পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Panchayat Elections 2023: ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে এবার বেড়েছে বিরোধীদের উপস্থিতি, ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত বাম-কংগ্রেসের - সিপিএম

এবার গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তবে 2018 সালের চেয়ে বেড়েছে বিরোধীদের উপস্থিতি ৷ ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে বাম-কংগ্রেসও ৷ ফলে 2024 সালের ভোট একেবারে অন্যরকম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷

Panchayat Elections 2023
Panchayat Elections 2023

By

Published : Jul 12, 2023, 8:25 PM IST

কলকাতা, 12 জুলাই: পঞ্চায়েত নির্বাচনে 2013 ও 2018 সালের মতো এবারও রাজ্যজুড়ে সবুজঝড় দেখা গিয়েছে ৷ তবে বিরোধীরা এবার 2018 সালের তুলনায় গ্রামীণ বাংলায় শাসন করার এই ত্রিস্তর ব্যবস্থায় নিজেদের উপস্থিতি অনেকটাই বৃদ্ধি করতে পেরেছে ৷

সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, 2018 সালে 34 শতাংশ আসন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ কিন্তু এবার সেই সংখ্যাটা ছিল সামান্য ৷ ফলে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে রাজ্যজুড়ে শাসক ও বিরোধীদের কড়া টক্কর হয়েছে ৷ সেই লড়াইয়ের জেরে যে ফলাফল সামনে এসেছে, তা বোঝাচ্ছে যে 2024 সালের লোকসভা নির্বাচন শাসক ও তাদের প্রধান বিরোধীদের জন্য অন্যরকম হতে চলেছে ৷

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও থিংক ট্যাংক কলকাতা রিসার্চ গ্রুপের উপদেষ্টা রজত রায় সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে বলেন, ‘‘যদিও বিরোধীরা গতবার গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মাত্র 20 শতাংশ পেতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু এইবার তারা এখনও পর্যন্ত প্রায় 27-28 শতাংশ আসন দখল করেছে ৷"

আরও পড়ুন:'আমাকে গালাগাল দেবেন, আমি নৈবেদ্য সাজিয়ে দেব হতে পারে না'; দিল্লির কংগ্রেসকে বার্তা মমতার

এর পর তাঁর সংযোজন, “এবারের হিংসাও আগের বছরগুলোর মতো একতরফা ছিল না । সমস্ত দল এই ধরনের অনৈতিক কাজে যুক্ত ছিল এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণও করেছে ৷ প্রকৃতপক্ষে, শাসক দলের কর্মীদের বেশি মৃত্যু হয়েছে ৷ যেকোনও মৃত্যু নিন্দনীয় হলেও, হিংসার ধরন পরিবর্তিত হয়েছে এবং এটা বাস্তব পরিস্থিতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করেছে ।”

বিজেপি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় 10 হাজার আসনে জিতেছে ৷ বাম ও কংগ্রেস মিলে প্রায় 6 হাজার আসন জিতেছে । 2018 সালে সিপিএম ও কংগ্রেস একসঙ্গে দেড় হাজার আসন জিতেছিল ৷ বিজেপি সেবার 48,650টি আসনে লড়াই করেছিল ৷ জিতেছিল 5,800 আসনে ৷

বামেদের বক্তব্য, তারা ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ৷ বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হুগলি ও বর্ধমানে পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো হয়েছে ৷ এটা শুরু হয়েছিল বালিগঞ্জ বিধানসভা আসনের উপ-নির্বাচনের সময় থেকে ৷ ওই ভোটেই বোঝা গিয়েছে বামেরাই তৃণমূলের আসল বিকল্প ৷

বালিগঞ্জে বামেদের প্রার্থী ছিলেন সিপিএমের সায়রা শাহ হালিম ৷ এই নিয়ে তিনি বলেন, "কৌশলের পরিবর্তন করা হয় ৷ পরিযায়ী শ্রমিক, দরিদ্র কৃষক ও গ্রাম থেকে বড় শহরে প্রতিদিন যাতায়াত করে কাজের জন্য, এমন শ্রেণির উপরই বেশি করে নজর দেওয়া হয়েছিল ৷ তরুণ প্রার্থীদের দাঁড় করানো ও তরুণ কর্মীদের প্রচারে ব্যবহার করা আমাদের বার্তা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে ৷"

আরও পড়ুন:বিজেপিকে উড়িয়ে 'গেরুয়া' পুরুলিয়ায় সবুজ ঝড়, কারণ কুড়মি সক্রিয়তা ?

গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় 2 হাজার নির্দল প্রার্থী জিতেছেন ৷ তাঁরা মূলত তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ ৷ ভোটের ময়দানে তাঁদের উপস্থিতি ভোট ভাগ হতে বিরোধীদের সাহায্য করেছে ৷ রজত রায় বলেন, “বাম-কংগ্রেসের পুনরুত্থানের গল্প অসাধারণ । যাই হোক, এই ঘটনার মানে হল যে বিজেপির সঙ্গে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট ভাগ হবে ৷ যা 2024 সালের ভোটে তৃণমূলের জন্য সহায়ক হতে পারে ৷’’

2021 সালের নির্বাচনে 49.59 শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ অন্যদিকে বিজেপি প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের অধিকাংশ পেয়েছিল ৷ তারা 37.39 শতাংশ ভোট পায় ৷ জিতেছিল 77টি আসনে ৷ বাম এবং কংগ্রেস যথাক্রমে ভোটের মাত্র 5.66 শতাংশ এবং 3.03 শতাংশ পেয়েছিল ৷ কিন্তু কোনও আসন জিততে পারেনি ৷ বিজেপির জাতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরার মতে, ক্ষমতাসীন তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল ৷ এবার বিজেপির তরফে অনেক বেশি মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ৷ যা বিজেপির পক্ষে গিয়েছে ৷

2007 সালে সিঙ্গুর আন্দোলনের পরে বাম থেকে তৃণমূলে সংখ্যালঘু ভোট স্থানান্তরিত হয়েছিল ৷ যা এখনও অনেকটাই অটুট রয়েছে ৷ তবে এবার সেই প্যাটার্নে কিছুটা বদল হয়েছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ৷ তাঁরা বলেছেন যে এবার সংখ্যালঘুরা একতরফা তৃণমূলকে ভোট দেয়নি ৷ বরং শক্তিশালী অবিজেপি প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে ৷ সেই কারণেই মুর্শিদাবাদে 1100 গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেস জিতেছে ৷ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় 600 আসনে জিতেছে সিপিএম ৷

আরও পড়ুন:পঞ্চায়েতে উত্তরে ধরাশায়ী বিজেপি, লোকসভা নিয়ে পদ্ম শিবিরে ক্রমে বাড়ছে দুশ্চিন্তা

এই নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবাজীপ্রতিম বসু জানান, সেই কারণেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের শক্তঘাঁটিতে আইএসএফ নিজেদের জায়গা করে নিতে পেরেছে ৷ আইএসএফের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, “একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী শাসক দলের ভোটব্যাংক এই মিথ বর্তমান নির্বাচনের মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হয়েছে ।’’

ABOUT THE AUTHOR

...view details