কলকাতা, 4 ডিসেম্বর:এ এক কফি বিক্রেতার গল্প । দক্ষিণ কলকাতার একটা বড় অংশের মানুষ তাঁকে অবশ্য অন্য এক পরিচয়ে চেনেন । তিনি ঢপেশ্বর মহারাজ । ভালো নাম অবশ্য একটা আছে । বাবা-মা তাঁকে ভালো নাম দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ দে । কিন্তু টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনের রাস্তায় সন্ধে ছ'টা থেকে 10টা যাঁকে রোজদিন দেখা যায়, তাঁকে বেশিরভাগ মানুষই চেনেন ঢপেরশ্বর মহারাজ নামে । এখানে নামের পেছনে অবশ্য অন্য একটা রহস্য আছে । ইনি এমন একজন কফি বিক্রেতা, যাঁর সৃষ্টিশীল কাজ প্রতিদিন মহানগরের একটা বড় অংশের মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেয় । সারাদিনের হাজার ব্যস্ততা, স্ট্রেস, ঘটনাবহুল নগর জীবনের মাঝেও যেখানে এলে মানুষ খুঁজে পায় এক অন্য সময়ের সন্ধান ।
শ্যামাপ্রসাদ দে প্রথম জীবনে চেয়েছিলেন কার্টুনিস্ট হতে । আঁকার হাতও নিতান্ত মন্দ নয় । মন্দ নয় তাঁর ভাবনা এবং সৃজনশীলতাও । কিন্তু প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে তাঁর আর কার্টুনিস্ট হয়ে ওঠা হয়নি । যিনি হয়তো সুযোগ পেলে সংবাদমাধ্যমে হাজার কাজের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াতে পারতেন, তিনি তাঁর জীবনকে বইয়ে দেন অন্য খাতে । সৃষ্টিশীল কার্টুনকে দূরে সরিয়ে রেখে ম্যাগাজিন ব্যবসাকে বেছে নেন পেট চালানোর জন্য । কিন্তু কার্টুন বা তাঁর আঁকা, তাঁর ভাবনাকে তিনি ছেড়ে দেননি । আজ তিনিও কার্টুনিস্ট । কফি বিক্রির সঙ্গে চলে তাঁর কার্টুন চর্চা ।
যাঁরা এই চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে আসেন তাঁরা জানেন, অতীতে তিনি টালিগঞ্জের এই চত্বরেই পেপার ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন ৷ তার সঙ্গে ছবি আঁকতেন, কার্টুন তৈরি করতেন । কিন্তু সংকটের তখনও কিছু বাকি ছিল । এই সৃজনশীলতা এবং জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে বাধ সাধে করোনা । একটা সময় বন্ধই হয়ে যায় ম্যাগাজিন ব্যবসা । কারণ অতিমারি করোনা সংক্রমণের ছোঁয়াচ থেকে বাঁচতে সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল মানুষ । ফলে শ্যামাপ্রসাদ দে পড়লেন বিপাকে । পেট তো আর করোনা বোঝে না ৷ তাঁর সঙ্গে সংসার আছে, পরিবারের ভরণ পোষণ, মেয়ের পড়াশোনা । বাধ্য হয়েই সবকিছু ছেড়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হল তাঁকে । এখন সকালবেলায় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চা বিক্রি করেন শ্যামাপ্রসাদ দে । বিকেল বেলায় এই টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে ছোট্ট দোকানটিতে কফি বিক্রি করেন । আর তার সঙ্গেই চলছে তাঁর কার্টুন আঁকা এবং সৃজনশীলতার সাধনা । আজ যাঁরা তাঁর দোকানে আসেন, তাঁরা এই কার্টুন দেখে উদ্বুদ্ধ হন ৷ কখনও কখনও তাঁদের কার্টুন এঁকে দিয়েও হয় কিছুটা বাড়তি ইনকাম । আর এ সব নিয়েই আজ চলছে তাঁর জীবনযুদ্ধ ।