পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Coromandel Express: স্টেশন বিভ্রাটে প্রাণরক্ষা ! একরাতে বদলে গেল পাথরপ্রতিমার বাপন দাসের জীবন - করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত

জানতেন না কোন স্টেশন থেকে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ৷ আর সেই না জানাতেই প্রাণ বাঁচল পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা বাপন দাসের ৷ ভুল স্টেশনে যাওয়ার কারণে ট্রেনে উঠতে পারেননি তিনি ৷ তাও উৎকণ্ঠার রাত কাটাতে হয়েছে পরিবারকে ৷

Coromandel Express ETV BHARAT
Coromandel Express

By

Published : Jun 4, 2023, 11:01 PM IST

কলকাতা/পাথরপ্রতিমা, 4 জুন: গন্তব্য ছিল কেরল ৷ ঠিক করেছিলেন গত পাঁচ বছরের মতোই চেনা রুটে গিয়েই যোগ দেবেন কাজে ৷ প্রথমে চেন্নাই, সেখান থেকে সোজা 'ঈশ্বরের দেশ' কেরল ৷ ইনি দক্ষিণ 24 পরগনার পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা বাপন দাস ৷ কিন্তু গত পাঁচ বছরের অভ্যেসের কারণে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ধরতে শালিমারের বদলে হাওড়া স্টেশনে চলে গিয়েছিলেন ৷ আর তাই বালাসোরের ভয়ানক বিপর্যয়ের অংশ করমণ্ডল এক্সপ্রেসে সওয়ার হননি তিনি ৷ তাই ইটিভি ভারতকে তিনি জানিয়েছেন, কপাল জোরে প্রাণ পাখিটা বেঁচে গিয়েছে তাঁর ৷

কী ঘটেছিল বাপন দাসের সঙ্গে ?

পাঁচ বছর ধরে রাজ্যের বাইরে গিয়ে সেখানেই শ্রমিকের কাজ করেন পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা বাপন দাস ৷ কিন্তু, দীর্ঘদিন করমণ্ডলে না-ওঠার জেরে, সেই ট্রেন বর্তমানে যে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে তা জানতেন না বাপন দাস ৷ করমণ্ডল এক্সপ্রেস আগে ছাড়ত হাওড়া স্টেশন থেকে ঠিক দুপুর 3টে 55 মিনিটে ৷ তবে, কিছু বছর ধরে সেটির সময় ও স্থান পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে ৷ বর্তমানে শালিমার থেকে করমণ্ডল ছাড়ে দুপুর 3 টে 20 মিনিটে ৷ এই পরিবর্তনের কথা জানতেন না বাপনবাবু ৷

ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে তিনি জানালেন, করমণ্ডল যে শালিমার থেকে ছাড়ে বাপন দাস জানতেন না ৷ তাই তাড়াহুড়ো করে দুপুর দেড়টা নাগাদ হাওড়া স্টেশনে চলে আসেন তিনি ৷ পরিকল্পনা ছিল সেখান থেকে জেনারেল টিকিট কেটে রওনা দেবেন ৷ কিন্তু, স্টেশনে এসে পুরো পরিকল্পনাটাই বদলে যায় ৷ সব জেনে অগ্যতা চেন্নাই যাওয়ার রাতের ট্রেনের টিকিট কাটতে বাধ্য হন বাপন ৷ কিন্তু, সন্ধের সময় করমণ্ডল এক্সপ্রেস ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ৷ ফলে দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার সব ট্রেন সেই রাতের মতো বাতিল হয়ে যায় ৷

আরও পড়ুন:288 নয়, বালাসোর দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা 275; দাবি ওড়িশা সরকারের

তবে, তাঁর এই না জানাটাই প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছে বাপন দাসের ৷ রাতে হাওড়া স্টেশনে ঘোষণা শুনে জানতে পারেন দুর্ঘটনার কথা ৷ সেই সঙ্গে সব চেন্নাই মেল বাতিলের খবরও পান ৷ তাই টিকিট বাতিল করার জন্য শুরু করেন ছোটাছুটি ৷ কাউন্টারে টিকিট বাতিল হলেও, টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না ৷ এর জন্য শনিবার সকাল থেকে হাওড়া স্টেশন চত্বরে ছোটাছুটি করেন তিনি ৷ আর এসবের চক্করে বাড়িতে ফোন করতেও ভুলে গিয়েছিলেন তিনি ৷ এমনকী সঙ্গে মোবাইলের চার্জারও ছিল না ৷ ফলে চার্জও শেষ হয়ে যায় ৷

আরও পড়ুন:পরিষেবা স্বাভাবিক করতে মরিয়া রেল, আজকের ডাউন লাইনের কাজ সম্পূর্ণ হবে; ঘোষণা রেলমন্ত্রীর

আর এখান থেকে শুরু হয় আরেক গল্প ৷ বাড়ির লোক জানতেন তিনি করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেন্নাইয়ের জন্য রওনা দিয়েছেন ৷ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরাও চিন্তায় পড়ে যান ৷ বাপন দাসের বাড়িতে স্ত্রী দীপালি করণ দাস, বৃদ্ধা মা এবং 6 বছরের মেয়ে রয়েছে ৷ তাঁরা বাপনের চিন্তায় প্রায় কান্নাকাটি শুরু করে দেন ৷ তাই শনিবার দিনের আলো ফুটতেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা গাড়ি ভাড়া করে সোজা বালাসোরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন ৷ সেখানে বাপনের পরিচয় জানিয়ে খোঁজ শুরু করেন তাঁরা ৷ কিন্তু, কোথাও তাঁর হদিশ মেলে না ৷ মিলবে কী করে, তিনি তখন হাওড়া স্টেশনে বাতিল টিকিটের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ছুটোছুটিতে ব্যস্ত যে !

এ দিকে পরিবারে দশা বেহাল ৷ বাপনের স্ত্রী দীপালিদেবী জানান, দুপুর তিনটের সময় শেষবারের মতন বাপন তার বাড়িতে ফোন করেছিলেন আধার কার্ডের জন্য ৷ ভুল করে মায়ের আধার কার্ড নিয়ে চলে গিয়েছিলেন ৷ পরে স্ত্রী মোবাইলে তাঁর আধার কার্ডের ছবি তুলে পাঠিয়েছিলেন ৷ তখনও বাপন স্ত্রী'কে জানাননি ভুলের কারণে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ধরতে না-পারার কথা ৷ এই পরিস্থিতিতে বিকেল 5টা নাগাদ দীপালি দাসের ফোনে একটি মেসেজ যায় ৷ সেটি দেখে তিনি স্বামীকে ফোন করেন ৷ তখন পুরো ঘটনা জানান ৷ ধড়ে প্রাণ ফেরে দিপালী দেবীর ৷

আরও পড়ুন:করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার তদন্তভার যাচ্ছে সিবিআইয়ের হাতে ! ঘোষণা রেলমন্ত্রীর

তিনি স্বামীকে জানান, হাওড়া স্টেশনেই অপেক্ষা করতে ৷ যাঁরা বালাসোরে বাপন দাসের খোঁজে গিয়েছিলেন, তাঁদের ফোনে বিষয়টি জানান দিপালী দেবী ৷ ফেরার পথে ওই গাড়িতে বাপনকে তুলে নিয়ে পাথরপ্রতিমার গ্রামে ফেরেন সকলে ৷ বাপন বাড়িতে ফেরার পর, সকলের শান্তি হয় ৷ কিন্তু, এমন পরিস্থিতিতে ফোনে চার্জ না দেওয়া ৷ পরিবারকে আগে খবর না দেওয়া ৷ কোনও মতেই বুদ্ধিমানের কাজ নয় ৷ তবে, কপাল জোরে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন তিনি ৷ তাই ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলার সময়ও গলা কাঁপছিল বাপনের স্ত্রী'য়ের ৷ কারণ স্বামীই যে তাঁদের একমাত্র ভরসা !

ABOUT THE AUTHOR

...view details