পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসাতে বাধা কোরোনার

লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে এবং COVID-19-এর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে, ফের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা পরিষেবা যখন শুরু হবে, তখনকার কথা ভেবেও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে চিকিৎসকদের।

kolkata
লকডাউন

By

Published : May 14, 2020, 5:08 PM IST

Updated : May 15, 2020, 9:04 PM IST

কলকাতা, 14 মে: চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি এনে দিয়েছে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ। তবে , সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে থাবা বসিয়েছে COVID-19। এই পরিস্থিতিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা যে কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইতিমধ্যে জারি করেছে বিধি নিষেধ। যার জেরে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে , রিজিওনাল অর্গান অ্যান্ড টিশু ট্রানস্প্ল‍্যান্ট অর্গানাইজেশন (ROTTO)-র জয়েন্ট ডিরেক্টর, চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী বলেন, "স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে নির্দেশ আছে, ডিজ়িজ ডোনার এবং লিভিং ডোনার, উভয় ক্ষেত্রেই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া বন্ধ আছে । এই নির্দেশিকাটি এসেছে ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিশু ট্রানস্প্ল‍্যান্ট অর্গানাইজেশন (NOTTO)-র গাইডলাইন থেকে । "

এই কোরোনা মহামারিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন কী সুরক্ষিত ?

এই বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী বলেন, "অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে যে কোনও সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থেকে যায়। কারণ প্রতিস্থাপনের আগে অঙ্গ গ্রহীতার ইমিউনিটি পাওয়ার কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, প্রতিস্থাপনের পরে কোনও কারণে COVID-19-এর সংক্রমণও দেখা দেওয়ারও সম্ভাবনা আছে । এছাড়া যদি কেউ তাঁর বাড়ির কাউকে কিডনি দিতে চান, অথচ তিনি COVID-19-এর উপসর্গহীন অবস্থায় রয়েছেন, পরে দেখা গেল তিনিও COVID-19 আক্রান্ত, তাহলে এই সব ক্ষেত্রে COVID-19-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এই রকম পরিস্থিতির কথা ভেবেই,আপাতত অঙ্গ প্রতিস্থাপন বন্ধ রাখা হয়েছে।" বিষয়টি নিয়ে, ROTTO-এর অন্য এক জয়েন্ট ডিরেক্টর, চিকিৎসক প্লাবন মুখোপাধ্যায়ও বলেন, "COVID-19-এর কারণে এখন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও লকডাউন পর্বে ডিজ়িজ ডোনার পাওয়া গেলও ,দাতাকে হাসপাতালে যেতে হবে। সংক্রমণের মধ্যে তাঁরা হাসপাতালে কীভাবে যাবেন সেই বিষয়টি নিয়ে রয়েছে সংশয়।" ROTTO-র এই জয়েন্ট ডিরেক্টর বলেন, "এই পরিস্থিতি চিরদিন চলতে পারবে না। তাই ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে। তবে, সরকারি ওই নির্দেশ অনুযায়ী, ইমারজেন্সির সময় কিছু ক্ষেত্রে এই দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে। যদিও, ইমারজেন্সির ভিত্তিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা এই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।" বিষয়টি নিয়ে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক প্রতীম সেনগুপ্ত বলেন, "কিডনি বা অন্য (হার্ট, লিভার) অঙ্গ প্রতিস্থাপন এমন এক চিকিৎসা ব্যবস্থা, যার জন্য অঙ্গ গ্রহীতার ইমিউনো কম্প্রোমাইজ করতে হয়। যেহেতু COVID-19-এর এপিডেমিক চলছে, তাই এখন কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে যদি কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়, তা হলে অপারেশনের সময় এবং অপারেশনের পর অঙ্গ গ্রহীতার সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে। এমনকি তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।"

অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসাতে বাধা কোরোনার...

লকডাউনেও কী মিলছে ডোনার ?

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় কোনও জখমের ব্রেন ডেথ ঘোষণার পরে, তাঁর অঙ্গ অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য পরিজনদের সম্মতিতে নেওয়া যায়। দুর্ঘটনা বাদেও অন্য কারণে কোনও রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে, সেই রোগীর পরিজনদের সম্মতিতেও তাঁর অঙ্গ অন্য রোগীদের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য নেওয়া যেতে পারে। যদিও এ সব ক্ষেত্রে দেখে নেওয়া হয় ব্রেন ডেথ ঘোষিত রোগীদের অঙ্গ, অন্য রোগীদের শরীরে প্রতিস্থাপনেরযোগ্য কি না। তবে , ইদানীং লকডাউনের কারণে দুর্ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে। হাসপাতালে অন্য রোগীদের ভিড়ও কম রয়েছে। তার উপর, এই দুই ক্ষেত্রেই ডোনারের শরীরে COVID-19-এর সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে। তবে শুধুমাত্র এমন নয়। ব্রেন ডেথ ঘোষণার জন্য টিমও থাকতে হবে। হাসপাতালগুলির পরিষেবা স্বাভাবিক না থাকলে ব্রেন ডেথ ঘোষণার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে । বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে SSKM হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "আগে ব্রেন ডেথ ঘোষণার জন্য আইন ছিল না‌। হার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এটা একজন চিকিৎসক ঘোষণা করতে পারেন‌। কিন্তু ব্রেন ডেথ ঘোষণা করতে হলে চিকিৎসকদের টিম দরকার।"

কোরোনা পরিস্থিতে ডোনার ছাড়াও আর কী কী অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের রোগীদের ?

এক চিকিৎসক বিষয়টি নিয়ে বলেন, "COVID-19 বড় বিপর্যয়। এটা অর্থনৈতিক বিপর্যয়, জীবনযাপনের বিপর্যয়। বহু মানুষের না খেতে পারার আশঙ্কা, জীবিকা হারানো সংশয় দেখা দিয়েছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন এখানে অঙ্গ প্রতিস্থাপন তো বিলাসিতার শামিল।" এই চিকিৎসক বলেন, "এখন ডোনারও নেই। চিকিৎসক-নার্সদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে COVID-19-এর চিকিৎসার জন্য। কোনও হাসপাতালে COVID-19-এর সংক্রমণ ধরা পড়লে আইসোলেশন এ চলে যেতে হচ্ছে অনেক চিকিৎসক-নার্সকে।"

কোরোনার কারণে কিডনি প্রতিস্থাপন পিছিয়ে দিলে ,কোনও অসুবিধা দেখা দিতে পারে ? এছাড়া প্রতিস্থাপন ছাড়া কোনও কী বিকল্প পথ আছে ?

বিষয়টি নিয়ে , চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী জানান, "COVID-19-এর এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যেও ইমারজেন্সি বেসিসে এ দেশে 2-3 জনের লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছে। তবে, কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের সময় পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে রয়েছে ডায়ালিসিস। লিভার এবং হার্ট প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বিকল্প চিকিৎসা নেই।" চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী বলেন, "যাঁদের দুটো কিডনি খারাপ, তাঁদেরকে ডায়ালিসিসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা যেতে পারে। কিন্তু, হার্ট এবং লিভারের ক্ষেত্রে এরকম ব্রিজ থেরাপি কিছু নেই। সেজন্য কিছু ক্ষেত্রে ইমারজেন্সিতে লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছে।"

জরুরি ভিত্তিতে যাঁদের হার্ট কিংবা লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন, তাঁদের কী হবে?

চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী বলেন, "যখন হার্ট, লিভার প্রতিস্থাপনের সুযোগ ছিল না, তখন যে অবস্থা ছিল, এখন সেই অবস্থা।" এই বিষয়ে চিকিৎসক প্লাবন মুখোপাধ্যায় বলেন, "ওষুধের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলে। মাঝে মধ্যে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।"

বর্তমান পরিস্থিতে হার্ট, লিভার, কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন এই রকম কত জন রোগী রয়েছেন এই রাজ্যে?

ROTTO-এর এই দুই জয়েন্ট ডিরেক্টর-ই জানিয়েছেন, এমন রোগীর সংখ্যা বলা মুশকিল। বিষয়টি নিয়ে পরিসংখ্যান দিয়ে চিকিৎসক প্রতীম সেনগুপ্ত বলেন, "দেশে দুই লাখ কিডনি রোগীর মধ্যে প্রত্যেক বছর আমরা ১০ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারি। শতাংশের দিক থেকে দেখতে হলে ০.১ বা ০.২ দুই শতাংশ। সুতরাং, প্রতিস্থাপন হচ্ছে না বলে কান্নাকাটি করার কিছু নেই। প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হলে ভালো। কিন্তু প্রতিস্থাপনের পরে যদি COVID-19-এর সংক্রমণ হয়, তখন আরও সমস্যায় পড়ে যাবেন রোগী। ডায়ালিসিসের মাধ্যমে তাও তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন। কিন্তু প্রতিস্থাপনের পরে ইমিউনো সাপ্রেশনের কারণে যদি COVID-19-এ আক্রান্ত হয় তাহলে অঙ্গ গ্রহীতাকে বাঁচানো সম্ভব নাও হতে পারে। এবং যিনি দাতা, তাঁর কিডনি নষ্ট হবে। তাঁরও জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। শুধুমাত্র তাই নয়। পরিবারের যাঁরা রোগীর দেখভাল করবেন, তাঁদেরকেও ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।"

তবে, লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে এবং COVID-19-এর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে, ফের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা পরিষেবা যখন শুরু হবে, তখনকার কথা ভেবেও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে চিকিৎসকদের। তাঁরা জানিয়েছেন, COVID-19-এর সংক্রমণ যাতে না ঘটে তার জন্য অনেক কিছু ভেবে চিন্তে আবার অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এর জন্য বেশ কয়েক মাস সময় বেশিও লাগতে পারে।

Last Updated : May 15, 2020, 9:04 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details