কলকাতা, 15 জুন : নারদ মামলা রাজ্য থেকে অন্যত্র সরানোর আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই । সেই আবেদনের ওপর শুনানি চলছে কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে ।
শুনানি চলাকালীন আজ মদন মিত্রর আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা বলেন, "গ্রেফতারি তদন্তের অংশ । কিন্তু সিবিআই আগেই জানিয়েছে যে নারদ মামলার তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে । তাহলে, গ্রেফতারের কোনও মানে হয় ?"
তিনি আরও বলেন, " গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি । আইন অনুমোদন দেয় না এই ধরনের গ্রেফতারির ।" একইসঙ্গে তাঁর যুক্তি," করোনা পরিস্থিতির জন্য অনেক আগেই রাজ্য সরকার অভিযুক্তদের আদালতে ভার্চুয়ালি পেশ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করেছিল । তাই সিবিআই যে কথা বারবার বলছে, তাঁরা অভিযুক্তদের আদালতের সামনে পেশ করতে পারেনি এবং সেই কারণে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন ... তা ঠিক নয় । গ্রেফতার ত্রুটিপূর্ণ হলে জামিন তো হবেই ।"
সিদ্ধার্থ লুথরার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন ,"আপনার মতে গ্রেফতারি বেআইনি । কারণ সিবিআই প্রয়োজনীয় অনুমতি নেয়নি । 41 (এ)-তে নোটিস পাঠানো হয়নি... তাই তো?"
এর উত্তরে লুথরা বলেন , "সিবিআই একটি নিয়মের দ্বারা চালিত হয় । বিভিন্ন নির্দেশনায় বলা আছে যে এই নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক । এখানে তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে । অভিযুক্তরা সিবিআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। এরপরেও গ্রেফতারির কোনও মানে হয় ?"
তিনি আরও বলেন , "প্রতিটি ধাপে সিবিআই তাদের মামলাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে । প্রথমে বলছে, তারা সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের কাছে কোনও নথি পেশ করতে পারেনি । পরে দেখা গেল যে জামিনের নির্দেশ দেওয়ার আগেই তারা সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে চার্জশিট পেশ করেছে ।"
লুথরা বলেন," সিবিআই বারবার জানিয়েছে নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়া সেদিন প্রভাবিত হয়েছিল । কিন্তু সিবিআই আদালতের বিচারক সেদিন নিজের চেম্বারে বসে মামলার শুনানি করেছিলেন । সেখানে কেউ উপস্থিত ছিলেন না । ভার্চুয়ালি সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল ।"
এরপর বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন," চার্জশিট পেশের পরেও গ্রেফতারি হতে পারে, যদি চার্জশিটে সেরকম কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাওয়া যায়।"
আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা দিল্লি হাইকোর্টের একটি মামলা যেখানে আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলাটি দায়ের করেছিল তাঁর নির্দেশে একটি অংশ উল্লেখ করে দাবি করেন, তদন্ত শেষ হওয়ার পরে হেফাজতে নেওয়ার কোনও মানে নেই ।
তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, " দিল্লি হাইকোর্ট ওই নির্দিষ্ট মামলাটি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তখনই গ্রহণ করেছিল যখন নিম্ন আদালতে চার্জশিট খারিজ করে দিয়েছিল । আপনি কি এটাই বলতে চান যে সিবিআইয়ের কাছে বিকল্প পন্থা আছে এবং তাই স্বতপ্রণোদিত পদক্ষেপ করা যাবে না ?"
এর উত্তরে সিদ্ধার্থ লুথরা বলেন," সিবিআই এবং অভিযুক্ত সবার কাছে বিকল্প পন্থা আছে । কিন্তু আদালত ইতিমধ্যেই তার বিচার অধিকার প্রয়োগ করেছে ।"
তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবার বলেন ,"যেহেতু আমরাই মামলা দীর্ঘদিন শুনছি তাই আপনাকে আমরা বলছি , কেন ডিভিশন বেঞ্চ ? কেন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ? কেন চিঠি ? এগুলি আমরা দীর্ঘদিন থেকে আপনাদের থেকে শুনেই যাচ্ছি ।"
তিনি বলেন ,"সিবিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পর একটা চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি হয় । এক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই হয়েছে । তাহলে গ্রেফতারের প্রয়োজন টা কী?"
লুথরা আরও বলেন, "সিবিআই আদালতের বিচারক কোথাও উল্লেখ করেননি যে বিক্ষোভের কারণে বাধা সৃষ্টি হয়েছে । 17 মে-র নির্দেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ । একজন বিচারক যখন কিছু নির্দেশ দেন সেটা চূড়ান্ত নির্দেশ । জুডিশিয়াল অর্ডারের অনুবাদ করা নজিরবিহীন ।"
এরপর আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা বলেন," আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন সিবিআই দফতরে ঢুকেছিলেন । তার মক্কেলের সঙ্গে আইনি পরামর্শ ও সাহায্য করতে ।"
তিনি বলেন," সিবিআই অনৈতিক কাজ করছে । যদি তারা এই মামলায় আরও তদন্ত করতে চায় তাহলে সেটা নিয়ম অনুযায়ী করা উচিত । কিন্তু সিবিআই এই ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের কোনও অনুমতি নেয়নি ।"
তখন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন ,"এখন আমরা গ্রেফতারির আইনি দিক নিয়ে বিবেচনা করছি না । অহেতুক বক্তব্য দীর্ঘায়িত না করলেই কি নয়?"
এর প্রত্যুত্তরে সিদ্ধার্থ লুথরা ফের বলেন ,"আমাদেরকে আদালতের নির্দেশের আইনি বিরোধিতা করতে হবে সেটা নিশ্চয়ই রাস্তায় কী ঘটেছে তার ভিত্তিতে বিচার্য নয় ? সংবাদপত্রের রিপোর্টের ভিত্তিতে নিশ্চয়ই আমরা আদালতকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি না !"
এরপরই আজকের মত মামলার শুনানি শেষ হয় । আগামিকাল সকালে ফের শুনানি এই মামলার ।