কলকাতা, 3 ডিসেম্বর : রোগীর পথ্য হিসাবে হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয়, তা বিক্রি হচ্ছে । এমন অভিযোগের জেরে এবার বিশদে তদন্ত করবে স্বাস্থ্যভবন । তার জন্য প্রক্রিয়া চলছে । ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আগামী দিনে প্রয়োজনে গাইডলাইন তৈরি হতে পারে । এদিকে, রোগীর খাবার বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের রিপোর্ট গতকাল বিকালে স্বাস্থ্যভবনে জমা দিয়েছে রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমলোজি (RIO)-র কর্তৃপক্ষ । এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মীও চাওয়া হয়েছে । বাড়ানো হচ্ছে নজরদারি । এমন ঘটনার সম্মুখীন যাতে হতে না হয়, তার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
রোগীর খাবার বিক্রি? বিশদে তদন্ত করবে স্বাস্থ্যভবন, বাড়ছে নজরদারি - State health depertment
কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অন্তর্গত RIO-তে অভিযোগ উঠেছে, রোগীর পথ্য হিসাবে হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয়, সামান্য টাকার বিনিময়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে । কিচেনকর্মীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয় । এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মীও চাওয়া হয়েছে । বাড়ানো হচ্ছে নজরদারিও ।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অন্তর্গত RIO-তে অভিযোগ উঠেছে, রোগীর পথ্য হিসাবে হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয়, সামান্য টাকার বিনিময়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে । কিচেনকর্মীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে । শনিবার RIO-র কর্তৃপক্ষের কাছে এক রোগীর পরিজন মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন । খাবার বিক্রি হওয়ার একটি ভিডিয়ো তিনি দেখিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে । এমন অভিযোগের জেরে গতকাল তদন্ত করে তার রিপোর্ট স্বাস্থ্যভবনে জমা দিয়েছে RIO কর্তৃপক্ষ । এই বিষয়ে RIO-র অধিকর্তা অসীমকুমার ঘোষ বলেন, "রোগীর খাবার বিক্রি করার অভিযোগে আমরা তদন্ত করে স্বাস্থ্যভবনে রিপোর্ট জমা দিয়েছি ।" কিচেনের যে কর্মীর বিরুদ্ধে খাবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি বাদ দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে । তদন্তের এই রিপোর্টে কী জানানো হয়েছে? সূত্রের খবর, হাসপাতালে ভরতি থাকা সব রোগী খাবার পেয়েছেন । উদ্বৃত্ত যে খাবার ছিল, সেই খাবার থেকে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । তদন্তের এই রিপোর্টের বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "RIO-র তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে । আরও ডিটেলসে তদন্ত হবে । তার জন্য প্রক্রিয়া চলছে । ডিটেইলস পাওয়ার পরে প্রয়োজনে গাইডলাইন দেওয়া হবে ।"
সূত্রের খবর, তদন্তের সময় RIO-তে ভরতি থাকা কোনও রোগী অভিযোগ করেননি যে তিনি খাবার পাননি । অর্থাৎ উদ্বৃত্ত খাবার বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে । এক সূত্রের কথায়, "কোনও কোনও সময় এমনও হয়, হাসপাতাল থেকে দেওয়া খাবার খেতে চান না কোনও কোনও রোগী । অস্ত্রোপচারের জন্য কোনও রোগীকে হয়তো নিয়ে যাওয়া হয়েছে অপারেশন থিয়েটারে । সেই জন্য তাঁকে তখন খাবার দেওয়া সম্ভব হয় না । এমন বিভিন্ন কারণে খাবার বেচে যায় । এমনও হয়, হাসপাতালের বাইরে খাবার খেতে বেশি টাকা খরচ হয় । এই জন্য কোনও রোগীর বাড়ির লোক হয়তো একটু ভাত-ডাল নিলেন, ১০ টাকা দিয়ে দিলেন । মানবিকতার খাতিরে হয়তো এটা ঠিক । তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এই কাজটি অন্যায় । হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে এভাবে খাবার বিক্রি করা যায় না ।" RIO-র এক চিকিৎসক বলেন, "আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, তখনও এভাবে খাবার দেওয়া হত । তবে, তখন টাকার বিষয়টি আমাদের মাথায় ছিল না । আমরা অনেক ইনোসেন্ট ছিলাম ।"
RIO-র অধিকর্তা বলেন, "এমন ঘটনা আগে কোনও দিন শুনিনি । এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন যাতে আর হতে না হয়, তার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেওয়া হবে ।" আর এই জন্য হাসপাতালের সকলের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, এভাবে যাতে খাবার বিক্রি না হয় তার জন্য নজরদারি বাড়াচ্ছে RIO-র কর্তৃপক্ষ । যে কারণে RIO-তে নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে । যখন খাবার দেওয়া হবে, তখন নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট, ওয়ার্ড সিস্টার, নিরাপত্তারক্ষীরা নজর রাখবেন । যে কিচেনকর্মীর বিরুদ্ধে খাবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে রাখা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল RIO-র কর্তৃপক্ষ । ওই কর্মীকে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি সরিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে । গতকাল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়েছে, এমন ঘটনার যেন সম্মুখীন হতে না হয় । কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (MSVP) ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, "এ ভাবে খাবার বিক্রির কোনও সুযোগ এখানে নেই । যত রোগী ভরতি রয়েছেন, সেই অনুযায়ী খাবার দেওয়া হয় । এ রকম যাতে না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।" যে কারণে, কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সিস্টার, ওয়ার্ডমাস্টারদের নজর রাখতে বলা হয়েছে ।