কলকাতা, 14 মে: চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি এনে দিয়েছে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ। তবে , সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে থাবা বসিয়েছে COVID-19। এই পরিস্থিতিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা যে কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইতিমধ্যে জারি করেছে বিধি নিষেধ। যার জেরে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে , রিজিওনাল অর্গান অ্যান্ড টিশু ট্রানস্প্ল্যান্ট অর্গানাইজেশন (ROTTO)-র জয়েন্ট ডিরেক্টর, চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী বলেন, "স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে নির্দেশ আছে, ডিজ়িজ ডোনার এবং লিভিং ডোনার, উভয় ক্ষেত্রেই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া বন্ধ আছে । এই নির্দেশিকাটি এসেছে ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিশু ট্রানস্প্ল্যান্ট অর্গানাইজেশন (NOTTO)-র গাইডলাইন থেকে । "
এই কোরোনা মহামারিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন কী সুরক্ষিত ?
এই বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী বলেন, "অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে যে কোনও সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থেকে যায়। কারণ প্রতিস্থাপনের আগে অঙ্গ গ্রহীতার ইমিউনিটি পাওয়ার কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, প্রতিস্থাপনের পরে কোনও কারণে COVID-19-এর সংক্রমণও দেখা দেওয়ারও সম্ভাবনা আছে । এছাড়া যদি কেউ তাঁর বাড়ির কাউকে কিডনি দিতে চান, অথচ তিনি COVID-19-এর উপসর্গহীন অবস্থায় রয়েছেন, পরে দেখা গেল তিনিও COVID-19 আক্রান্ত, তাহলে এই সব ক্ষেত্রে COVID-19-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এই রকম পরিস্থিতির কথা ভেবেই,আপাতত অঙ্গ প্রতিস্থাপন বন্ধ রাখা হয়েছে।" বিষয়টি নিয়ে, ROTTO-এর অন্য এক জয়েন্ট ডিরেক্টর, চিকিৎসক প্লাবন মুখোপাধ্যায়ও বলেন, "COVID-19-এর কারণে এখন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও লকডাউন পর্বে ডিজ়িজ ডোনার পাওয়া গেলও ,দাতাকে হাসপাতালে যেতে হবে। সংক্রমণের মধ্যে তাঁরা হাসপাতালে কীভাবে যাবেন সেই বিষয়টি নিয়ে রয়েছে সংশয়।" ROTTO-র এই জয়েন্ট ডিরেক্টর বলেন, "এই পরিস্থিতি চিরদিন চলতে পারবে না। তাই ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে। তবে, সরকারি ওই নির্দেশ অনুযায়ী, ইমারজেন্সির সময় কিছু ক্ষেত্রে এই দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে। যদিও, ইমারজেন্সির ভিত্তিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা এই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।" বিষয়টি নিয়ে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক প্রতীম সেনগুপ্ত বলেন, "কিডনি বা অন্য (হার্ট, লিভার) অঙ্গ প্রতিস্থাপন এমন এক চিকিৎসা ব্যবস্থা, যার জন্য অঙ্গ গ্রহীতার ইমিউনো কম্প্রোমাইজ করতে হয়। যেহেতু COVID-19-এর এপিডেমিক চলছে, তাই এখন কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে যদি কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়, তা হলে অপারেশনের সময় এবং অপারেশনের পর অঙ্গ গ্রহীতার সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে। এমনকি তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।"
লকডাউনেও কী মিলছে ডোনার ?
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় কোনও জখমের ব্রেন ডেথ ঘোষণার পরে, তাঁর অঙ্গ অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য পরিজনদের সম্মতিতে নেওয়া যায়। দুর্ঘটনা বাদেও অন্য কারণে কোনও রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে, সেই রোগীর পরিজনদের সম্মতিতেও তাঁর অঙ্গ অন্য রোগীদের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য নেওয়া যেতে পারে। যদিও এ সব ক্ষেত্রে দেখে নেওয়া হয় ব্রেন ডেথ ঘোষিত রোগীদের অঙ্গ, অন্য রোগীদের শরীরে প্রতিস্থাপনেরযোগ্য কি না। তবে , ইদানীং লকডাউনের কারণে দুর্ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে। হাসপাতালে অন্য রোগীদের ভিড়ও কম রয়েছে। তার উপর, এই দুই ক্ষেত্রেই ডোনারের শরীরে COVID-19-এর সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে। তবে শুধুমাত্র এমন নয়। ব্রেন ডেথ ঘোষণার জন্য টিমও থাকতে হবে। হাসপাতালগুলির পরিষেবা স্বাভাবিক না থাকলে ব্রেন ডেথ ঘোষণার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে । বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে SSKM হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "আগে ব্রেন ডেথ ঘোষণার জন্য আইন ছিল না। হার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এটা একজন চিকিৎসক ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু ব্রেন ডেথ ঘোষণা করতে হলে চিকিৎসকদের টিম দরকার।"
কোরোনা পরিস্থিতে ডোনার ছাড়াও আর কী কী অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের রোগীদের ?
এক চিকিৎসক বিষয়টি নিয়ে বলেন, "COVID-19 বড় বিপর্যয়। এটা অর্থনৈতিক বিপর্যয়, জীবনযাপনের বিপর্যয়। বহু মানুষের না খেতে পারার আশঙ্কা, জীবিকা হারানো সংশয় দেখা দিয়েছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন এখানে অঙ্গ প্রতিস্থাপন তো বিলাসিতার শামিল।" এই চিকিৎসক বলেন, "এখন ডোনারও নেই। চিকিৎসক-নার্সদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে COVID-19-এর চিকিৎসার জন্য। কোনও হাসপাতালে COVID-19-এর সংক্রমণ ধরা পড়লে আইসোলেশন এ চলে যেতে হচ্ছে অনেক চিকিৎসক-নার্সকে।"