কলকাতা, 23 সেপ্টেম্বর : কোরোনা আবহে অন্যান্য বহু পরীক্ষার মতোই পিছিয়ে গেছে চলতি বছরের সর্বভারতীয় ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (UGC-NET)। সম্প্রতি পরীক্ষার নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছে UGC-NET পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (NTA)। আর সেই নির্ঘণ্ট দেখেই চোখ কপালে উঠেছে বাংলার শিক্ষা মহলের । কারণ, চলতি বছর দুর্গোৎসবের দিনগুলিতে NET-এর একাধিক বিষয়ের পরীক্ষা ফেলেছে NTA । দুর্গাপুজোয় সর্বভারতীয় পরীক্ষার দিন স্থির করা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজ্যের শিক্ষা মহল । তারা মনে করছে, আঞ্চলিকতাকে উপেক্ষা করছে কেন্দ্রীয় সরকার ও NTA ।
NTA প্রকাশিত জুন মাসের UGC-NET পরীক্ষার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, চলতি বছর 24 সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে পরীক্ষা । চলবে 5 নভেম্বর পর্যন্ত । এরই মধ্যে অক্টোবর মাসে একাধিক পরীক্ষার দিনের মধ্যে রয়েছে 21, 22 ও 23 তারিখ । পঞ্জিকা মতে, 21 অক্টোবর মহাপঞ্চমী, 22 অক্টোবর মহাষষ্ঠী ও 23 অক্টোবর মহাসপ্তমী রয়েছে । ফলে, ওই সময় গোটা বাংলার দুর্গোৎসবে মেতে ওঠার সময় । শুধু তাই নয়, ওই সময়কালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয় নবরাত্রি উৎসবও । রাজ্যের শিক্ষা মহলে প্রশ্ন উঠছে, উৎসবের দিনগুলিতে কী করে পরীক্ষা ফেলল NTA? শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের মতে, আঞ্চলিকতাকে উপেক্ষা করে হচ্ছে ।
তিনি বলেন, "কেন্দ্রে যাঁরা এইসব পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন, এখন ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি হয়েছে, তাঁদের তো জানা উচিত যে বিভিন্ন রাজ্যে, বিভিন্ন ধর্মের উৎসবগুলি কখন হয়, কখন ছুটি থাকে । NTA-র জানা থাকা উচিত যে পশ্চিমবাংলায় কখন দুর্গাপুজো হচ্ছে ৷ কখন গুজরাতে নবরাত্রি হচ্ছে ৷ সেই সময়ে কোনও ধরনের পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ ফেলা উচিত নয় । উৎসবের সময় ছেলে-মেয়েরা মেতে ওঠেন, তাঁদের পারিবারিক, সামাজিক ব্যাপার থাকে । তারমধ্যে পশ্চিমবাংলায় যখন দুর্গাপুজো চলবে, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, সেই সময়ে NET পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, এটা দেখে খুব অদ্ভূত লাগছে । ভারতের একটা সার্বিক ঐতিহ্য আছে । আবার ভারতবর্ষের অনেকগুলো আঞ্চলিক ঐতিহ্য আছে । ভারত তো একটা জাতি নয়, মহাজাতি । অনেকগুলি জাতির সংস্কৃতির সমাগম । এই খবর না রেখে হঠাৎ করে একটা পরীক্ষা চাপিয়ে দিচ্ছে ৷ মনে হয়, অদ্ভুত একটা কেন্দ্রীকতা চলছে, আঞ্চলিকতাকে উপেক্ষা করে । এটা আমার কাছে অত্যন্ত অসঙ্গত মনে হয়েছে। যাঁরা এই বিষয়ে কর্তা রয়েছেন তাঁরা আদৌ কিছু জানেন কি না, নাকি ক্ষমতার সুখে তাঁরা এতটাই উদাসীন, যে এইসব বিবেচনা করার তাঁদের সময় নেই ! খুব আশ্চর্য লাগছে, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমীতে NET পরীক্ষা ! "
অধ্যাপক ও পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেন, "আমাদের এই পুজো পর্বের যে দিনগুলো, এগুলো একটা সময় ছিল, যখন সরকার যথেষ্ট পরিমাণ খেয়াল করত ৷ এটা আমি ভালোভাবেই জানি, যে তারা দেখে নিত কী আছে, কী নেই এই সময়ে । এখন সেভাবে হচ্ছে না । হয়ত তারা ভেবে নিচ্ছে, সবটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে ৷ এবং মানুষের জন্য কিছু ভাবার নেই । মানুষ কী ক্রিয়াকর্ম করছে, তাদের পুজো-পার্বণ কিচ্ছু খেয়াল করার দরকার নেই । এটা যদি করা হয় তাহলে আস্তে আস্তে তারা মানুষের দিক থেকে সরে যাবে । এটার ফল কিন্তু খুব ক্ষতিকর দাঁড়াবে । "
শুধু উৎসবের জন্যই নয়, ওই সময় পরীক্ষা ফেলায় বাস্তবসম্মত কিছু সমস্যা হতে পারে রাজ্যের NET পরীক্ষার্থীদের । UGC-NET-এর বাংলা বিষয়ের পরীক্ষার্থী মালদার অন্বেষা কুণ্ডু বলেন, "গতকাল NTA প্রকাশিত NET-এর নির্ঘণ্ট দেখে জানতে পারি, বাংলা বিষয়ের পরীক্ষাটি জুন মাস থেকে পিছিয়ে 22 অক্টোবরে ফেলা হয়েছে । সেদিন বুধবার, ষষ্ঠী । দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীতে বাংলার চিত্র, সর্বোপরি কলকাতার চিত্র সম্পর্কে সবাই অবগত । ট্রেন-বাস-মেট্রোর যে চিত্র এবং রাস্তায় উপচে পড়া ভিড়, আমরা জানি । এরমধ্যে দুপুর 3টে থেকে সন্ধে 6টার স্লটে পরীক্ষা দিতে যাওয়া ৷ এতজন ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে কতটা সম্ভব হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায় । আমি থাকি মালদায় । কলকাতায় পড়াশোনার সুবাদে থাকি । দুর্গাপুজোর সময় সবাই বাড়ি ফিরে যায় এবং সেইমতো আমিও বাড়ি ফিরি । উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে যাওয়ার মতো মাত্র একটি ট্রেন চলছে৷ সেখানে সংরক্ষণের বিষয়ও থেকে যায় । টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমীতে কোনও টিকিট নেই । আমি চতুর্থী অর্থাৎ 20 অক্টোবরের টিকিট পাই । এখন জানতে পারছি 22 অক্টোবর আমার পরীক্ষা রয়েছে ! এবার আমার মতো অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর কীভাবে বাড়ি ফিরবে ?"