পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

নেতাজি না মমতা... অপমানিত হলেন কে ? তরজা তুঙ্গে - কলকাতায় নরেন্দ্র মোদি

নেতাজির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ধর্মীয় সুরসুরি দেওয়া রাজনৈতিক স্লোগান । আর তাও আবার যার সঙ্গে নেতাজির দূরদূরান্তেও কোনও যোগ নেই । মুখ্যমন্ত্রীকে উত্যক্ত করতে গিয়ে কি বিজেপি সমর্থকরা নেতাজিকেই অপমানিত করে দিলেন ?

Mamata Banerjee
ছবি

By

Published : Jan 24, 2021, 10:58 PM IST

কলকাতা, 24 জানুয়ারি : এ একেবারে ডেকে এনে অপমান । সরকারি অনুষ্ঠান । মঞ্চে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী । আমন্ত্রিত রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীও । সবার নজর ছিল অনুষ্ঠানের দিকে । নামে সরকারি অনুষ্ঠান হলেও রাজ্য-রাজনীতির নিরীখে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ । ভোটের আগে একমঞ্চে মোদি-মমতা । দিনভর লাইমলাইটে ভিক্টোরিয়া হাউজ় । কিন্তু হঠাৎ তাল কাটল । মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হতেই দর্শকাসনের এক প্রান্ত থেকে উড়ে এল জয় শ্রীরাম স্লোগান । বিরক্তিতে কোনওরকম ভাষণ না দিয়েই পোডিয়াম ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী ।

জয় শ্রীরাম স্লোগান কতটা রাজনৈতিক, কতটা ধর্মীয়... তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে । কিন্তু এই স্লোগান যে বঙ্গ রাজনীতির গৈরিক নৌকার পালে যথেষ্টই হাওয়া দিয়েছে তা স্বীকার করতে দ্বিধা করবে না মুরলিধর সেন স্ট্রিটও । এর আগেও একাধিকবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে 'রামনাম' নিতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি কর্মীদের ।

জগদ্দলের সেই ঘটনা হয়ত এখনও অনেকের মনে রয়েছে । তখন সবে লোকসভা ভোট শেষ হয়েছে । ঘাসফুলে ভরা বাংলায় অনেকটাই থাবা বসিয়ে দিয়েছে পদ্মফুল । মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সামনেই জয় শ্রীরাম তুলেছিলেন বিজেপি সমর্থকরা । তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । গাড়ি থেকে নেমে চামড়া গুটিয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ।

কিন্তু গতকালের ছবিটা ছিল পুরো উল্টো । একেবারে 'মৌনতা' ধারণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী । বিগত প্রায় এক দশক ধরে যে 'জ্বালাময়ী' ভাষণে বিরোধীদের কার্যত দুরমুশ করে দেওয়ার জন্য পরিচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গতকাল তিনি যেন আশ্চর্যজনকভাবে নীরব । আজ আর বললেন না, "বুকের পাটা থাকে তো সামনে এসে বল ।" না কাউকে বললেন, "ক্রিমিনাল", না দিলেন কোনওরকম ধমক । এ যেন এক অন্য মমতা !

আরও পড়ুন : নেতাজি তুমি কার ! দাবি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তৃণমূল-বিজেপি

বঙ্গ রাজনীতির আনাচে কানাচে এখন এই নিয়েই শুরু হয়েছে তর্জমা । কেউ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী চুপ থেকেই যোগ্য প্রতিবাদ করেছেন । কেউ আবার বলছেন, চুপ না থেকে সামনাসামনি জবাব দেওয়ার উচিত ছিল । সামনাসামনি জবাবটা তিনি হয়ত দিতেই পারতেন । স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখে বিজেপি অনুগামীদের তুলোধনা করতে কে না চায় । মুখ্যমন্ত্রীও হয়ত মনের অগোচরে একবার চেয়েওছিলেন আবার বলতে, "সাহস থাকে তো সামনে এসে বল ।"

কিন্তু তা করেননি । নেতাজিকে নিয়ে বাঙালির সেন্টিমেন্টটা ভালোই বোঝেন মমতা । তাই হয়ত নেতাজির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে আরও বেশি করে কালিমালিপ্ত করতে চাননি । তাই 'বেইজ্জত' হয়েও চুপচাপ পোডিয়াম ছেড়ে আসনে গিয়ে বসেন ।

গতকালের ঘটনার পর রাজ্য বিজেপি অবশ্য বলছে 'রামনামে' এত উত্তেজিত হওয়ার কী আছে ! বিজেপি যতই সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করুক, মমতা কিন্তু পাশে পেয়েছেন বাম-কংগ্রেসকে । রাজনৈতিক বিভেদ থাকলেও মমতার পাশে দাঁড়িয়ে এককাট্টা হয়েছেন অধীর-বিমানরা । গতকালের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর পদের গরিমাকে অপমান করা হয়েছে বলে মনে করছেন অধীর চৌধুরি । সিপিএম নেতা বিমান বসু জানিয়েছেন, সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী পালনের সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে যেভাবে স্লোগান তোলা হয়েছে তা অনুচিত । মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ দেওয়ার সময় এই অন্যায় কাজ করা হয়েছে । রাজ্যের পক্ষে মর্যাদাহানিকর কাজ হয়েছে । এই ঘটনা নিন্দনীয় ।

আরও পড়ুন : হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুন মুখ্যমন্ত্রী, কটাক্ষ রাহুলের

তবে বিষয়টিকে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব না দিলেই সমীচীন হত বলে মনে করছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা । রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, "মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল সমগ্র বিষয়টি উপেক্ষা করা । প্রধানমন্ত্রীর সামনে পাল্টা জবাব মুখ্যমন্ত্রী দিতে পারতেন । তবে তিনি মনে করছেন প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখবেন না । এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সরকারি অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা অপ্রীতিকর বটেই । তবে রাষ্ট্রনেতার সামনে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল বিষয়টিকে উপেক্ষা করে, সক্রিয় হাতে মোকাবিলা করা ।"

মুখ্যমন্ত্রীকে একই পরামর্শ দিচ্ছেন বিমানও । বলছেন, গতকালের ঘটনা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষিপ্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই । কারণ মুখ্যমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হবেন জেনেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই গতকালের ঘটনা ঘটানো হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল উপেক্ষা করে তার বক্তব্য পেশ করা । সেই বক্তব্যের মাধ্যমে কড়া জবাব দিতে পারতেন ।

এই সবের পাশাপাশি, আরও একটি প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে, মুজফ্ফর আহমেদ ভবন থেকে প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তর । তা হল, গতকালের ঘটনায় অপমানিত হলেন কে ? মুখ্যমন্ত্রী... নাকি নেতাজি ? গতকালের অনুষ্ঠান না ছিল নরেন্দ্র মোদির, না ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । যাঁর জন্য এই অনুষ্ঠান ছিল, যাঁর স্মৃতিতে গতকাল সন্ধেয় ভিক্টোরিয়ার বাইরে এত আলোকচ্ছটা.. প্রোজেকশন ম্যাপিং... সেই নেতাজিকেই কোথায় ছোটো করা হয়ে গেল না ? কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে কোনও ধর্মের সুরসুরি দেওয়া রাজনৈতিক স্লোগান দেওয়ার রীতি আগে কখনও ছিল না ৷ বিশেষ করে নেতাজির সঙ্গে এর কোনও যোগাযোগই নেই ৷

আরও পড়ুন : ‘অসভ্য’ দর্শকরা জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়েছেন, সমালোচনায় তৃণমূল

গতকালের অনুষ্ঠানে দর্শকাসনের যেদিক থেকে এই ধরনের 'অভব্য' স্লোগান উড়ে এসেছিল, তার কাছাকাছিই ছিলেন রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু নেতানেত্রীরা । রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের কথায়, রাজ্যে বিজেপির ক্ষমতা বাড়ছে । পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত করছে বিজেপি । কিন্তু তেইশে জানুয়ারির প্রতি আপামর বাঙালির যে শ্রদ্ধা রয়েছে, তাতে আঘাত এলে পায়ের তলার মাটি হারাতে বেশি সময় লাগবে না পদ্মশিবিরের ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details