কলকাতা, 17 অক্টোবর : রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা । কলকাতার 121 নম্বর গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের এক বহুতলে তখন সবে অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছেন হাবিব মোল্লা । আর পাঁচটা দিনের মতোই ঘরে মা, স্ত্রী ও এক বছরের মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন । রাতের খাবারের আয়োজন চলছে । হঠাৎ ঘরের ভিতর আলোগুলি জ্বলতে-নিভতে শুরু করে । আর প্রায় একইসঙ্গে বাইরে কিছু একটা আওয়াজ । বিকট কোলাহল । কী হল এত রাতে ? কিছুটা উৎসুক হয়েই ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন হাবিব । ঘর থেকে বেরোতেই যা দেখলেন, সেই বীভৎসতা গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠার মতো ।
চারিদিকে ধোঁয়া । ঘন মিশমিশে কালো ধোঁয়া । বাড়ির চারিদিক ঘিরে ফেলেছে আগুনের লেলিহান শিখা । লোকজন এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে । কালো ধোঁয়া যেন আরও গাঢ় হয়ে আসছে । সম্বিৎ ফিরতেই আর দেরি করলেন না হাবিব । সঙ্গে সঙ্গে ঘরের সব আলো নিভিয়ে দেন । কোনওমতে মা, স্ত্রী আর এক বছরের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন । ঘন কালো ধোঁয়া । সামনে কী আছে, কিচ্ছু দেখার জো নেই । সেই ধোঁয়া ভেদ করে সিড়ি দিয়ে নীচের দিকে নামতে থাকেন ।
স্ত্রী ও এক বছরের মেয়েকে কোনওক্রমে বহুতল থেকে বের করতে আনতে পারলেও মাকে আর বের করতে পারেননি হাবিব । সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ পা ফসকে পড়ে যান বছর পঁয়ষট্টির শামিমা বেগম । চারিদিকে লোকের দৌড়াদৌড়ি । ঘন কালো ধোঁয়া । এর মধ্যে মাকে আর তুলতে পারেননি হাবিব । দৌড়াদৌড়ির মধ্যে সিঁড়িতে পড়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান বৃদ্ধা। চোখের সামনে মাকে মারা যেতে দেখেন হাবিব ।