কলকাতা ও দিল্লি, 25 জুলাই : আজ, শনিবার, রাজ্যে দ্বিতীয়বারের লকডাউন । গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে সাপ্তাহিক লকডাউনের দ্বিতীয় দিন ।
সোমবার ফের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে মোদি
কোরোনার বিরুদ্ধে সাফল্য আসেনি । মৃতের সংখ্যা বাড়ছে । লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও । এখনই প্রতিষেধক হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম বললেই চলে । স্বাভাবিকভাবেই বিকল্প পথের সন্ধান অত্যন্ত জরুরি । লকডাউন কি আরও বাড়ানো হবে ? নাকি অন্য কোনও পদক্ষেপ করা হবে ?
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় কোরোনা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত জটিল হচ্ছে দেশজুড়ে । আগামী দিনে কিভাবে এই ভয়াবহ আতঙ্কের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, লড়াইয়ের রূপরেখা কেমন হবে, সব ঠিক করতে আগামী সোমবার, 27 জুলাই, সকাল দশটায় ফের একবার সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তেলাঙ্গানা, কেরালা, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ- সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে কোরোনা আক্রমণের মারাত্মক ধাপ অর্থাৎ গোষ্ঠী সংক্রমণের খবর মিলছে । পরিস্থিতি মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার সপ্তাহে দু’দিন করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ অর্থাৎ শনিবার এই লকডাউনের দ্বিতীয় দিন । ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে প্রথম দিন লকডাউন 'সফল' করতে রাজ্য প্রশাসনের সক্রিয়তা । যেভাবে পুলিশ এবং প্রশাসনিক আধিকারিকরা কঠোরভাবে লকডাউন সফল করতে রাস্তায় নেমেছিলেন তা প্রমাণ করে শনিবারের লকডাউনেও সেই একই চিত্র দেখা যাবে । যাতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে না বের হন, একান্ত প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলেও সরকার নির্দেশিত সুরক্ষা বিধি মেনে চলেন, সে বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ । শুধু কলকাতা নয় রাজ্যের সর্বত্র দফায় দফায় মাইকে প্রচার চালানোর ছবি ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়।
কিন্তু, এই লকডাউন কি প্রকৃত সমস্যার সমাধান ? যদি লকডাউন আরও দীর্ঘদিন চালাতে হয়, তাহলে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া বা ভেঙে পড়া মানুষজন গুলোর পাশে কিভাবে দাঁড়াতে হবে তার একটাও আগাম প্রস্তুতি প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই চার মাস হতে চলল লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ। দূরপাল্লার ট্রেন চললেও সংখ্যায় খুবই কম। অধিকাংশ অফিস কাছারি অনিয়মিত। বিমান পরিষেবা অনিয়মিত। বাসের মত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম তেমনভাবে এখনও সচল নয় । গোটা দেশে একটা নির্দিষ্ট সময় দোকান খুললেও, পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক নয়।
দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন থাকায় দেশের অর্থনীতিও খাদের কিনারায়। বেকারের সংখ্যা প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে । পরিস্থিতির চাপে চাকরি হারাচ্ছেন বহু মানুষ । পারিবারিক হিংসার ঘটনা এই মুহূর্তে প্রতিটি রাজ্য সরকারের কাছে মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ । দীর্ঘদিন ধরে মানুষ গৃহবন্দী ।
এত কিছুর পরেও কোরোনার বিরুদ্ধে সাফল্য আসেনি । মৃতের সংখ্যা বাড়ছে । লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও । এখনই প্রতিষেধক হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম বললেই চলে । স্বাভাবিকভাবেই বিকল্প পথের সন্ধান অত্যন্ত জরুরি । লকডাউন কি আরও বাড়ানো হবে ? নাকি অন্য কোনও পদক্ষেপ করা হবে ? এমনই হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এখন ব্যস্ত প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্য প্রশাসন । কেন্দ্রীয় সরকার । চিকিৎসক মহল । বণিক মহল । স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী । সবাই ।
আগামী সোমবার বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফের একবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী । প্রত্যাশিতভাবেই কোরোনা-লকডাউন ইত্যাদি বিষয়গুলি বৈঠকের এক এবং একমাত্র কারণ । আনলকের দ্বিতীয় দফা শেষ হচ্ছে 31 জুলাই । তার আগে 27 জুলাই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ দেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছিল। প্রথমবার মমতা বৈঠকে যোগ দেননি । রাজ্যের কোরোনা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে । যদিও পরবর্তী সময় মমতার যোগ দিয়েছিলেন অন্য বৈঠকে । এখন দেখার সোমবারের বৈঠকে মমতা যোগদান কি না । পাশাপাশি আগামী সোমবারই পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে তাদের ল্যাব উদ্বোধন করবে ICMR। ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী । সেই অনুষ্ঠানেও সংশ্লিষ্ট তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের যোগ দেওয়ার কথা ।