কলকাতা, 24 মার্চ: বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে একজোট করার চেষ্টা করছেন অনেকেই । বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতা তাদের মতন করে সেই চেষ্টা করেছেন । অরবিন্দ কেজরিওয়াল তাঁদের মধ্যে অন্যতম ৷ সাম্প্রতিক সময় দেখা গিয়েছে আপ প্রধানের এই অকংগ্রেসি-অবিজেপি শক্তিগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার এই প্রচেষ্টায় সাড়া দেয়নি সমাজবাদী পার্টি বা তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলি । একইভাবে নিজের মতো করে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন শরদ পাওয়ারও । কিন্তু সেখানেও মুখ ফিরিয়েছে অনেকেই ।
এই অবস্থায় বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব থেকে শুরু করে শুরু করে জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামী । রাজনৈতিক মহলের মতে, জাতীয় স্তরে যে মমতার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে এটা তার লক্ষণ ৷ ক্রমেই প্রমাণিত হচ্ছে বিরোধী শিবিরে অন্যতম গ্রহণযোগ্য মুখ সেই মমতাই ।
গত কয়েকদিনে প্রথমে অখিলেশ যাদব, তারপর নবীন পট্টনায়ক আর শুক্রবার কুমারস্বামীর সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোর সাক্ষাৎ । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাতীয় রাজনীতির পথে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে এই মার্চ মাস । সাগরদিঘির উপনির্বাচনের ফলের পর এই রাজ্যের ভোটে যখন সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি নিচু তলায় এক হওয়া নিয়ে যখন রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছিল, ঠিক তখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে ডাক দিয়েছিলেন বিজেপি এবং কংগ্রেসকে দূরে রেখে আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে এক হওয়ার (Mamata Banerjee meets kumaraswamy)।
রাজনৈতিক মহলে তখন প্রশ্ন উঠেছিল আদৌ কি কংগ্রেস এবং বিজেপি থেকে দূরে থেকে কোনও দলের পক্ষে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ সম্ভব? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান কার্যবিধি দেখে মনে হচ্ছে সেটা অসম্ভবও নয় ৷ এটা এমন এক সময় যখন, নিজের শক্তি দেখাতে গিয়ে বিরোধী নেতৃত্বকে এক জায়গায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন কেজরিওয়াল । একইভাবে এমন উদ্যোগ ধাক্কা খেয়েছে অপর প্রবীণ বিরোধী নেতা শরদ পাওয়ারের । কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই মমতার দরজায় এসে অখিলেশ যাদব এবং কুমারস্বামীর মতো নেতারা বুঝিয়ে দিলেন আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ক্ষমতা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের একাংশ অন্তত এমনটাই মনে করছে ৷
অন্য নেতাদের থেকে মমতা কোথায় আলাদা ? তাও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে এদিন । যে কংগ্রেসকে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের এত ক্ষোভ । যে তৃণমূলকে নিয়ে এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের এত বিরোধিতা । সেই কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কংগ্রেস নিয়ে বক্তব্য থাকলেও সেসব সরিয়ে রেখে বিজেপির এই পদক্ষেপের নিন্দা করে এবং রাহুল গান্ধির পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই মুহূর্তে বিরোধীদের গুরুত্বপূর্ণ মুখ । তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিরোধী অন্যান্যদের থেকে অনেক বেশি ।
আরও পড়ুন: বিরোধী ঐক্য, মমতা-কেজরিওয়াল-স্ট্যালিনদের একসূত্রে বাঁধলেন রাহুল !
প্রসঙ্গত শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুমারস্বামীর বৈঠকে শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে দুই রাজনৈতিক দলের তরফ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি । কিন্তু উড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে বৈঠকে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করার বার্তা দুই বিরোধী নেতা-নেত্রী দিয়েছিলেন, মনে করা হচ্ছে এদিনও সেই বিষয়টি আলোচনায় উঠেছে ৷ বিরোধীদের ওপর শাসক শিবিরের প্রতিহিংসার রাজনীতির প্রসঙ্গও উঠে থাকতে পারে । অন্তত জেডিএস সূত্রে তেমনটাই খবর । এখন প্রশ্ন এদিনের বৈঠক থেকে বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিলেন কি না, এই দুই নেতা-নেত্রী ৷