পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বিখ্যাত থেকে বিতর্কিত! বাংলার যে বিশিষ্টরা রয়ে গেলেন স্মৃতির পাতায়, ফিরে দেখা সেই ক্যানভাস - 2023

Death of Eminent Persons in 2023: তেইশের পর চব্বিশ ৷ ফেলে আসা বছর ফিরে না এলেও তাঁরা বার বার ফিরে আসবেন 'স্মৃতির অতল তলে....'।

Death of Eminent Persons
Death of Eminent Persons

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 31, 2023, 6:53 AM IST

Updated : Dec 31, 2023, 10:48 AM IST

হায়দরাবাদ, 31 ডিসেম্বর: 'যাওয়ার বেলা....' কেউ রেখে গেছেন সুখ-স্মৃতি, কেউ বা বিতর্ক । তারপরেও থেকে যায় স্মৃতিটুকুই। 2023 সালে বাংলা হারিয়েছে বেশ কয়েকজন বিশিষ্টদের । যাঁরা বাঙালির মননে থেকে যাবেন চিরকাল।

অনুপ ঘোষাল

গুপীর কন্ঠ চিরঘুমে। বছর শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন অনুপ ঘোষাল । 15 ডিসেম্বর 2023,সঙ্গীতের ক্যানভাসকে ফিকে করেই চলে গেলেন সত্যজিতের প্রিয় গায়ক। বয়স হয়েছিল 78 ৷ তাঁর কন্ঠে সত্যজিতের ছবি যেন জীবনকে উদযাপনের বার্তা দিত । আহা কী আনন্দ ,দেখ রে নয়ন মিলে.... পায়ে পরি বাঘ মামা, ওরে হাল্লা রাজার সেনা....একের পর এক সত্যজিতের সৃষ্টিতে উদার কন্ঠে গেয়ে গেছেন অনুপ। তাঁর অবাধ সঙ্গীত যাত্রা থেমে থাকেনি, নজরুল গীতি থেকে শ্যামা সঙ্গীতেও সমান দক্ষতা রেখে গেছেন তিনি। হিন্দি গানেও তাঁর অবদান না ভোলার । গুলজারের কথায়, আর ডি বর্মনের সুরে - 'তুজসে নারাজ নেহি জিন্দেগি' আজও চিরন্তন । রাজনীতির ময়দানেও তাঁকে দেখা যায় 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে। প্রথমবার প্রার্থী হয়েই জয় আসে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে টিকিট দেন। উত্তরপাড়া বিধানসভা আসনে জয়ী হন অনুপ। যদিও পরবর্তীতে রাজনীতির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে গায়কের । 2011 সালে নজরুল স্মৃতি পুরস্কার, 2013 সালে সঙ্গীত মহাসম্মানে সম্মানিত হন মহান এই গায়ক ৷

সুমিত্রা সেন

" আজ মা ভোরে চলে গেলো... ", ফেসবুক পোস্ট সুমিত্রা কন্যা শ্রাবণী সেনের । রবীন্দ্রসঙ্গীতে শেষ হল 'সুমিত্রা যুগ'। কালজয়ী অধ্যায়ের ইতি 2023 সালের 3 জানুয়ারি। দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর প্রয়াত প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা সেন। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয়, বারো বছর আগে ঠিক একই দিনে প্রয়াত হন সুচিত্রা মিত্র। দুজনেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে 2012 সালে 'সঙ্গীত মহাসম্মান'-এ সম্মানিত করে ৷ তাঁর দুই মেয়ে ইন্দ্রাণী সেন ও শ্রাবণী সেন সঙ্গীত জগতে বিখ্যাত ৷ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্ষেত্রে সুমিত্রা সেনের অবদান কখনই ভোলা যাবে না ৷ রবীন্দ্র-গানের 'সুচিত্রা ঘরানা' যেমন মনমুগ্ধকর, তেমনই অন্য আবেগে ভাসায় 'সুমিত্রা ঘরানা'। সেই ধারা বজায় রাখছেন কন্যা শ্রাবণী সেন এবং ইন্দ্রাণী সেন। নব্বই ছোঁয়ার আগেই ইহলোক ত্যাগ করলেন সুমিত্রা সেন ।

সুভাষ চক্রবর্তী

না ফেরার দেশে 'লাল পাহাড়ি দ্যাশে যা' স্রষ্টা সুভাষ চক্রবর্তী । 24 ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন বিখ্যাত এই লোকসঙ্গীতশিল্পী । রাঢ় বাংলার টানে তাঁর লেখা ও সুর-লাল পাহাড়ির দ্যাশে যা, আজও বাংলার ঘরে ঘরে চলে। খুব বেশি প্রচারের আলোয় তাঁকে দেখা যায়নি । হয়ত বা থেকে গেছেন ব্রাত্য । বাঁকুড়ার মাটিতেই শিল্পীর জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা, গান রচনা থেকে সুরের সৃষ্টি । দীর্ঘ অসুস্থতায় কাবু হন সুভাষ। ভর্তি ছিলেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৷ 71 বছর বয়সে চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন সুভাষ চক্রবর্তী । রেখে গেলেন লাল মাটির আদি অকৃত্রিম স্মৃতি। বাঁকুড়া ছাড়তে চাইতেন না তিনি । সকলের আড়ালেও নিজের মাটিকে ছিলেন আঁকড়ে। গ্রাম বাংলার টান তাঁর লেখায় যেন প্রস্ফুটিত ।

সমরেশ মজুমদার

উত্তপ্ত সময়ের দুই চরিত্র অনিমেষ-মাধবীলতা ৷ তাঁদের ভালোবাসা ও লড়াই চলেছে সমানভাবে ৷ দুই চরিত্রের স্রষ্টা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার রেখে গেলেন সেই 'কালবেলা'৷ চলে গেলেন 79 বছরে ৷ 8 মে 2023, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিরঘুমের দেশে চলে যান সমরেশ । রেখে গেলেন সাতকাহন, গর্ভধারিনী, উত্তরাধিকার,কালপুরুষ ও কালবেলার মতো একাধিক অমোঘ সৃষ্টি । অনেকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সাহিত্যিক ৷ তবে তাঁর কলম কোনওদিনি থেমে থাকেনি । তিনি লিখে গিয়েছেন । জীবনের শেষ কটাদিনেও অসুস্থ অবস্থায় লিখতে চেয়েছিলেন সমরেশ । পারেননি, কারণ স্বাস্থ্য সঙ্গ দেয়নি। সমরেশ মজুমদারের লেখায় নতুন দিক পায় উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক পটভূমিকা। সাহিত্যিকের ছোট থেকে বড়বেলা কেটেছে উত্তরবঙ্গেই । তাই তাঁর লেখাতেও বার বার এসেছে চা-বাগান ও উত্তরবঙ্গ । পরবর্তীতে কলকাতায় এসে পড়শোনা, লেখালেখি । আগুনে লেখার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই অনাবিল এক স্বাধীনচেতা মনোভাবের নামই সমরেশ।

গৌতম হালদার

বাংলা সিনেমার জগতে তিনি প্রচারের আলোয় খুব বেশি আসেননি । তবে রেখে গেছেন তাঁর ছাপ । পরিচালক গৌতম হালদারের পরিচালনায় প্রথম বাংলা ছবিতে অভিনয় করেন অভিনেত্রী বিদ্যা বালান । 3 নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন পরিচালক গৌতম হালদার । বয়স হয়েছিল 67 ৷ 2003 সালে মুক্তি পায় তাঁর পরিচালিত ছবি 'ভালো থেকে'। অভিনয় করেছিলেন বিদ্যা বালান । শুধু প্রথম বাংলা সিনেমা নয়, এটি ছিল বিদ্যা বালানের প্রথম ছবিও। বিদ্যা ছাড়াও অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত থেকে দেবশঙ্কর । ছবিটি সেরা অডিয়োগ্রাফি ও সিনেমাটাগ্রাফির হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পায় । 2019 সালে মুক্তি পায় গৌতম হালদার পরিচালিত ছবি 'নির্বাণ' । তাতে অভিনয় করেছিলেন রাখি গুলজার । সারোদশিল্পী উস্তাদ আমজাদ আলি খানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন গৌতম । তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও বানিয়েছিলেন তিনি । নাম- স্ট্রিংস ফর ফ্রিডম।

অমল মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধিজীবি হিসেবে খ্যাতি পেলেও শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি ছাপ রেখে গেছেন । অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায়, যাঁর অবদান ভুলবে না প্রেসিডেন্সি । জানা যায়, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম ৷ সেই অমল মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর এল 26 নভেম্বর গভীর রাতে । সুস্থ থাকলেও সিঁড়ি থেকে হঠাৎ পড়ে যান তিনি । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় । বয়স হয়েছিল 88। 1991 থেকে 97 সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ৷ প্রেসিডেন্সির অধ্যক্ষ হিসেবে বিশেষ নজির তৈরি করেছিলেন অমল বাবু ৷ ছাত্র থাকার সময় এক ঐতিহাসিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে বহিষ্কার করেছিল প্রেসিডেন্সি । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, দীর্ঘ সময় পর্যন্ত খাতায়-কলমে সেই সিদ্ধান্ত থেকে গিয়েছিল । আনুষ্ঠানিকভাবে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নজির গড়েন অমল মুখোপাধ্যায় ।

বাসুদেব আচারিয়া

চলে গেলেন সিপিএমের দুঁদে নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য বাসুদেব আচারিয়া । 13 নভেম্বর 81 বছর বয়সে থেমে গেল বাসুদেব আচারিয়ার জীবন ৷ বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন ৷ বাঁকুড়ার টানা 9 বারের সাংসদ ছিলেন বাসুদেব । 2014 সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের মুনমুন সেনের কাছে হেরে যান তিনি । তার আগে 1980 থেকে 2014 সাল পর্যন্ত বাঁকুড়ার সাংসদ ছিলেন।

তুলসীদাস বলরাম

তুলসীদাস বলরাম ভারতীয় ফুটবলের এক কিংবদন্তি । প্রয়াত হন বছরের শুরুতেই । 2023 সালের 16 ফেব্রুয়ারি, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর । বার্ধক্যজনিত রোগের কারণে দীর্ধদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন । ভারতীয় ফুটবলে 'থ্রি মাস্কেটিয়ার্স' নামে পরিচিত ছিলেন পিকে, চুনী, বলরাম । 2020 সালেই পিকে ও চুনী গোস্বামী প্রয়াত হন । তেইশে না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন তুলসীদাস বলরামও । হায়দরাবাদে জন্ম, বেড়ে ওঠা, ফুটবল খেলা । হায়দরাবাদ রাইডার্স থেকে একেবারে কলকাতায় ইস্টবেঙ্গলে। ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলতেন। 1956 সাল জাতীয় দলে অভিষেক হয় পাওয়ারফুল এই ফুটবলারের । উল্লেখযোগ্য ম্যাচ জাকার্তায় এশিয়ান গেমস । সালটা 1962,ফাইনালে জাপানকে হারান পিকে, চুনী, বলরাম । 2-0 গোলে জিতে স্বর্ণপদক লাভ করে ভারত ৷

মহম্মদ হাবিব

স্বাধীনতা দিবসের দিন চলে যান ময়দানের মহম্মদ হাবিব। 74 বছর বয়সে থেমে গেল কলকাতা তথা ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তির জীবনযুদ্ধের লড়াই । তিনি কলকাতা ময়দানে বড়ে মিঁঞা নামেই খ্যাত । তাঁরও জন্ম নিজামের শহর হায়দরাবাদে। সেখানেই মৃত্যু ৷ হায়দরাবাদ থেকেই কলকতায় এসেছিলেন খেলতে। মহম্মদ হাবিব ও তাঁর ভাইয়েরা সকলেই ফুটবল ময়দানের তারকা । তবে কলকাতার ময়দান মাতিয়েছে হাবিব-সহ তাঁর তিন ভাই নইম, ফারিদ ও আকবর । 1966 সালে হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় এসে হাবিব খেলেন ইস্টবেঙ্গলের হয় । পরবর্তীতে মোহনবাগান ও মহামেডানের হয়েও খেলেছেন তিনি । 1977 সালে পেলের কসমসের বিরুদ্ধে মোহনবাগান দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন হাবিব ।1970 সালে এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জ জয়ী ভারতীয় দলেরও সদস্য ছিলেন তিনি । 1980 সালে অর্জুন পুরস্কার এবং 2015 সালে ভারত গৌরব পুরস্কার পেয়েছেন তিনি ।

Last Updated : Dec 31, 2023, 10:48 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details