কলকাতা, 12 অগস্ট: পঞ্চায়েতী রাজ সম্মেলন থেকে জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ পাশাপাশি গত ন’বছরে কেন্দ্রে তাঁর সরকার কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করেছে, তার খতিয়ানও শনিবার তুলে ধরেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, জেলা পরিষদের প্রতিনিধিরা ক্যবিনেটের মন্ত্রীদের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় । একই সঙ্গে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে দেশজুড়ে মানুষের অনেক ভরসা রয়েছে বিজেপির উপর ৷
শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে বিজেপির ক্ষেত্রীয় পঞ্চায়েতী রাজ পরিষদ সম্মেলন হয় ৷ সেই সম্মেলনে ভার্চুয়াল ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ আর কোলাঘাটে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ একাধিক নেতা ৷ এছাড়া ছিলেন এই রাজ্যের অনেক কর্মী-সমর্থক ৷ সেখানে প্রধানমন্ত্রী পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে কাঠগড়ায় তোলেন তৃণমূল কংগ্রেসকে ৷ পাশাপাশি মণিপুর নিয়েও বিরোধীদের সমালোচনা করেন ৷ অন্যদিকে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির হয়ে যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী ৷
এ দিনের বৈঠক সম্পর্কে তিনি জানান, এই ধরনের বৈঠক খুবই প্রয়োজনীয় । এখানে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার আদানপ্রদান হবে ৷ একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, পূর্ব ভারতকে বিজেপি প্রাধান্য দিয়েছে এবং এখানকার মানুষও বিজেপির উপর আস্থা রেখেছেন । স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারত । গত 5 বছরে দেশের 13.5 কোটি লোক দারিদ্রতা থেকে উপরে উঠে আসতে পেরেছেন । এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান পূর্ব ভারতের । প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এর প্রচার দরকার । তাতে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস আরও বাড়বে ।
আরও পড়ুন:বঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রিগিংয়ের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী মোদির
বিরোধীদের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, গত 50 বছর ধরে 'গরিবী হটাও' এই স্লোগান দেওয়া লোকেরা দারিদ্রতা দূর করতে পারেনি । এটা বিজেপি সরকার করে দেখিয়েছে । গরিব মানুষের জীবনের মূল সমস্যার সমাধানের মাধ্যমেই, তা করে দেখাচ্ছে বিজেপির সরকার । কারণ, তাঁরা দরিদ্র শ্রেণি থেকেই উঠে এসেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘‘দারিদ্রতা কি আমরা জানি ৷ তাই আমরা দারিদ্র্য হটাতে পেরেছি ।’’
তিনি আরও জানান, বিজেপির সরকার দেশে 18 হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সক্ষম হয়েছে । এর মধ্যে 13 হাজার গ্রাম পূর্ব ভারতের । 2019 সালে সকলের জন্য পরিশ্রত পানীয় জলের প্রকল্প 'জল জীবন মিশন'-এর ঘোষণা করা হয়েছিল । সেই মুহূর্তে দেশের 20 শতাংশেরও কম গ্রামীণ মানুষের কাছে এই পরিষেবা যেত । আর এখন 60 শতাংশেরও বেশি গ্রামীণ মানুষের ঘরে 'জল জীবন মিশন' প্রকল্পে পরিশ্রুত পানীয় জলের সরবারহ করা হচ্ছে । মিজোরামে আগে 4 শতাংশ মানুষের ঘরে পানীয় জল পৌঁছাত ৷ সেখানে বর্তমানে 90 শতাংশের বেশি মানুষ পানীয় জল পাচ্ছেন ।
তাঁর আরও দাবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাতে বিহারে 9 বছরে 50 লক্ষের বেশি মানুষ পাকা বাড়ি পেয়েছেন । পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ না করতে দিলেও 45 লক্ষের বেশি মানুষ পাকা বাড়ি পেয়েছেন । অসমে 20 লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে । দেশজুড়ে গরিব মানুষের জন্য সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্প 100 শতাংশ বাস্তবায়িত করতেই হবে । স্বাস্থ্য পরিষেবার বিকাশের জন্য এইমস-সহ উত্তর পূর্ব ও পূর্ব ভারতে 31 হাজার মেডিক্যাল কলেজ খোলা হয়েছে । উচ্চশিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতে আইআইটি ও আইআইএম খোলা হয়েছে ।
আরও পড়ুন:দেশের মানুষ আগেই কংগ্রেসের উপর অনাস্থা দেখিয়েছেন, আক্রমণ মোদির
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতের স্থানীয় পণ্যের ক্ষেত্রে জিআই ট্যাগ খুব গুরুত্বপূর্ণ । তাই এই সব পণ্যের জিআই ট্যাগ পাওয়ানোর ক্ষেত্রে কাজ করা খুবই অবশ্যক । বৃক্ষরোপণের কাজেও গুরুত্ব দিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন ৷ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, স্বচ্ছ ভারত অভিযানকেও পঞ্চায়েত স্তরে 100 শতাংশ বাস্তবায়িত করতেই হবে । এই বছরেও 'হর ঘর তিরঙ্গা' কর্মসূচিকে যথাসম্ভব সংখ্যাধিক বাড়িতে অংশগ্রহণ করানোর দায়িত্ব নিতে হবে ।