কলকাতা, 16 জুলাই : আগামীদিনে সংক্রমণ আরও বাড়বে ৷ তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই ৷ নবান্নের বৈঠক থেকে গতকাল একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এদিকে দিন দিন কমছে সুস্থতার হার ৷ বাড়ছে কোরোনায় মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা ৷ এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী কতটা 'ঠিক' থাকা যায়, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছে, এই পরিস্থিতিতে আদৌ কি নিশ্চিন্ত বা ভয়হীন থাকা যেতে পারে ?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য
গতকাল কোরোনা পরিস্থিতি নিয়ে জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেখানে তিনি বলেন, "আগামী দু'মাসে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা এমনিতেও শিখরে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা । সব জায়গাতেই সংক্রমণ বাড়ছে ৷ বাংলা বড় রাজ্য ৷ কলকাতা তথা বাংলার জনসংখ্যাও অনেক ৷ তাই সংক্রমণের পরিমাণও বেশি ৷ "
সংক্রমণ বাড়ার পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আগামী দু'মাসের কথা মাথায় রেখে এবার আমরা টেস্টিং বাড়াব । ট্রেসিং ও ট্রেকিংও বাড়ানো হবে ৷ আর টেস্টিং ট্রেকিং বাড়লে স্বভাবতই সংক্রমণ বাড়বে ৷"
মুখ্যমন্ত্রীর অভয়বাণী
সংক্রমণ বাড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই ৷ গতকাল বলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর কথায়, মূলত যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে তা হল, বিশেষজ্ঞদের কথা মাথায় রেখে পরীক্ষা বাড়াতে হবে ৷ এতে বেশি রোগীকে চিহ্নিত করা ও চিকিৎসা করা যাবে ৷ কিন্তু, তা নিয়ে ভয় পেয়ে লাভ নেই ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "অল্পবিস্তর উপসর্গ দেখা দিলে বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে অনায়াসে চিকিৎসা করান ৷ ভয় পেয়ে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই ৷ প্রয়োজনে অক্সিমিটারে মেপে নিন অক্সিজেন সংক্রান্ত পরিমাপ করে নিন ৷ আশাকর্মীদের সাহায্য নিন ৷ হাউজ়িং বা আবাসনে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে, আবাসনের কর্তৃপক্ষ দু-তিনটি অক্সিমিটার কিনে রাখতে পারেন ৷ তবে ভয় পেয়ে লাভ নেই ৷"
প্রসঙ্গত, মাস দুয়েক আগেই সরকারের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত পরীক্ষা না করানোর অভিযোগ উঠেছিল ৷ তখন অবশ্য এই সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ ৷ কেউ কেউ আবার আক্রান্ত ও নুমনা পরীক্ষার সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ককে সেভাবে গুরুত্ব দেননি ৷ যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে পূর্বের বক্তব্যের প্রায় উলটো পথেই হাঁটছে সরকার ৷ বলা হচ্ছে নমুনা পরীক্ষা বাড়লে সংক্রমণও বাড়বে ৷
কোরোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী কী বলছে তথ্য
গত 24 ঘণ্টায় রাজ্যে কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছে 1 হাজার 589 জন । একদিনে আক্রান্তের নিরিখে এটিই সর্বোচ্চ । মৃত্যু হয়েছে 20 জনের । যা নিয়ে রাজ্যে মোট মৃত 1 হাজার । এর পাশাপাশি রাজ্যে সুস্থতার হার বর্তমানে 60.06 শতাংশ । যা বেশ কয়েকদিন ধরেই ক্রম হ্রাসমান ৷
জুনের শুরু থেকে আক্রান্ত ও সুস্থতার হারের তুলনা করলে যা স্পষ্ট হয়ে যায় ৷ 1 জুন রাজ্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 5 হাজার 772 । মৃতের সংখ্যা ছিল 253 । সুস্থতার হার ছিল 39.95 শতাংশ । তার এক মাস পর অর্থাৎ 1 জুলাই রাজ্যে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা 13 হাজার 398 বেড়ে দাঁড়ায় 19 হাজার 170-এ ৷ মৃতের সংখ্যা ছিল 683 । অর্থাৎ এক মাসে মৃত্যু হয়েছে 430 জনের । তখন সুস্থতার হার ছিল 65.35 শতাংশ ৷ এরপর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সুস্থতার হারও যথাযথ জায়গায় ছিল ৷ যেমন 2 জুলাই সুস্থতার হার ছিল 65.78 শতাংশ ৷ 3 জুলাই সুস্থতার হার ছিল 66.23 শতাংশ ৷ 4 জুলাই ও 5 জুলাই যথাক্রমে সুস্থতার হার ছিল 66.72 শতাংশ ও 66.72 শতাংশ ৷ কিন্তু 9 জুলাই থেকে সুস্থতার হারে ভাটা পড়তে শুরু করে ৷ আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে ৷ সেদিন কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 1 হাজার 88 ৷ সুস্থতার হার 64.93 শতাংশ ৷ এরপর 10 জুলাই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 1 হাজার 198 ৷ সুস্থতার হার ছিল 63.99 শতাংশ ৷ একইভাবে 11 জুলাই সুস্থতার হার ছিল 63.11 শতাংশ ৷ 13 জুলাই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় 31 হাজার 448-এ ৷ সুস্থতার হার 61.09 শতাংশ ৷ 14 জুলাই আক্রান্তের সংখ্যা 1 হাজার 390 বেড়ে দাঁড়ায় 32 হাজার 838-এ ৷ সুস্থতার হার ছিল 60.69 শতাংশ ৷ আর 15 জুলাই আক্রান্তের সংখ্যা 1 হাজার 589 বেড়ে দাঁড়ায় 34 হাজার 427-এ ৷ কিন্তু সুস্থতার হার 60.06 শতাংশ ৷ মৃতের সংখ্যা ছিল এক হাজার । কিন্তু পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে ৷ দেড় মাসে কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছে 28 হাজার 665 । আর মৃত্যু হয়েছে 747 জনের । এদিকে 1 জুলাইয়ের তুলনায় সুস্থতার হার কমেছে 5.29 শতাংশ ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷
15 দিনের কোরোনা পরিসংখ্য়ান আতঙ্কিত না হওয়ার অভয়বাণী কতটা কার্যকরী
পরিসংখ্যান যা বলছে, তাতে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ারই কথা ৷ রাজ্যে শর্তসাপেক্ষে লকডাউন জারি রয়েছে ৷ কনটেনমেন্ট জ়োনগুলিতে কড়াকড়ি থাকলেও বাকি জায়গায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ ৷ লাটে উঠছে সামাজিক দূরত্ব ৷ আগের মতোই বাসে ভিড় ৷ নিত্যদিন কাজেও যাচ্ছে মানুষজন ৷ এতে কি সংক্রমণ কমবে ? তা নিয়েও চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা ৷ একাংশের কথায়, সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী ৷ এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হওয়া কতটা সহজ বা সম্ভব তাও বড় প্রশ্ন ৷