কলকাতা, 13 নভেম্বর: কারা প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরির (Akhil Giri) রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত মন্তব্যের জেরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি ৷ মন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে আদিবাসী ও দলিতবিরোধী প্রমাণ করতে মাঠে নেমেছে বিজেপি ৷ এবার তারই পালটা প্রচারের সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল ৷ তার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে নীল নকশা ৷ সূত্রের দাবি, বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকার কতটা আদিবাসী এবং দলিত'দরদী', প্রচারে সেটাই তুলে ধরবে ঘাসফুল শিবির ৷ প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে আদিবাসীদের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় শাখা সারি ও সারনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাজ্য সরকার ৷ সেইসঙ্গে, এই ধর্মচারকে স্বীকৃতি দিতে কেন্দ্রকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে ৷ যদিও তাতে কেন্দ্রের তরফে সাড়া মেলেনি বলেই দাবি করা হচ্ছে ৷ বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রের এই অবস্থানই জনসমক্ষে তুলে ধরতে চায় তৃণমূল ৷ এই প্রচার যাতে সরাসরি আদিবাসী সমাজের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায়, তার নির্দেশ দিয়ে দলীয় বিধায়কদের 18 লাইনের একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷
সামনেই রয়েছে মমতার ঝাড়গ্রাম সফর (Mamata Banerjee Jhargram Visit) ৷ তার আগেই আদিবাসী ইস্যুতে বিজেপি যে তৃণমূল তথা মমতাবিরোধী প্রচার শুরু করেছে, তাকে ভোঁতা করতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী ৷ তিনি বোঝাতে চাইছেন, গেরুয়া শিবির আদতে আদিবাসীদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে ৷ সেই কারণেই তাঁদের ধর্মকে স্বীকৃতি দিতে গরিমসি করছে কেন্দ্র ৷ অন্যদিকে, আসন্ন বিধানসভা অধিবেশনে এই বিষয়ে বিল আনছে রাজ্য সরকার ৷
আরও পড়ুন:মুখ্যমন্ত্রী নিজে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চান, দাবি লকেটের
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতার পাঠানো 18 লাইনের চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আদিবাসীদের ধর্ম নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে ৷ প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝাড়গ্রাম সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে শাসকদলের সমর্থন ধাক্কা খেয়েছিল ৷ যদিও পরবর্তীতে বিধানসভা ভোটের সময় তা অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয় তারা ৷ সামনে আরও একটা ভোট ৷ তাই 18 লাইনের চিঠিতে মমতা ভোটপ্রচারের কৌশলও বাতলে দিয়েছেন !
উল্লেখ্য, আগামী মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তার আগেই আদিবাসীদের ধর্ম এবং বিজেপি-এর 'দ্বিচারিতা' নিয়ে প্রচার তুঙ্গে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিধায়কদের ৷ পঞ্চায়েত এলাকা ধরে ধরে প্রচার করতে বলা হয়েছে ৷ সেই মতো বহু জায়গায় কাজ শুরুও করে দিয়েছেন দলের স্থানীয় নেতা ও কর্মীরা ৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, "আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ সারনা ধর্ম ও সারি ধর্ম মেনে চলেন ৷ এই দুই ধর্মের স্বীকৃতি রাজ্যের আদিবাসী মা-ভাই-বোনদের দীর্ঘদিনের দাবি ৷ আদিবাসীদের এই দাবি পূরণের লক্ষ্য়ে কেন্দ্রীয় সরকার আজ পর্যন্ত কোনও ইচিবাচক ভূমিকা নেয়নি ৷ যদিও আদিবাসী সমাজের এই ভাবাবেগকে রাজ্য সরকার সবসময় সম্মান দিয়েছে ৷ সারি ও সারনা ধর্মের স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে 2020 সালে প্রথম চিঠি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে ৷ তারপরও একাধিকবার কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তারপরও কোনও উদ্যোগ নেয়নি ৷ কেন্দ্রীয় সরকার নীরব থেকেছে ৷ কিন্তু রাজ্য সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে ৷ সেই কারণেই 2022 সালের 6 জুলাই রাজ্য মন্ত্রিসভা এই বিষয়ের উপর একটি নির্দিষ্ট প্রস্তাব পাশ করেছে ৷ মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, উপজাতীয় সম্প্রদায়ের একটি অংশের জন্য সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে ৷ মন্ত্রিসভা আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্য বিধানসভায় এই মর্মে একটি বিলও আনা হবে ৷ রাজ্য সরকার সর্বদা রাজ্যের আদিবাসীদের আশা পূরণ করতে আগ্রহী ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সেই চেষ্টা নেই ৷ তাই আদিবাসীদের দাবিপূরণ হচ্ছে না ৷" এর পাশাপাশি রাজ্য সরকার আদিবাসীদের জন্য উন্নয়নমূলক যেসমস্ত কাজ করছে, তা নিয়েও বিধায়কদের প্রচার চালাতে বলা হয়েছে ৷