কলকাতা, 21 নভেম্বর : বিরাটির বিদ্যাসাগর সরণির বাড়িটায় তখনও সকলের চোখে-মুখে শোকের ছায়া । বাড়ির ছাদে প্যান্ডেল করা হচ্ছে । সাদা কাপড় আর ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে ছাদ । আগামীকাল বাড়িতে শ্রাদ্ধের কাজ রয়েছে । সেই তোড়জোর চলছে । আত্মীয়-পরিজনদের সবাইকে নিমন্ত্রণকে করা হয়েছে । অনেকে এসেও গেছেন বাড়িতে । এমনই একটা সময়ে গতরাতে হঠাৎ বাড়ির ফোনটা বেজে উঠল । ওপার থেকে গলাটা বলল, "আপনার রোগী সুস্থ আছে । এসে নিয়ে যান ।"
প্রথমটায় কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি পরিবারের লোকেরা । এই তো সেদিন দেহ সৎকার করে আসা হল । কাল ওই রোগীরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান । হাসপাতাল থেকে তাহলে কি বলছে !
বছর পচাত্তরের শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । 11 নভেম্বর তাঁর শরীরে কোরোনার হদিস মেলে । ভরতি করা হয় খড়দার GNRC হাসপাতালে । দু'দিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফোন । জানানো হয়, বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে । দেহও চলে আসে বাড়িতে । কোরোনায় মৃত্যু । গোটা দেহ প্লাস্টিকে মুড়ে বাড়িতে পাঠানো হয় । সেই অবস্থাতেই দেহ নিয়ে যাওয়া হয় শ্মশানে । সৎকারও করা হয় ।
শ্রাদ্ধের আগের দিন বাড়ি ফিরলেন কোরোনায় 'মৃত' বৃদ্ধ গতরাতে ফোনটা পাওয়ার পর থেকেই মনের মধ্যে উৎকন্ঠা বাড়তে শুরু করে পরিবারের সকলের । আর দেরি না করে গতরাতেই হাসপাতালে যান পরিবারের লোকেরা । পরিবারের কারও মাথা তখন ঠিকভাবে কাজ করছে না । হাসপাতাল পৌঁছাতেই তাজ্জব । বৃদ্ধ শিবনাথবাবু দিব্যি বসে আছেন হাসপাতালের বেডে । একেবারে সুস্থ । নিজেদের চোখকে তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না পরিবারের লোকেরা । সম্বিত ফিরতে কিছুটা সময় লাগল বটে । পরে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি নিয়ে আসা হয় সুস্থ শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে । আর এই নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে । ভুল করে যাঁর দেহ সৎকার করা হয়েছে, তিনিই বা কে ?
খড়দার বাসিন্দা মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায়কে 4 নভেম্বর ওই হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল । পরে শিবনাথবাবুর সঙ্গে তাঁর নথি অদল-বদল হয়ে যায় । অর্থাৎ, শিবনাথবাবুর নাম বসে যায় খড়দার রোগীর সঙ্গে । সেই রোগী মারা গেলে খবর পাঠানো হয় শিবনাথবাবুর বাড়িতে । দেহ সৎকারও হয় । আর এরইমধ্যে কোরোনামুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন শিবনাথবাবু ।
এদিকে গতকাল হাসপাতাল থেকে ফোন করা হয় মোহিনীমোহনবাবুর বাড়িতেও । বলা হয়, রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হবে । সেই মতো হাসপাতালে যান মোহিনীমোহনবাবুর পরিবারের লোকেরা । গিয়ে দেখেন, যাঁকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে, তিনি অন্য কেউ । কিন্তু হাসপাতালের ফাইলে ভোটার কার্ডের প্রতিলিপি থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্যই মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায়ের ।
মোহিনীমোহনবাবুর পরিবারের তরফে অভিযোগ আনা হচ্ছে হাসপাতালের গাফিলতির । হাসপাতালে তথ্য অদল-বদল হওয়ার পর শিবনাথবাবু বারবার নিজের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন । পরিবারের বক্তব্য সেইসময় হাসপাতাল থেকে মোহিনীমোহনবাবুর বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়েছিল, তিনি অসংলগ্ন কথা বলছেন । নিজেকে শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলে পরিচয় দিচ্ছেন । এরপর গতরাতে গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হয় ।