কলকাতা, 21 নভেম্বর: জেলার সরকারি হাসপাতাল থেকে থেকে প্রসূতিদের রেফার করার প্রবণতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সোমবার এক রিভিউ বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) ৷ তিনি জানিয়েছেন, রেফারের প্রবণতা কমাতে হবে ৷ যে চিকিৎসক রেফার করবেন প্রসূতি মৃত্যুর দায়িত্ব তাঁর ৷ চিকিৎসায় গাফিলতি বরদাস্ত নয় ৷
রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে 'রেফার রোগ'এর অভিযোগ বহুদিনের ৷ জেলা হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে প্রায় নিত্যদিনই অভিযোগ ওঠে নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে হাসপাতালগুলি গুরুতর অসুস্থ রোগী, প্রসূতি এমনকি সাধারণ রোগীদেরও কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করে দেন ৷ এই রেফারের জন্য মাঝপথে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাও নতুন নয় ৷ এবার এই 'রোগ' সামলাতে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
সোমবার নবান্ন সভাঘরে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে একটি রিভিও বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী । সেখানে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম রেফার-ব্যধিতে ভুগতে থাকা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি ৷ গোটা ব্যবস্থাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বদলাতে কড়া বার্তাও দিয়েছেন তিনি ৷ এ দিনের বৈঠকে রেফারের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি জানিয়েছেন, রেফারের প্রবণতা কমাতে হবে ৷ যে চিকিৎসক রেফার করবে প্রসূতি মৃত্যুর দায়িত্ব তাঁর ৷ চিকিৎসার জন্য আসা গর্ভবতী মায়েদের জীবন নিয়ে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না ৷
আরও পড়ুন: তোমার যদি বাপের ক্ষমতা থাকে..., শুভেন্দুকে আক্রমণে বেলাগাম শওকত
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কিছু চিকিৎসকের অমানবিক সিদ্ধান্তের ফল ভুগতে হচ্ছে মায়েদের । সঠিক সময় চিকিৎসা না পাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি হচ্ছে তাদের । এটা গ্রহণযোগ্য নয় । কেন প্রসূতিতের হাসপাতালে গিয়ে অপেক্ষা করতে হবে? কোনওরকম জটিলতা না থাকলেও অনেক সময় অযৌক্তিক কারণে রোগীদের কলকাতায় রেফার করে দেওয়া হয় ৷ এটা করা যাবে না । বহুক্ষেত্রে রোগীদের কলকাতায় গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় । অনেক সময় দেখা যায় মাঝ রাস্তায় প্রসব হয়ে মায়ের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছে, আবার অনেক সময়ে দীর্ঘ পথের ক্লান্তিতে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর আগেই গর্ভবতীর মৃত্যু হয় বা গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয় । তাই এই রেফার বন্ধ করতে হবে ।" ক্রিটিক্যাল কেস হলে হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শও দেন তিনি ৷
রাজ্যে পালা বদলের পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পুরনো হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি জেলায় জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করে গ্রামীণ মানুষদের চিকিৎসাকে আরও সুগম করার চেষ্টা করেছিল এই সরকার । কিন্তু বাস্তব হল এটাই যে, এখনও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষের জটিল চিকিৎসার প্রয়োজন এবং রোগীর গুরুতর অবস্থা হলেই তাঁদের দায়িত্ব নিতে চায় না জেলা হাসপাতালগুলি । এক্ষেত্রে তড়িঘড়ি তাদের রেফার করে দেওয়া হয় শহরে বড় হাসপাতালগুলিতে । বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় জেলা থেকে কলকাতায় আসার পথে কারও অবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়ে । বিশেষ করে প্রসূতিদের ক্ষেত্রে মাঝ রাস্তায় ডেলিভারির ঘটনা তো ঘটছে আকচারই ।
আরও পড়ুন: 'যাঁরা উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না, তাঁদের চোখে দু'ফোঁটা হারপিক দিতে হবে !' উদয়নের নিদানে ফের বিতর্ক
এদিন স্বাস্থ্য কমিশনের সাহায্যে রেফার নীতি তৈরির পক্ষেও সওয়াল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এক্ষেত্রে তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে সঠিক রেফার নীতির প্রণয়নের কথা বলেন । এদিন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, রেফার রোগ আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে রাজ্য । 8 শতাংশ থেকে কমে হয়েছে 4 শতাংশ । সমস্যা আরও কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি ৷ তবে এই ইস্যুতে এদিন স্বাস্থ্যসচিবকে কিছুটা নরমে-গরমে কড়া বার্তাও দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান । বলেন, "নারায়ণ তুমি খুবই ভালো মানুষ । তবে কিছু সময়ে কড়া হতে হবে । কেন সাপ্রাইজ ভিজিট করা হয় না? হাসপাতালে যান । আমাদের যেন গাফিলতি না হয় । গাফিলতি একটা অপরাধ । এটা সংশোধন করা প্রয়োজন ।" এদিন কার্যত চরবৃত্তি করে হাসপাতালে গাফিলতির বিষয়টি ধরার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷