পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

উচ্চতা-ওজন কমিয়ে পরিবর্তনের বনেদি পুজো মহানগরে - saborno roy chowdhury

কোরোনার প্রভাব পড়েছে দুর্গাপুজোতে ৷ বাদ যায়নি বনেদি বাড়ির পুজোগুলিও ৷ পরিবর্তন করা হয়েছে বাড়ির পুজোগুলির একাধিক নিয়ম ৷ শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে সাবর্ণ রায়চৌধুরি প্রত্যেকেই এই বছর বন্ধ রাখছে দর্শনার্থীদের প্রবেশ ৷

ছবি
ছবি

By

Published : Aug 18, 2020, 8:32 AM IST

কলকাতা, 18 অগাস্ট : শরৎ আসন্ন ৷ আকাশে জমেছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ৷ জানান দিচ্ছে মা আসছেন ৷ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো ৷ তবে এই বছরের পরিস্থিতিটা আলাদা ৷ কোরোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে দুর্গাপুজো হবে সেইটাই এখন প্রশ্নের মুখে ৷ বারোয়ারি থেকে বাড়ির পুজো সবেতেই ভাঁটা ৷ বলা ভালো, ঐতিহ্য রক্ষায় নামমাত্র ভাবে সম্পন্ন হবে এইবারের পুজো ৷

উত্তর কলকাতার বনেদি পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো ৷ 1757 সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেব দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন । 230 বছর ধরে শোভাবাজার রাজবাড়িতে চলে আসছে পুজো ৷ সময় পরিবর্তন হয়েছে ৷ কিন্তু রাজবাড়ি তার ঐতিহ্য-বনেদিয়ানা অটুট রেখে দুর্গাপুজো করে চলেছে । তবে এই বছরটা আলাদা ৷ কোরোনা পরিস্থিতির জন্য বেশ কয়েকটি নিয়ম বদল করতে বাধ্য হয়েছেন শোভাবাজার বাড়ি সদস্যরা । রাজা নবকৃষ্ণ দেবের অষ্টম প্রজন্ম দেবাশিস কৃষ্ণদেব জানিয়েছেন, এই বছর কোরোনা পরিস্থিতির জন্য প্রতিমার উচ্চতা এক থাকলেও ওজন কমানো হচ্ছে ৷ তার কারণ দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন করতে গেলে 32 জন বাহকের প্রয়োজন হয় । তবে এই বছর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেবী প্রতিমার ওজন কমানো হচ্ছে ৷ প্রতিমা নিরঞ্ন দেওয়া হবে হাতে টানা গাড়িতে ।

জোড়া নৌকায় মাঝ গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন করাই রাজ বাড়ির বৈশিষ্ট্য । এই বছরও তাই হবে বলে জানিয়েছেন দেবাশিস । তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজ বাড়ির প্রতিমা দর্শন করতে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ আসেন । এ-বছর দর্শনার্থীরা প্রতিমা দর্শন করতে পারবেন না ৷ শুধু এই বছরের জন্য বাইরে দর্শকদের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে রাজবাড়ির দরজা । পুজোতে উপস্থিত থাকবেন শুধু বাড়ির সদস্যরা ৷ তাঁদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে একটি পরিচয় পত্রের কার্ড ৷ সেই কার্ড দেখিয়ে তাঁরা প্রবেশ করতে পারবেন । গেটে সিকিউরিটি গার্ড থার্মাল গান দিয়ে শরীরের পরীক্ষা করবেন ৷ যেখানে পুজো হয় সেখানে ভিড় করা যাবে না । সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে । পরিবারের সকল সদস্যকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে । 10 জনের বেশি অঞ্জলি দেওয়া হবে না এ বছর ।

কোরোনার জেরে পরিবর্তন হয়েছে বনেদি পুজোগুলির অনেক নিয়ম

শোভাবাজার রাজ বাড়ির পুজোর অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হল ভোগ বিতরণ অনুষ্ঠান ৷ প্রতি বছর মেদিনীপুর থেকে প্রায় 40 জনের বেশি কারিগর আসেন যাঁরা পুজোর চার দিন প্রায় 36 রকমের মিষ্টি তৈরি করেন । কিন্তু এই বছর কোরোনা পরিস্থিতির জন্য কারিগররা আসতে পারবেন না । তাই গাড়ি করে চার-পাঁচজন কারিগরকে আনা হবে এবং তাঁরা খুব অল্প সংখ্যক মিষ্টি তৈরি করবেন ।

দক্ষিণ কলকাতার অন্য আর এক ঐতিহ্যবাহী পুজো হল সাবর্ণ রায়চৌধুরি বাড়ির পুজো ৷ 1610 খ্রিস্টাব্দে লক্ষীকান্ত রায়চৌধুরি এবং তাঁর স্ত্রী ভগবতী দেবী এই দুর্গাপুজোর প্রবর্তন করেছিলেন বরিশাতে । শোনা যায় এটাই বাংলার প্রথম বনেদি বাড়ির পুজো ৷ বর্তমানে এই পরিবারের আটটি দুর্গা পুজো হয় । এর মধ্যে ছয়টি পুজো হয় বরিশাতে । একটি পুজো হয় বিরাটির বাড়িতে, অন্য আর একটি পুজো হয় নিমতার পাঠানপুরে । আজ এই ঐতিহ্যবাহী পুজোও সম্মুখীন হয়েছে কোরোনা পরিস্থিতির ৷ সাবর্ণ রায়চৌধুরি পরিবারের পক্ষ থেকে দেবর্ষি রায়চৌধুরি জানিয়েছেন, কোরোনা আবহের মধ্যে কীভাবে পুজো হবে সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন । তবে পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক পুজো করতেই হবে । অবস্থার সঙ্গে কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে পুজোর আয়োজনে । তবে এর নিয়ম-আচার-নিষ্ঠা-রীতিনীতি রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই পালন করা হবে । যেহুতু ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে তাই ঢাকি আসতে পারবেন না । পুজোর জোগারের কাজ করতে জেলা থেকে যাঁরা আছেন তাঁরাও আসতে পারবেন না । সব কিছু নিয়েই ভাবনাচিন্তা চলছে । তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হয়েছে 12 হাত থেকে 14 হাতের যে প্রতিমা প্রতি বছর তৈরি হয় এ-বছর তার থেকে অনেক কম উচ্চতার প্রতিমা তৈরি করা হবে । আড়াই থেকে তিন হাতের প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে । পুজো হবে অন্নপূর্ণা মন্দিরে । ঘেরা চার দেওয়ালের মধ্যে ছোট প্রতিমায় এ-বছর পুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এই বছর দর্শনার্থীদের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না । ভোগ অনুষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে ৷

বাঙালি মনে দুর্গাপুজোর আবেগ কী তা প্রশ্ন করা চলে না ৷ তবে কোরোনা যেন সব আনন্দ নষ্ট করে দিল ৷ তবে এরপরও সরকারি নিয়ম মেনে বাড়ির পুজোগুলি নামমাত্র পুজো অনুষ্ঠান করছে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details