কলকাতা, 24 নভেম্বর:একদিকে খেজুরিতে যখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা রাষ্ট্রপতির অবমাননা ইসুতে আদিবাসীদের নিয়ে মিছিল করছেন, ঠিক তখনই বিধানসভায় (West Bengal Assembly) দাঁড়িয়ে বিরোধীদের যাবতীয় আক্রমণের জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ বৃহস্পতিবার খেজুরিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) প্রচারের অস্ত্র ছিল বিতর্ক ৷ অন্যদিকে, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর হাতিয়ার ছিল উন্নয়ন ৷ এদিন পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার কীভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করছে ৷ বিধানসভায় এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বর্তমান সরকার জনজাতি ও আদিবাসীদের পক্ষে রয়েছে ৷ জঙ্গলের অধিকার (Right to Jungle) আদিবাসীদের হাতেই সুরক্ষিত ৷" কাজেই তাঁদের হাতেই জঙ্গল সুরক্ষার দায়িত্ব তুলে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী ৷
এই ইস্যুতে এদিন ঠিক কী বলেছেন মমতা ? তাঁর কথায়, "আদিবাসীরা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৷ তাঁদের নানা ভাগ আছে ৷ সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্য আমরা কাজ করছি ৷ আমাদের আমলে আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ সাতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ কেন্দু পাতার দাম বাড়িয়েছি আমরা ৷ অরণ্যের অধিকার দিয়েছি অরণ্যেরই মানুষের হাতে ৷ তাঁদের জমি যাতে কেউ কেড়ে নিতে না-পারে, সেই ব্যবস্থা করেছে আমাদের সরকার ৷ বার্ধক্য ভাতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ৷ দুয়ারে সরকারে আমরা তাঁদের জন্য কাজ করছি ৷"
আরও পড়ুন:শাসক-বিরোধীর দলিত প্রেম সুপরিকল্পিত ভোট অংক, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "বর্তমানে শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ আছে তফসিলিদের জন্য ৷ তাঁরা টাকা পান ৷ তাঁদের হস্টেলের টাকাও এখন সরকারের তরফে দেওয়া হয় ৷ আগে এই নিয়ে অভিযোগ আসত ৷ তাই এখন সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয় ৷ তাঁদের জন্য সব সুবিধা দেওয়া হয় ৷" এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের কথাও বলেন মমতা ৷ তাঁর কথায়, "উত্তর ও দক্ষিণের আলাদা ভাবাবেগ আছে ৷ আমাকে সবটাই দেখতে হয় ৷ আমরা বাবা সাহেব আম্বেদকর ইন্সটিটিউট থেকে শুরু করে গুরুচাঁদ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয় করেছি ৷ আপনাদের আর কিছু সাজেশন থাকলে দেবেন ৷"
এদিন শংসাপত্র প্রদান নিয়েও মুখ খোলেন মমতা ৷ তিনি বলেন, "একসময় শংসাপত্র নিতে গেলে 50 বছর আগের বাবা-মায়ের শংসাপত্র দেখাতে হত ৷ কিন্তু সকলের পক্ষে সেটা দেখানো সম্ভব হত না ৷ আমরা এটা দেখেছি ৷ পরিবারের যে কারও এসসি, এসটি সার্টিফিকেট দেখাতে পারলেই তাঁকে সার্টিফিকেট দিয়ে দিই ৷ এসসি-এসটি-দের আইএএস, আইপিএস, ডব্লুবিসিএস পড়ার জন্য সবার ক্ষেত্রে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি ৷ বিদেশে পড়তে গেলে 20 লক্ষ টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছি ৷ আর কলকাতায় পড়তে এলে 10 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা আছে ৷"
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আদিবাসীদের নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে ৷ বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে (Droupadi Murmu) নিয়ে রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরির (Akhil Giri) মন্তব্যের পর থেকেই বিরোধীরা তা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছে ৷ এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, বিরোধীরা যতই সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার করুক, উন্নয়নের নিরিখে প্রকৃত 'আদিবাসী বন্ধু' আদতে তৃণমূলই !