পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Mamata Banerjee Charisma: মমতার ধরনার দর্শক 80 বছরের ‘যুবক’ ল্যান্সডাউনের বিশ্বরূপ - Mamata Banerjee Dharna

কলকাতার ল্যান্সডাউনের বাসিন্দা বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ গত 29 ও 30 মার্চ তিনি রেড রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা মঞ্চের সামনে উপস্থিত ছিলেন বছর 80-র এই যুবক ৷ শুধু মমতাকে প্রত্যক্ষ করতেই তাঁর যাওয়া, দাবি এই ব্যক্তির ৷

Mamata Banerjee Dharna
Mamata Banerjee Dharna

By

Published : Apr 3, 2023, 1:02 PM IST

Updated : Apr 3, 2023, 1:59 PM IST

কলকাতা, 3 এপ্রিল: বেলাশেষে সিনেমায় পরিবারের থেকে ছুটি চেয়েছিলেন বিশ্বনাথ মজুমদার (অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) । তাও আবার 49 বছরের দাম্পত্য জীবনে ছেদ টেনে । কারণ ছিল দু’টো । এক, স্ত্রীকে স্বাবলম্বী করতে আর দুই, পছন্দের সাগর-পাহাড়-জঙ্গল ঘুরতে চেয়ে । অর্থাৎ, নিজের শখ আহ্লাদ পূরণে শেষ বয়সে এসেও আপ্রাণ চেষ্টা করেন সিনেমার পুস্তক-প্রকাশক বিশ্বনাথ ।

পর্দার এমন চরিত্র বাস্তবেও খুঁজলে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে ৷ বেলাশেষের বিশ্বনাথের সঙ্গে অদ্ভুত মিল কলকাতার ল্যান্সডাউনের বাসিন্দা বছর আশির বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ বয়স 80 ৷ শখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন সভা পর্যবেক্ষণ করা ৷ তাই কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী না হয়েও মমতার কোনও কর্মসূচি থাকলেও ছুটে যান কলকাতার এদিক-ওদিক ৷ ঠিক যেমন তিনি গত 29 ও 30 মার্চ হাজির ছিলেন রেড রোডে ৷

রেড রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা মঞ্চের উলটো দিকে হাজির বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

ওই দু’দিন টানা 30 ঘণ্টা রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির নিচে বসে ধরনা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর রাস্তার ঠিক উলটো দিকেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তির নিচে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মাথা ভর্তি সাদা চুল । চামড়া কুঁচকে বলিরেখার ছাপ স্পষ্ট । পায়ে স্নিকার্স । হাতে ঘড়ি । দুই দিন দু’রকম প্যান্ট আর শার্ট । আর কাঁধের ঝোলা ব্যাগে এক প্যাক বিস্কুট, জিরে ভেজানো জল ও একটি ছাতা । এই নিয়েই তিনি হাজির ছিলেন সেখানে ৷

কথা বলে জানা গেল, তিনি কলকাতা পুরসভার 72 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা । যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই৷ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব প্রায় আড়াই কিমি । ব্যক্তিগতভাবে পরিচিতি নেই । তবুও বয়সে অনেকটা ছোট রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের ধরনা দেখতেই ওই দুই দিন বাড়ি থেকে পাঁচ কিমি হেঁটে রেড রোডে এসেছিলেন বছর আশির এই ‘ছোকরা’ (এই বিশেষণ অবশ্য তিনি নিজেই নিজেকে দিয়েছেন) ৷

রেড রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা মঞ্চের উলটো দিকে হাজির বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

কেন যান মমতার কর্মসূচিতে ৷ বিশ্বরূপ বলছেন শুধুই ভালোলাগার কথা ৷ তিনি কংগ্রেসের বিধানচন্দ্র রায়, বামফ্রন্টের জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সরকার দেখেছেন । এখন দেখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার । তাদের মধ্যে পার্থক্যও দেখেছেন । মমতা সরকারের বিরুদ্ধে চুরি, দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও বিরোধীদের ‘লেগপুল’ করা ঠিক না হচ্ছে বলেই তাঁর দাবি ।

কারণ হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যা, জ্যোতি বসু তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন । দলীয় সিদ্ধান্তে হননি । আজ জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হলে দেশজুড়ে সিপিএমের যেমন বিস্তার ঘটত, তেমনি রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে দেশের শীর্ষে থাকত বলে মনে করেন তিনি । তাঁর কথায়, "জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী না হয়ে হিমালয় সমান ভুল করেছেন । তিনি নিয়েও স্বীকার করেছেন । তিনি প্রধনমন্ত্রী হওয়ার পদ ফিরিয়ে বলেছিলেন, ‘হিমালয়ান ব্লান্ডার’ ৷ জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলা কোথায় পৌঁছাত আর সিপিএমের কি এই হাল হতো ? এখন যখন নতুন বাংলা থেকে সুযোগ হচ্ছে, তাঁকে সাহায্য না করে লেগপুল করছে সিপিএম ।"

রেড রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা মঞ্চের উলটো দিকে হাজির বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

এককালে সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এই প্রাক্তনী ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশ-বিদেশ ৷ পেশায় ছিলেন সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ । সেই সূত্রেই দিল্লি, মুম্বই, গুজরাত দেশের প্রায় সব জায়গাতেই ঘুরেছেন । বিদেশ বলতে নেপাল, ভুটান । তবে, বাংলাদেশে যাওয়া হয়নি তাঁর । এছাড়া নিজে দেশের অধিকাংশ ধর্মীয় ও দর্শনীয় স্থান ঘুরেছেন একাধিকবার । ভূস্বর্গ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী । কিংবা, সুন্দরবন থেকে গান্ধিনগর ।

এখনও ঘুরতে যান ৷ তবে বছরে একবার 15 দিনের জন্য । আগে স্ত্রীকে নিয়ে যেতেন । 21 বছর আগে তাঁকে হারানোর পর, একাই যেতে হয় বলে জানান তিনি । তবে, ছেলে, বউমার অনুমতি নিয়ে । পারেন কী করে ? উত্তরে বলেন, "মনের জোরে ! মনে করলেই বুড়ো । বা করলেই নয় । মিশুকে হলে পথে একা লাগে না । তাছাড়া, দল বেঁধে গেলে নিজের মতো করে ঘোরা হয়ে ওঠে না ।"

রেড রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা মঞ্চের উলটো দিকে হাজির বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

কিন্তু আশি বছর বয়সে শরীর সঙ্গ দেয় ? বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বক্তব্য, "আমার শরীরে কোনও রোগ নেই । ইচ্ছাশক্তিতে ভরপুর আমি । ছোট বেলায় বিবেকানন্দের যুব বাণী পড়েছি । বাথরুমে বসে রেড বুকও পড়েছি । তোমাকে বেছে নিতে হবে তুমি কী চাও । 2000 সালের পর থেকে নিরামিষ খাচ্ছি । কোনও ওষুধ লাগে না । একাধিক দাঁত এমনিতে পড়ে গিয়েছে । কোনও ডাক্তার দেখিয়ে তুলিনি ।"

তিনি চার্লি চ্যাপলিনের অবসরের গল্প শোনান । বলেন, "চার্লি চ্যাপলিন অবসর গ্রহণের দিন বলে ছিলেন, ‘মাই ওনলি এনিমি ইজ টাইম’ । সুতরাং, নিজের সময়কে নিজের মনকে চাঙ্গা রাখো । বিবেকানন্দ পড়ো । আজীবন ছোকরা থাকবে ।"

আরও পড়ুন:ছাত্র ও যুবদের নিয়ে তৃণমূলের ব্যান্ড তৈরির পরামর্শ মমতার, নাম দিলেন জয়ী

Last Updated : Apr 3, 2023, 1:59 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details