কলকাতা, 8 ডিসেম্বর: এথিক্স কমিটির সিদ্ধান্ত আর সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজের পাশাপাশি তাঁকে বহিষ্কারও করা হয়েছে । আর মহুয়া মৈত্রের এই ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেল বিরোধীদের মধ্যে । খারিজ হয়ে গিয়েছে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর সংসদ সদস্য পদ। শুক্রবার এথিক্স কমিটির আনা সুপারিশেই সিলমোহর পড়েছে সংসদে ।
এই বিষয় এদিন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেস বালি চুরি,পাথর চুরি, গরু পাচার সব কিছুর সঙ্গে যুক্ত। এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এই নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করা উচিত তা করা হয়নি। পিসি-ভাইপো সেগুলি ধামাচাপা দিয়েছে। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওদের আপত্তি কারণ তিনি আদানির বিরুদ্ধে বলেছেন। 'ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন' বিষয়টা তো স্পষ্ট হল না ! বরং ওনাকে 'ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন'-এর জন্য অভিযুক্ত করা হয়নি। তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে যে, তিনি কেন নিজের লগ-ইন পাসওয়ার্ড অন্য কারও কাছে দিয়েছিলেন ! সংসদের মেল আদান-প্রদানের একটা গল্প সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়। এখানে আদানির বিরুদ্ধে তিনি বলেছেন বলেই এই পদক্ষেপ করা হল মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে।"
পাশাপাশি এই বিষয় প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, "এটা আসলে স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রকাশ। সংসদে এত বড় ঘটনা ঘটল শুধুমাত্র আদানির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। শাস্তি শোনানো হল, যে শাস্তির তদন্ত পর্যন্ত হল না ! এটা পুরোপুরি গণতন্ত্রের কন্ঠ রোধ করা হল। এমনকী এথিক্স কমিটির যে গোপনীয়তা রাখার কথা সেটাও রাখা হয়নি। দু'জন সাংসদ বাইরে এসে এই বিষয়ে কথা বললেন। ফাঁসির সাজা শোনানো হল কিন্তু তদন্তের আগেই। তিনি জানতে পারলেন না তাঁর অপরাধ কী ? এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে সুযোগটুকু দেওয়া হল না। এরা গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে হত্যা করেছে। সংসদে অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছিলেন, বিতর্ক হোক তবে সম্পূর্ণ রিপোর্ট পড়তে দু-তিন দিন সময় দেওয়া হোক। সেই সময় বা সুযোগটুকু দেওয়া হল না।"
এই বিষয় বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "আদানির বিরুদ্ধে উনি দর্শন হিরানিন্দনির হয়ে উনি কাজ করছিলেন। এটা কোনও যুক্তি হলো না। উনি যদি এই কাজটা অর্থের বিনিময়ে না করতে তাহলে সেটা মানা যেতো। চারটি দেশ থেকে আদনির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করা হয়েছে। আর যেই সব সেক্টরে হীরানন্দনিরা ব্যবসা করছেন সেইসব ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রশ্ন করা হয়েছে। এফিডেভিড জমা দিয়েছেন তাঁরা। এটা এখন প্রমাণিত। এই ধরনের কাজ দেশবিরোধী, সংসদ বিরোধী । তার ফল যেটা হওয়ার সেটাই হয়েছে। এথিক্স কমিটির মহুয়া মৈত্র কে ডেকে তার কথাও শুনেছে।"
দিলীপ ঘোষ আর বলেন, "এথিক্স কমিটি মহুয়া মৈত্রকে ডেকে আগেই তাঁর কথা শুনেছিলেন । আর এটাই নিয়ম। সেখানেও তিনি কিছু কাজের কথা বলেননি । সেখানে তিনি ঝগড়া করেছেন, অশোভনীয় আচরণ করেছেন এবং বেরিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে তিনবার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি তাঁর কথা না-বলে ঝগড়া করে গিয়েছেন। কমিটি সবাইকে ডেকে লিখিতভাবে তাদের বয়ান নিয়েছে। উনি দোষী তাঁর বক্তব্য শোনা হয়েছে তবে ওনার কোনও অধিকার নেই ক্রস এক্সামিন করার।"