পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

টিউশন ছাড়া সব ফি মকুবের দাবি, কলকাতাজুড়ে অভিভাবকদের বিক্ষোভ - শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়

লকডাউনের জেরে বন্ধ স্কুল । অনেক অভিভাবকই কর্মহীন । এই পরিস্থিতিতেও বেসরকারি স্কুলগুলি টিউশন ছাড়াও অন্য সব ফি দাবি করছে বলে অভিযোগ । তার প্রতিবাদে আজ কলকাতার একাধিক বেসরকারি স্কুলে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা ৷ বেশিরভাগ অভিভাবকদের দাবি, টিউশন ফি তাঁরা দিতে পারবেন । বাকি ফি দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় ।

Agitation of parents of school children over school fees
ফি মকুবের দাবিতে অভিভাবকদের বিক্ষোভ

By

Published : Jun 20, 2020, 4:32 AM IST

কলকাতা, 19 জুন : কোরোনা ভাইরাসের কারণে চলা দীর্ঘদিনের লকডাউনে অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন সবস্তরের মানুষই । এই সময়ে তাঁরা চাইছেন একটু অব্যাহতি । জুন মাসের প্রথম দিন থেকেই একের পর এক বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকরা টিউশন ফি ছাড়া অন্যান্য সব খাতের ফি মকুবের দাবিতে সরব হয়েছেন । আজও ব্যতিক্রম নয় । এদিন কলকাতার দিকে দিকে একাধিক বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখালেন । সকালে জোকার একটি বেসরকারি স্কুলের পর টালিগঞ্জের এক বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকরা স্কুলের সামনে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখান । আবার সল্টলেকেও একটি বেসরকারি স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা । দাবি সকলের একই । তাঁদের থেকে শুধুমাত্র টিউশন ফি নেওয়া হোক ।

আজ দুপুরে সল্টলেকের বেসরকারি স্কুলের সামনে জমায়েত করেন শতাধিক অভিভাবক । তাঁরা নিজেদের দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একটি মিছিলও করেন । নিজেদের দাবি নিয়ে বিক্ষোভে সামিল এক অভিভাবক মলয় বোস বলেন,"আমাদের সবার অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ । আমাদের ফি-এর বিষয়টা যেন স্কুল বিবেচনা করে সেটাই আমাদের দাবি । স্কুলের সঙ্গে যখন কথা বলছি তখন স্কুলে লোকেরা বলছে তাঁরা ফি কমাতে পারবে না । কারণ, শিক্ষকদের মাইনে দিতে হবে । তাহলে কি যে পুরো ফি কাঠামোটা আছে সেটা শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার জন্যই? তাহলে এতদিন যে বিভিন্ন খাতে স্কুল ফি নিত সেটা মিথ্যে? এটা একটা প্রতারণা ছাড়া কী? তাহলে আমাদের যে ব্রেক-আপটা দেওয়া হয় সেটা কেন দেওয়া হয়? আমরা চাইছি শুধুমাত্র যেটা টিউশন ফি শুধুমাত্র সেটাই আমাদের থেকে নেওয়া হোক । যেটা টিউশন ফি নয়, এখন ব্যবহার হচ্ছে না, যেমন, ডেভলপমেন্ট, কম্পিউটার, স্পোর্টস, ট্রান্সপোর্ট কিছুই ব্যবহার হচ্ছে না । সেই ফি কেন নেওয়া হবে? আমাদের দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের আলোচনায় বসতে চাই । এই বছর আমাদের সমস্যা । পরের বছর যদি স্কুল ডেভলপমেন্টের জন্য টাকা চাই তাহলে আমরা চাঁদা তুলে অতিরিক্ত টাকা দেব । এই বছরটা তো রেয়াত করা হোক।"

ফি মকুবের দাবিতে অভিভাবকদের বিক্ষোভ

নিজেদের দাবি নিয়ে অভিভাবকরা প্ল্যাকার্ড হাতে স্কুলের সামনে জমায়েত করে স্লোগান দিতে থাকেন । তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার দাবি জানান । কিন্তু, অভিভাবকদের বহু অনুরোধ, আবেদন সত্ত্বেও প্রথমে স্কুল কর্তৃপক্ষ দরজা খোলেননি । তারপরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে স্কুলের তরফ থেকে খবর দেওয়া হয় বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশকে । পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় স্কুলের দরজা খুলে দেওয়া হয় । কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছেন অভিভাবকরা । তাঁরা জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ আগামী সোমবার গভর্নিং বডির বৈঠক করবে এবং যাদের সত্যি টিউশন ফি দেওয়ার ক্ষমতা নেই তাদের সেল্ফ ডিক্লারেশন দিতে হবে বলেও বলা হয়েছে স্কুলের তরফে ।

অন্যদিকে, আজ আবারও টালিগঞ্জের এক বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকরা স্কুলের সামনে জমায়েত করেন । 14 দিন আগে তাঁরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ ও পথ অবরোধ করেছিলেন । তাঁদেরও দাবি এক, টিউশন ফি ছাড়া অন্য অযৌক্তিক ফি মকুব করতে হবে । 14 দিন আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের বলেছিলেন আজ সকালে আসতে । সেই অনুযায়ী, আজ সকালেই স্কুলের সামনে জমায়েত করেন অভিভাবকরা । কিন্তু, স্কুলের তরফ থেকে তাঁদের জানানো হয় প্রিন্সিপাল আসেননি । তিনি দুপুর আড়াইটার সময় আসবেন । ততক্ষণ পর্যন্ত স্কুলের বাইরেই জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা । দুপুরে কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসলেও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলেই জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

টালিগঞ্জের ওই স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, "আমরা চাইছি টিউশন ফি ছাড়া বাকি অন্যান্য ফি মকুব করা হোক । স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা মানতে চাইছেন না । ওনারা বলছেন মান্থলি ফিতে 20 শতাংশ ছাড় দেবেন । তাতে 500 টাকার মতো কম হচ্ছে । আমরা যদি 2 হাজার টাকা দিতে পারি তাহলে 500 টাকাও দিতে পারব । কর্তৃপক্ষ বলেছে, যাঁরা টিউশন ফি ছাড়া অন্য ফি দিতে পারবেন না তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করতে । তাঁরা যাচাই করে দেখবেন সত্যিই তাঁরা ফি দিতে অক্ষম কি না । কিন্তু, কীভাবে যাচাই করবে স্কুল?"

কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় সন্তুষ্ট না হয়ে আলোচনা শেষে স্কুলের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন অভিভাবক । বেশ কিছুক্ষণ অবরোধ চলার পর পুলিশের আবেদনে অবরোধ তুলে আজকের মতো চলে যান তাঁরা । তবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অরূপ বিশ্বাসের কাছেও নিজেদের দাবি জানিয়ে চিঠি দেবেন বলে জানান অভিভাবকরা ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details