মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া কলকাতা, 7 এপ্রিল: শীতলকুচিতে ফের হাড়হিম করা ঘটনা । সম্পর্ক মেনে না-নেওয়ায় প্রেমিকার বাড়ির সকলে খুন করেন অভিযুক্ত যুবক বিভূতিভূষণ রায় । তবে শুধুমাত্র এই ঘটনা নয়, বর্তমানে 'খুন' বিষয়টা যেন অত্যন্ত সহজতর হয়ে উঠেছে ৷ মনের মিল হচ্ছে না, খুন করে ফেলা ! বাবা-মায়ের সঙ্গে মতে অমিল, খুন করে ফেলা ! প্রেমিক-প্রেমিকা মনে আঘাত দিয়েছে, খুন করে ফেলা ! জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে সমস্যার সম্মুখীন হলেই তার একমাত্র সমাধান 'খুন' এই মানসিকতাই এখন বেড়ে চলেছে দিনদিন ৷ কিন্তু কেন এই ধরনের মানসিকতা বাড়ছে? কেন মানুষ তথা বিশেষ করে বর্তমান জেনারেশনের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সহিষ্ণুতা কমে গিয়েছে ? মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন অন্যভাবে ৷
শীতলকুচিতে এক যুগলের প্রেম, মেয়ের বাড়ি থেকে মেনে না-নেওয়ায় তাঁর বাবা, মা ও দিদিকে হত্যা করে প্রেমিক ৷ অভিযুক্ত যুবক বিভূতিভূষণ রায়। খুনের কথা স্বীকার করে নেয় ৷ তবে তিনটি খুন করেও নির্লিপ্ত সে ৷ কোনও অনুশোচনা ধরা পড়েনি চোখে মুখে ৷ কেন এই ধরণের ঘটনা উঠে আসছে দিনের পর দিন? এই বিষয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সঞ্চিতা পাকড়াশি বলেন, "এখন চটজলদির জগৎ । ফলে আমার প্রয়োজনটা যখন মিটবে না, তখন সেই মানুষটার মূল্য আমার কাছে একফোঁটাও নেই। আমার প্রয়োজনের নিরিখে আমি পুরো দুনিয়াটা দেখছি। তাই অপর মানুষটিকে অপদস্থ বা খুন করা খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন পরে খুন এর মতো জিনিসও একটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠবে। ছোটো থেকে যা চাইছি সেটা যদি পেতে থাকি তখনই বড় হয়ে এমন ধরণের মানসিকতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে।"
এর সঙ্গে বর্তমানে বারবার উঠে আসে চলচ্চিত্র জগতে ক্রাইমের ব্যবহার। যা নিয়ে একটা তরজা রয়েছে। যে ভাবে এখন চলচ্চিত্র জগতে ক্রাইম দেখানো হয়, তা কতটা সুরক্ষিত সেই প্রশ্ন ওঠে ! কিংবা এই ক্রাইম জাতীয় ছবি বা সিনেমা অতিরিক্ত দেখার জন্যই কি এই মনোভাব আরও বাড়ছে ? সেই বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "শুধু সিনেমা বা সিরিজ নয় ৷ যে সিরিয়াল বর্তমানে আমরা দেখি সেখানে মূল্যবোধের একটা বড় অপক্ষয় হতে দেখা গিয়েছে । মানুষ কীভাবে সেটা নিয়ে সিনেমা তৈরি ৷ কিন্তু মানুষের জন্য কোনটা ভালো তা নিয়ে নয়। প্রেমের গল্পও ভালো সিনেমা হয়। তাও মানুষ উপভোগ করে। আসলে বর্তমানে আমরা সবাই স্রোতের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছি।"
আরও পড়ুন: প্রেমে প্রত্যাখান মানতে না পেরেই খুন ! 'স্বীকারোক্তি' শীতলকুচি কাণ্ডে ধৃত যুবকের
পাশাপাশি বর্তমানে নতুন একটা নেশার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। এর প্রভাবও বড়সড় আঘাত করছে বর্তমান প্রজন্মকে, এমনটাই মনে করছেন বিশিষ্ট মনোবিদ অনির্বাণ রায়। তিনি বলেন, "এই সোশ্যাল মিডিয়াতে সবাই নিজেকে খুশি দেখায়। তার ফলে তাঁদের জীবনের অখুশির জায়গাগুলি উঠে আসে না। একইভাবে যে একটু দুর্বল, তার মনে হতে থাকে, অন্যরা যা চাইছে তাই পাচ্ছে। তাহলে কেন সে পাবে না ? তাছাড়াও বর্তমানে একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যা কমে গিয়েছে। মানুষ খুব একা এখন। তাই আলোচনার জায়গা কমে গিয়েছে। তাই নেতিবাচক যখন কিছু হচ্ছে সেটা মেনে নিতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে বড় সমস্যা। তখন থেকেই একটা আক্রমণাত্মক ভাব তৈরি হয়ে যাচ্ছে।"