পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কেদার থেকে কৃষ্ণনগর, বর্ণময় তাপস

1981 সালে সাহেবের জন্য ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পান । 1984 সালে হীরেন নাগ পরিচালিত অবোধ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে ডেবিউ করেন তাপস পাল । বিপরীতে ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত ।

ছবি
ছবি

By

Published : Feb 18, 2020, 8:41 AM IST

Updated : Feb 18, 2020, 3:15 PM IST

কলকাতা, 18 ফেব্রুয়ারি : শুরুটা করেছিলেন কেদার হয়ে ৷ আপাদমস্তক 'ক্যাবলা' কেদার হয়ে উঠেছিল বাংলা ছবির দর্শকের নয়নের মণি ৷ আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাপস পালকে ৷ উপহার দিয়েছেন একের পর এক হিট ছবি ৷ তরুণ মজুমদারের মতো বিখ্যাত পরিচালকের হাত ধরে কেরিয়ার শুরুর পর 70টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন ৷ মোটামুটি 2000 সাল পর্যন্ত ছিলেন বাঙালির 'সুপার হিরো' ৷

2009 সালে জীবনে মোড় এল অভিনেতা তাপস পালের ৷ যদিও ততদিনে রাজনীতির আঙিনায় পরিচিত মুখ ৷ আলিপুর কেন্দ্র থেকে পরপর দু'বারের বিধায়ক ৷ কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হলেন ৷ যে তাপস পাল রিল লাইফে সাদাসিধে মানসিকতার জন্য সবার মন জয় করেছিলেন, তিনিই উঠে এলেন শিরোনামে ৷ বিতর্কিত মন্তব্যের মাঝে কোথাও যেন হারিয়ে যেতে থাকল সেই কেদার আর সাহেব ৷ সমালোচকরা বলেন, তাপসের পতন শুরু সেই থেকেই ৷ নিজের কিছু মন্তব্যের জন্য পরে ক্ষমাও চেয়েছেন ৷ কিন্তু ততদিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে ৷

এরপর জড়িয়ে পড়েন চিটফান্ডকাণ্ডে ৷ রোজ়ভ্যালি মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি ৷ আটের দশকের সেই সহজ-সরল ইমেজ ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে দর্শকের মন থেকে, তৈরি হয় নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ৷ ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন সবকিছু থেকে ৷ মৃত্যুর খবর শুনে তাই হয়ত চিরঞ্জিত বললেন, "জীবনের শেষের দিনগুলি ভালো কাটল না ওর৷"

অভিনেতা তাপস পাল

1958 সালের 29 সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্ম তাপস পালের । হুগলি মহসিন কলেজ থেকে বায়ো-সায়েন্সে স্নাতক । পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করেন । তবে গন্তব্য যেন অন্য কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছিল তরুণ তাপসের জন্য । 1980 সাল । তরুণ মজুমদারের হাত ধরে দাদার কীর্তির মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে পা রাখলেন । পরের বছরই কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি সাহেব । বিজয় বসুর পরিচালনায় এই ছবিতে উৎপল দত্তের বিপরীতে তরুণ তাপসের অভিনয় ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিল । সাহেবের জন্য 1981 সালে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার । এরপর 1984 সালে হীরেন নাগের সিনেমা 'অবোধে'র হাত ধরে বলিউডে অভিষেক, বিপরীতে মাধুরী দীক্ষিত । অবোধ মাধুরী দীক্ষিতেরও প্রথম ছবি । তবে বলিউড বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি তাপসকে । 1985-তে ফের বাংলায় ফেরা, আবারও তরুণ মজুমদারের হাত ধরে ভালোবাসা ভালোবাসা ছবিতে দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে । অভিনয় করেছেন অর্পণ, সুরের সাথী, সুরের আকাশে, মায়াবিনী তবু মনে রেখো, গুরুদক্ষিণার মতো একাধিক সুপারহিট ছবিতে । 1987-তে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি গুরুদক্ষিণার পরিচালক ছিলেন অঞ্জন চৌধুরি । একটি সাক্ষাৎকারে অঞ্জন চৌধুরি জানিয়েছিলেন, সেই বছর পুজোর সময়ে বাংলার এমন কোনও মণ্ডপ ছিল না যেখানে "এ আমার গুরুদক্ষিণা" গানটি বাজেনি । সরল 'সাহেব' শুরুতে আপামর বাঙালির আবেগের সঙ্গে মিশে গেছিল । গুরুদক্ষিণা, মঙ্গলদীপ নিয়ে যেন গ্রাম-বাংলার ঘরের ছেলে হয়ে গেলেন তিনি । তবে শুধু বাণিজ্যিক ছবি নয়, অভিনয় করেছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর মন্দ মেয়ের উপাখ্যান এবং উত্তরার মতো ছবিতেও । উত্তম-সৌমিত্র পরবর্তী সময়ে বাংলা সিনেমায় রঞ্জিত মল্লিক, সুখেন দাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাপুটে অভিনয় করে গেছেন । সেই সময় কয়েকবছর রুপোলি পর্দায় একচেটিয়া রাজত্ব করেছেন তাপস । প্রথমে দেবশ্রী পরে শতাব্দীর সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল সুপারহিট । যাত্রামঞ্চেও বাংলার দর্শকদের মন জিতেছিলেন তাপস পাল । 2000-র পর সিনেমা থেকে রাজনীতির দিকে বাঁক নিল তাপস পালের কেরিয়ার । পাশাপাশি সিনেমাও চালিয়ে গেছেন । নতুন প্রজন্মের হিরো দেব-জিতের সিনেমাতেও তাঁর অভিনয় দর্শকের বিপুল হাততালি কুড়িয়েছে । কখনও রাফ অ্যান্ড টাফ পুলিশ অফিসার কখনও বাবা, আবার কখনও বড়দার চরিত্রে সমানভাবে উজ্জ্বল তাপস । শেষের দিকে আটটা আটের বনগাঁ লোকালের মতো সিনেমাও উপহার দিয়েছেন সিনে প্রেমীদের । রূপোলি পর্দায় চূড়ান্ত সফল তাপস পাল দর্শকের চাহিদায় একসময় বেছে নিয়েছিলেন যাত্রামঞ্চ । 2018-তে ফের ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়ার জন্য তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল নেট দুনিয়া । পরিচালক দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি২ টাকা । মুখ্য ভূমিকায় তাপস পাল । ছবির বিষয়বস্তু ছিল আর্থিক দুর্নীতি । তারপরে আর সেভাবে দেখা যায়নি তাঁকে ।

সাহেব সিনেমায় তাপস পাল

রাজনীতিতে তাপস পাল

তাপস পালের রাজনীতিতে পদার্পণ 2001-এ । 2001-2006 ও 2006-2009, দু'দফায় আলিপুর বিধানসভা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন । কৃষ্ণনগর থেকে দু'বারের তৃণমূল সাংসদ ছিলেন। কৃষ্ণনগরে দ্বিতীয় দফায় সাংসদ হওয়ার পর একাধিক বার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি । কখনও নিজের লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, কখনও বিরোধীদের উদ্দেশে উসকানিমূলক মন্তব্য করে তৈরি করেছেন বিতর্ক । ধীরে ধীরে দলের সঙ্গে বাড়তে থাকে দূরত্ব । 2016 সালের ডিসেম্বরে রোজ়ভ্যালিকাণ্ডে গ্রেপ্তার হন তাপস । 13 মাস পর ছাড়া পেয়ে আর সেভাবে তাঁকে দলের কাজে দেখা যায়নি । জানিয়েছিলেন, তিনি অসুস্থ । স্ত্রী নন্দিনী পাল এবং মেয়ে সোহিনী পালের কথাই মনে পড়ত কারাবাসের সময়ে । সেকথাও জানিয়েছিলেন ।

গুরুদক্ষিণা ছবির একটি মুহূর্তে তাপস পাল

আজ ভোররাতে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি । পরিবারের তরফে জানা গেছে স্নায়ুর রোগে ভুগছিলেন তিনি । 28 জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন । পরে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে । 6 ফেব্রুয়ারি ভেন্টিলেশন থেকে বের করা হয় । শেষমেশ গতরাতেই থেমে গেল কেদারের লড়াই ।

Last Updated : Feb 18, 2020, 3:15 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details