কলকাতা, 6 জুন : শহরের স্কুলগুলিতে বাড়ছে ফি মকুবের দাবিতে বিক্ষোভ । প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও বেসরকারি স্কুলের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন অভিভাবকরা । আজ রানিকুঠির এক নামী বেসরকারি স্কুলের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকরা ।
ফি মকুবের দাবিতে রানিকুঠির বেসরকারি স্কুলের সামনে আবার বিক্ষোভ
অন্যান্য খাতে ফি মকুবের দাবিতে স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকরা । অভিযোগ, বারবার চিঠির মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও মেলেনি কোনও উত্তর । পুলিশ এসে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করলে তাঁরা বিক্ষোভ উঠিয়ে নেন ।
সোমবারও তাঁরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন । সেইদিন কর্তৃপক্ষ কোনও আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি । তাই আজ আবারও ফি মকুবের দাবি নিয়ে পথে নামলেন ওই স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবক-অভিভাবিকারা ।
নিজেদের দাবি নিয়ে ওই স্কুলের অভিভাবক সংগঠনের তরফে সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, "আমরা 1 জুন স্কুলের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলাম । তার আগে আমরা স্কুলকে তিনটে চিঠি দিয়েছিলাম । সেই চিঠির কপি আমরা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীকেও পাঠাই । স্কুল আমাদের কোনও চিঠির কোনও উত্তর দেয়নি । আমাদের মূলত দাবি ছিল, অপ্রয়োজনীয় খাতের ফি, যেটা এখন স্কুলের খরচ হচ্ছে না, সেই ফি মুকুব করা হোক । সেশন ফি, স্কুল অ্যাক্টিভিটিস ফি-এর ক্ষেত্রে আমরা বলছিলাম, যতদিন পর্যন্ত না স্কুল খুলছে ততদিন পর্যন্ত এই ফি-এর একটা অংশ আমাদের ছাড় দিন । এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস সব অনলাইনে করানো সম্ভব নয় । সেক্ষেত্রে আমরা বলেছিলাম, ECA এই বছর অন্তত বাধ্যতামূলক না করা হোক । যাঁরা চাইছে তাঁরা নিক । বাস ভাড়ার ক্ষেত্রে আমরা বলেছিলাম, যতদিন না স্কুল খুলছে ততদিন এই ফি নেওয়া যাবে না । ল্যাবরেটরি ফি-র ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছিলাম । এইরকম যে যে ক্ষেত্রে ওরা খরচ কমাতে পারে সেগুলো পয়েন্ট আউট করে আমরা বলেছিলাম যতদিন না স্কুল খুলছে ততদিনের জন্য এগুলোয় ছাড় দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হোক ।"
পাশাপাশি স্কুল খুললে পড়ুয়াদের সুরক্ষা, নিরাপত্তায় স্কুল কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ করছে তা নিয়েও আলোচনায় বসার দাবিও জানিয়েছেন অভিভাবকরা। সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, "আমরা স্কুলের থেকে জানতে চেয়েছি, স্কুল খুললে নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । এখনও পর্যন্ত বাসে GPRS নেই, মহিলা অ্যাটেনডেন্ট নেই । এইগুলো আমরা জানতে চেয়েছি । স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আমাদের আশ্বস্ত করুক । হয়তো স্কুল কিছু করছে, আমরা জানি না । সেখানে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় অসুবিধা কোথায় । আমরা আলোচনায় বসার জন্য বলছি বারবার ।"
অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের তরফ থেকে ফি জমা করার জন্য চাপ দেওয়া তাঁদের বাচ্চাদের উপর । এই বিষয়ে সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, "হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপে ক্লাসটিচার ফি দেওয়ার জন্য বাচ্চাদের চাপ দিচ্ছেন । তার ফলে বাচ্চাদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে । ওরা এসে আমাদের কাছে জানতে চাইছে কেন আমরা ফি দিইনি । তখন ওদের বোঝাতে হচ্ছে । স্কুল এটা করে কী করতে চাইছে আমরা জানি না । ওরা অনায়াসে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে । আমাদের সবার ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি স্কুলের কাছে আছে । তা সত্ত্বেও বাচ্চাদের মাধ্যমে কেন জানানো হচ্ছে । এটা একটা বড় চিন্তার বিষয় ।"
অভিযোগ, চিঠি হোক বা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ । কোনও কিছুতেই উত্তর দিচ্ছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ । গত সোমবারও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করেই ফিরে যেতে হয়েছিল অভিভাবকদের । আজ আবারও সকাল 10টা থেকে 1টা পর্যন্ত স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা । কিন্তু আজও মিলল না উত্তর । তবে পুলিশ এসে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজনের চেষ্টা করার আশ্বাস দেয় । এরপর বিক্ষোভ উঠিয়ে নেন তাঁরা । এক সপ্তাহের মধ্যে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনও জবাব না পাওয়া গেলে আবার বৃহত্তর প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানাচ্ছেন ওই বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা ।