পুলিশ-প্রশাসন বসে থাকবে? স্বতঃপ্রণোদিত ব্যবস্থা গ্রহণ না-করলে কিছুই হবে না তা আগেই বলছিলাম। ক্রিকেট খেলার ফাইনাল ম্যাচের রাতে দেদার বাজি ফাটল। মন্ত্রী বললেন উচ্ছ্বাস। ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনালের রাতেও একই অবস্থা। মন্ত্রী বললেন তাও আবেগ। এবারও তাই বলবেন হয়তো। পরিবেশ দফতর রেখে কী লাভ?"
আরও পড়ুন:বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে কড়া নিরাপত্তা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়িতে
রাজ্যের পরিবেশ দফতর জেলা শাসক এবং পুলিশ প্রশাসনকে বছরের শেষ এবং নববর্ষের শুরুতে শব্দদূষণ রোধে সতর্ক ও সতর্ক থাকার জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করে। রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রী মানস ভুইয়াঁ বলেন, "বর্ষবরণ উদযাপনের সময় অনুমতিযোগ্য সীমার বাইরে শব্দ বাজি যাতে ব্যবহার না-হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ডিএম, এসপি এবং কমিশনারেটদেরও বাজপাখির মতো নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও বিধি ভাঙার খেলা ও দূষণ বৃদ্ধিতে পুলিশ প্রশাসন ও পরিবেশ দফতরের গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।"