কলকাতা , 14 জুন : কলকাতার অফিসের কর্মচারী থেকে শুরু করে স্কুল পড়ুয়া সহ পথচলতি সাধারণ মানুষের জন্য খুব সস্তায় টিফিন করার জায়গা হল ফুটপাথের ছোটো ছোটো খাবারের দোকানগুলি । কিন্তু লকডাউনের কারণে দোকানগুলি প্রায় আড়াই মাস বন্ধ ছিল । 8 জুনের পর থেকে সমস্ত হোটেল , রেস্তরাঁ , মলগুলি খুলে দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল । সেইমতো বড় বড় রেস্তরাঁ , হোটেলগুলি খোলার পাশাপাশি শহরের ফুটপাথের ছোটো ছোটো দোকানগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু লকডাউনের পর খুলে দেওয়া হলেও কেমন চলছে এই দোকানগুলি ? বিক্রেতাদের একটাই বক্তব্য যে সংক্রমণের ভয়ে কোনও খদ্দের আসছে না । যে কয়েকজন আসছে তাও হাতে গোনা । ফলে ব্যবসা প্রায় বন্ধ হতে চলেছে ।
শহরে উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে এই ধরনের প্রচুর খাবারের দোকান রয়েছে । প্রায় 38 হাজার 838 টি দোকান রেজিস্ট্রার করা আছে । এছাড়া এরকম আরও দোকান রয়েছে যেগুলি রেজিস্ট্রার করা নেই । এই দোকানগুলিতে আগে সকাল থেকে ভিড় জমে যেত । কিন্তু এখন সেই চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে । লম্বা লাইন থাকা ফুটের দোকানগুলিতে এখন ক্রেতা শূন্য হাহাকার অবস্থা । দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়া দুরস্ত , সংক্রামকের ভয়ে ফুটের দোকানগুলি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলছেন পথচলতি সাধারণ মানুষেরা । ফলে চরম হতাশ বিক্রেতারা ।
অন্য সময় সকাল থেকেই এইসব দোকানগুলিতে শুরু হয়ে যায় কর্মব্যস্ততা । কোথাও গরম গরম কচুরি , পরোটা কোথাও আবার চাইনিজ় খাবার , কোথাও বা সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার । অফিস যাত্রী থেকে স্কুল পড়ুয়াদের ভিড়ে সবসময় দোকানগুলি মুখর হয়ে থাকত । শুধু সকাল নয় , দুপুরবেলা অফিস পাড়ায় ফুটপাথের দোকানগুলির বিক্রেতাদের নিশ্বাস ফেলার সময় থাকে না । অনেক জায়গায় রাত পর্যন্ত চলে এই কর্মযজ্ঞ । কিন্তু লকডাউনের জেরে আড়াইমাসের উপর সব কিছু বন্ধ । 8 জুন রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে অনেক আশা নিয়ে দোকান খুললেও আগের মতো খদ্দেরের দেখা মিলল না । খাবার তৈরি করে রেখেও বিক্রি হল না । সংক্রমণের ভয়ে যে মানুষ খাবার খাচ্ছে না , এই আসল সত্যটা উপলব্ধি করতে পেরেছে ফুটের এই ছোটো হোটেলগুলির ব্যবসায়ীরা । তাঁদের বক্তব্য , কোরোনা সংক্রামক অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ভীতি এনে দিয়েছে । সেই কারণেই সংক্রামকের ভয়ে ফুটপাথের হোটেলগুলিতে পা বাড়াচ্ছেন না সাধারণ মানুষ । ফলে মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্য প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা খাবারের দোকান খোলার নির্দেশ দিলেও ক্রেতার অভাবে একদম প্রথম দিন থেকেই অবস্থা শোচনীয় । এভাবে চলতে থাকলে ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হবেন তাঁরা ।
8 জুন অনেক আশা নিয়ে দোকান খুলেছিলেন বাপ্পা পাত্র , রামু সোম , বিপ্লব দাসেরা । হাজরা রোডে ফুটপাতের উপর তাঁদের ছোটো ছোটো দোকান । কেউ কচুরি বিক্রি করেন , কেউ বা আবার ধোসা । আগে তাঁদের দোকান রমরমিয়ে চলত । ক্রেতাদের ভিড় থাকত । কিন্তু কোরোনা ভাইরাস ও লকডাউনের কারণে কেমন চলছে দোকানগুলি ? এবিষয়ে , বিক্রেতা বাপ্পা পাত্র বললেন , " পরিস্থিতি খুব খারাপ । আগে 20-25 কেজি ময়দা মাখতে হত । সব মিলিয়ে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা বিক্রি হত । তার মধ্যে লাভ হত 700-800 টাকা মতো । আর এখন বিক্রি না হওয়ার ফলে প্রতিদিন 700-800 টাকার বদলে 80-90 টাকা নিয়ে যাচ্ছি । সংক্রমণের ভয়ে কেউ দোকানে আসছে না । আমার বাড়িতে অসুস্থ মা আছে । আমার উপর বাড়ির দায়িত্ব । এরকমভাবে চলতে থাকলে কী যে হবে জানি না । "